বরিশাল: বাসচাপায় বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) ছাত্রী নিহতের ঘটনায় পুনরায় মহাসড়ক অবরোধ করে রেখেছেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।
শুক্রবার (১ নভেম্বর) বেলা সাড়ে তিনটায় ঢাকা-বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়ক ফের অবরোধ করেন তারা।
শিক্ষার্থীদের দাবি, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বাসমালিক ও প্রশাসনকে নিয়ে আলোচনায় বসতে হবে। কিন্তু প্রশাসন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আলোচনায় বসতে রাজি নন।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী আওলাদ হোসেন বলেন, আমাদেরকে পুলিশ প্রশাসন থেকে বলা হয়েছে ডিসি অফিসে আলোচনায় যাওয়ার জন্য। আমরা ডিসি অফিসে আলোচনায় কেন যাব? আমাদের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ে আলোচনায় বসতে হবে। আমাদের দাবিগুলো আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে বসে আলোচনা করব, কারণ, ঘটনা বিশ্ববিদ্যালয় এরিয়ায় ঘটেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনায় না বসতে চাইলে আমরা মহাসড়ক ছাড়ছি না।
এদিকে মহাসড়কটিতে অবস্থান নেওয়া শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শুচিতা শরমিন কথা বলেছেন।
এ সময় তিনি আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদেরকে বলেন, আমাদের উদ্দেশ্য বিষয়টির সমাধান করা। প্রয়োজন হলে আমরা প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে যোগাযোগ করে হলেও এটার সমাধান করব। কিন্তু বিষয়টি হচ্ছে নিরাপত্তাজনিত কারণে ক্যাম্পাসে তাদের আসা নিয়ে একটি কথা রয়েছে। সেজন্য এখানে আলোচনায় বসতে চাচ্ছেন না তারা। তবে আমি যাব সেই জায়গাতে তোমরা গেলে চলো।
এসময় শিক্ষার্থীরা বলেন, আমরা ওখানে যাব না, এখানে নিরাপত্তাহীনতার কোনো প্রশ্নই ওঠে না। আর আমরা কি সন্ত্রাসী! তাহলে তারা এখানে আসতে চায় না কেন? আমরা তাদের নিরাপত্তা দেব।
এ সময় উপাচার্য বলেন, তোমরা (শিক্ষার্থী) যদি সমাধান চাও তাহলে চলো আমরা আলোচনা করি।
তবে শিক্ষার্থীরা বলেন, আমরা সমাধান চাই তবে এখানে তাদের আসতে হবে। আর আপনার প্রতি আমাদের ভরসা ও আস্থা আছে। তাই আপনি তাদের এখানে এসে আমাদের সঙ্গে কথা বলতে বলেন।
আলোচনার স্থান যেখানে হোক আমাদের ন্যায্য অধিকার আদায় করে নেওয়া হবে বলে জানান উপাচার্য। কিন্তু শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে আলোচনায় বসতে রাজি নন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর সাকিবুল ইসলাম বলেন, ইতোমধ্যে বাসমালিক ও তার লোকজন বরিশালে এসেছেন। তারা প্রশাসনের কাছে আছেন। শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে আলোচনায় বসতে চায় কিন্তু স্থানীয় প্রশাসন জেলা প্রশাসকের অফিসে আলোচনায় বসতে চাচ্ছে নিরাপত্তার কারণে। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য কথা বলছেন। আশা করি দ্রুত একটি সমাধানে আসবে বিষয়টি।
এদিকে মহাসড়ক অবরোধকারী শিক্ষার্থীরা বলেন, আমাদের দশটি দাবির একটিও পূরণ হয়নি। এখন পর্যন্ত খুনি বাসচালককে গ্রেপ্তার করতে পারেননি প্রশাসন। বাসমালিককেও হাজির করতে পারেননি তারা। আমাদের সব দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা মহাসড়ক ছাড়ব না।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক রাহাত হোসাইন ফয়সাল বলেন, শিক্ষার্থীদের দেওয়া দশ দফা দাবি নিয়ে আমরা কাজ শুরু করেছি। ইতোমধ্যে আমরা অধিকাংশ দাবি আদায় করেছি কিছু দাবি কাজ চলমান রয়েছে। শিক্ষার্থীদের আমরা আশ্বস্ত করেছি সবগুলো দাবি আমরা পূরণ করব অতিদ্রুত।
অবরোধকারী শিক্ষার্থী রুবেল মোল্ল্যা বলেন, আমাদের বোন মারা গেছে গত বুধবার কিন্তু প্রশাসন এখন পর্যন্ত ঘাতক বাসচালককে গ্রেপ্তার করতে পারেননি। বাসমালিককেও আনতে পারেননি, এমনকি ক্ষতিপূরণ দিতে পরেননি। এসব দাবি পূরণ না হওয়ায় আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শুচিতা শরমিন জানিয়েছেন, শিক্ষার্থীদের প্রতিটা দাবি আমারও দাবি। বুধবার রাত থেকেই দাবিগুলো পূরণে কাজ করছি ইতোমধ্যে কিছু কাজ আমরা করেছি৷ বিআরটিএ ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে ১০ লাখ টাকা দেওয়ার ব্যবস্থা হয়েছে। সড়কে স্পিডব্রেকার নির্মাণের কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। বাসচালক ও হেল্পারকে ধরার জন্য পুলিশ কাজ শুরু করেছে। আশা করছি শিগগিরই তাদেরকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হবে।
তিনি আরও বলেন, আমি চাই না আর কোনো শিক্ষার্থীর প্রাণ সড়কে ঝরুক। তার জন্য যা করার প্রয়োজন আমি করব।
এদিকে সন্ধ্যার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা দূরপাল্লা রুটের ৭টি যাত্রীবাহী বাস নিজেদের ক্যাম্পাসে আটকে রেখেছে বলে জানিয়েছেন বরিশাল মেট্রোপলিটনের বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রফিকুল ইসলাম।
উল্লেখ্য, গত বুধবার রাত সাড়ে ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন ঢাকা-কুয়াকাটা মহাসড়কে ভোলা রোডে পুলিশবক্সের পাশে নারায়ণগঞ্জ ট্রাভেলস নামের একটি বেপরোয়া গতির যাত্রীবাহী বাস ববিছাত্রী মাইশা ফৌজিয়া মিমকে চাপা দিয়ে পালিয়ে যায়। তবে বাসটিকে ধাওয়া দিয়ে শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত সেতুর টোল প্লাজায় আটক করে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসের সামনে নিয়ে আসে। তবে চালক ও হেলপার পালিয়ে যায়।
এদিকে ঘটনাস্থল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী মাইশাকে বরিশাল শের ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত বলে ঘোষণা করেন। সহপাঠীর মৃত্যু খবর ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পড়লে শিক্ষার্থীরা বিক্ষুব্ধ হয়ে বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়ক অবরোধ এবং নারায়ণগঞ্জ ট্রাভেলস নামের বাসটিকে পুড়িয়ে দেয়। পরে মধ্যরাতে ঘাতক চালক-হেলপারের গ্রেপ্তারের দাবি তুলে যাত্রীদের কথা চিন্তা করে সড়ক অবরোধ কর্মসূচি স্থগিত করে শিক্ষার্থীরা।
তবে প্রশাসনিক কোনো তৎপরতা দৃশ্যমান না হওয়ায় বাসচাপায় বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) শিক্ষার্থী মাইশা ফৌজিয়া মিম নিহতের ঘটনায় ক্ষতিপূরণ ও বিচারের দাবিতে বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) সকাল ১০ টা থেকে বিকেল-৫ টা পর্যন্ত টানা ঢাকা-কুয়াকাটা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে শিক্ষার্থীরা৷ যা চলে বিকেল ৫টা পর্যন্ত। এরপর আবার আল্টিমেটাম দিয়ে মহাসড়ক থেকে সড়ে যায় শিক্ষার্থীরা।
তবে রাত ১১টা পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের দাবির বিষয়ে কোনো সুরাহা না হওয়া কিছু সময় মহাসড়ক অবরোধ করা হয়, পরে কর্তৃপক্ষের আশ্বাসে মধ্যরাত থেকে শুক্রবার (০১ নভেম্বর) বিকেল সাড়ে ৩ টা পর্যন্ত মহাসড়কটিতে যান চলাচল স্বাভাবিক ছিল।
এরপরে শিক্ষার্থীরা আবার মহাসড়কটি অবরোধ করে। এর ফলে বরিশাল-ঢাকা-ঝালকাঠি-পিরোজপুর-বাগেরহাট-খুলনার সঙ্গে পটুয়াখালী-বরগুনা ও ভোলা জেলার সড়ক পথে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে।
এদিকে বেলা ১২টার সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনের মহাসড়কেই মাইশার জানাজার নামাজ আদায় করেন শিক্ষার্থীরা। জানাজায় নিহত ছাত্রীর পরিবারের লোকজন অংশগ্রহণ করেন।
নিহত ছাত্রীর বাবা-মা সবার কাছে তার সন্তানের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং হত্যার বিচার দাবি করেন। জানাজা শেষে পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। মাইশা ফৌজিয়া মিম তার পরিবারের একমাত্র সন্তান।
অপরদিকে শুক্রবার বাদ জুমা মাইশার রুহের মাগফিরাত কামনা করে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে দোয়া মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৮১৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ০১, ২০২৪
এমএস/এসএএইচ