ঢাকা: রাজধানীর বড় সাত কলেজের সংকট নিরসনে গঠিত কমিটির নাম বদল হলো সাত দিনের মাথায়। শিক্ষা মন্ত্রণালয় গঠিত কমিটির নাম বদল করে বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) আদেশ জারি করা হয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে আলাদাভাবে সাত কলেজের প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনার কথা সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। নতুন ব্যবস্থায় প্রশাসনিক কার্যক্রম কবে থেকে শুরু হবে এবং শিক্ষার্থীদের সমস্যার সমাধান ঠিক কবে হবে, তা নিয়ে স্পষ্ট কোনো উত্তর পাওয়া যাচ্ছে না।
‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সাতটি কলেজের একাডেমিক ও প্রশাসনিক সমস্যা নিরসনকল্পে’ গত ২৪ অক্টোবর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবকে (কলেজ অনুবিভাগ) সভাপতি করে ১৩ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়।
এতে রাখা হয়, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয়ের মঞ্জুরি কমিশনের প্রতিনিধি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলরের প্রতিনিধি, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলরের প্রতিনিধি এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিবকে (বিশ্ববিদ্যালয় অধিশাখা-২)।
এ ছাড়া ঢাকা কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, সরকারি তিতুমীর কলেজ, সরকারি বাঙলা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, কবি নজরুল সরকারি কলেজ ও সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের অধ্যক্ষকেও কমিটিতে রাখা হয়। আর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিবকে (সরকারি সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা) কমিটির সদস্য সচিবের দায়িত্ব দেওয়া হয়।
কমিটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সাতটি কলেজের একাডেমিক ও প্রশাসনিক সমস্যা চিহ্নিতকরণ; চিহ্নিত সমস্যা নিরসনকল্পে প্রয়োজনীয় সুপারিশ প্রণয়ন করবে। কমিটি আগামী ছয় সপ্তাহের মধ্যে প্রয়োজনীয় সুপারিশ প্রণয়ন করবে বলে জানায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
কমিটি গঠনের পরও সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবি নিয়ে আন্দোলন চালিয়ে আসছিলেন। সবশেষ বুধবারও (৩০ অক্টোবর) তারা অবরোধ করেন। দাবি আদায় না হলে আগামী ৩ নভেম্বর রাজধানীতে ‘ব্লকেড’ কর্মসূচি পালন করার ঘোষণা দেন।
এক সপ্তাহের মাথায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওই কমিটির নাম পরিবর্তন করে বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) আদেশ জারি করা হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় আদেশে জানায়, গত ২৪ অক্টোবর গঠিত কমিটির নাম ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সাতটি কলেজের একাডেমিক ও প্রশাসনিক সমস্যা নিরসনকল্পে’-এর পরিবর্তে ‘৭ (সাত) কলেজের শিক্ষার্থীদের দাবি পর্যালোচনা ও সুপারিশ সংক্রান্ত কমিটি’ করা হয়েছে।
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সাত কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হয়। কিন্তু অধিভুক্ত হওয়ার পর থেকেই এসব কলেজে নানাবিধ একাডেমিক ও প্রশাসনিক সমস্যা দেখা যায়।
এমন পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীরা অনতিবিলম্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত সাত কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে একটি কমিশন গঠন; ৩০ দিনের মধ্যে কমিশন অংশীজনদের সঙ্গে কথা বলে প্রতিবেদন দেওয়া এবং সাত কলেজ স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে প্রতিষ্ঠার আগ পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে নির্বিঘ্নে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে নেওয়ার দাবি জানান।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মধ্যে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রেস-সচিব শফিকুল আলম জানান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যেই একটি জায়গা ঠিক করা হবে, যেখানে সাত কলেজের প্রশাসনিক কাজকর্মগুলো করা যায়।
তিনি বলেন, তাদের বিষয়টি আলাদাভাবে দেখা হবে, আলাদা রেজিস্ট্রারসহ সুনির্দিষ্ট কর্মকর্তা–কর্মচারী থাকবেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সঙ্গে কথা বলে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এর আগে বিকেলে সাত কলেজ নিয়ে একটি স্বতন্ত্র স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা সচিবালয়ে শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ এবং যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার সঙ্গে বৈঠক করেন।
শুরু থেকেই সাত কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করার সমালোচনা চলে আসছিল। অন্তর্বর্তী সরকাররের শিক্ষা উপদেষ্টা বুধবার এক বিবৃতিতে বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের দাবি বিবেচনার জন্য সরকার ইতোমধ্যেই সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটি কমিটি গঠন করেছে, যা সাত সপ্তাহের মধ্যে দ্রুত একটি প্রতিবেদন তৈরি করবে।
তিনি বলেন, সমস্যাটির শুরু হয় কয়েক বছর আগে ঢাকার সাতটি কলেজকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতা থেকে বের করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অন্তর্ভুক্ত করার একটি অবিবেচনাপ্রসূত সিদ্ধান্তের মাধ্যমে। এর ফলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং সাত কলেজের উভয় পক্ষেরই সমস্যা তৈরি হয়েছে। ওই সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের নানা অসুবিধা ও বৈষম্যের শিকার হতে হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, সমস্যাগুলো জটিল এবং এসবের সুষ্ঠু সমাধান কী হতে পারে, তা বিবেচনার জন্য ন্যূনতম সময়ের প্রয়োজন। এরইমধ্যে একটি কলেজের শিক্ষার্থীরা নিজেদের প্রতিষ্ঠানকে এককভাবে বিশ্ববিদ্যালয় করার দাবি নিয়ে রাস্তায় আন্দোলন করেছেন। ইতোমধ্যে শিক্ষার্থী প্রতিনিধিদের সঙ্গে একাধিকবার আলোচনাও হয়েছে।
উপদেষ্টা বলেন, দেশের সমস্যাসংকুল শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষার্থীদের ন্যায্য দাবির প্রতি একজন আজীবন শিক্ষক হিসেবে অবশ্যই ব্যক্তিগতভাবে আমার সব সহানুভূতি আছে। কিন্তু মনে রাখতে হবে, রাস্তায় শিক্ষার্থীদের অবরোধ, আন্দোলন ও আলটিমেটামের মাধ্যমে একটি নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ে গঠনের তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত দেওয়ার কোনো নজির কোথাও নেই।
শিক্ষার্থীদের রাস্তায় জনদুর্ভোগ তৈরি না করে ধৈর্য ধরার ও নিজ নিজ শিক্ষাঙ্গনে ফিরে যাওয়ার অনুরোধ জানান তিনি।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্টরা জানান, সাত কলেজের সমস্যা নিয়ে সরকার আন্তরিকভাবে কাজ করছে। সাত কলেজের বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী যাতে সমস্যায় না পড়েন এবং তাদের শিক্ষাজীবনে প্রভাব না পড়ে, বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে কমিটি কাজ করবে। তবে এজন্য সময় দিতে হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১০১০ ঘণ্টা, নভেম্বর ০১, ২০২৪
এমআইএইচ/আরএইচ