ঢাকা, সোমবার, ২৫ কার্তিক ১৪৩১, ১১ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

সরকারি সিদ্ধান্তহীনতায় সঙ্কটে মেরিন শিক্ষা

ঊর্মি মাহবুব, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৫৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৮, ২০১৫
সরকারি সিদ্ধান্তহীনতায় সঙ্কটে মেরিন শিক্ষা

ঢাকা: সরকারি সিদ্ধান্তহীনতা এবং বাংলাদেশ মেরিন একাডেমি ও বাংলাদেশ সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তরের দ্বন্দ্বে মুখ থুবড়ে পড়ছে দেশের সম্ভাবনাময় মেরিন শিক্ষা খাত।

বিগত বছরগুলোতে বাংলাদেশ মেরিন একাডেমিতে ভর্তি হতে কঠিন যুদ্ধে অবতীর্ণ হতো শিক্ষার্থীরা।

মেরিন একাডেমিতে ভর্তির সুযোগ পাওয়া ছিলো অনেক শিক্ষার্থীর জন্য স্বপ্নের মতো।

কিন্তু চলতি বছরের ৩০০ শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য আসন থাকলেও বাংলাদেশ মেরিন একাডেমি ছাত্র পেয়েছে মোটে ২৭ জন। বাকি ২৭৩ আসনই ছাত্রশূন্য রয়েছে বলে জানা যায় বাংলাদেশ মেরিন একাডেমি থেকে।  

এছাড়া সরকারি বেসরকারি মিলিয়ে মোট ৯টি মেরিন একাডেমির ছাত্রসংখ্যা ৫০ এর নীচে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।

বাংলাদেশ মেরিন একাডেমির এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, সাধারণত বাংলাদেশ মেরিন একাডেমির আসন সংখ্যা বাড়ানো হবে কি না সে সিদ্ধান্ত বাংলাদেশ সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তরের নেয়ার কথা। কিন্তু ২০১১ সালে ১৫০টি থেকে হঠাৎ আসন সংখ্যা বাড়িয়ে ৩০০ করা হয়।

এক্ষেত্রে বাংলাদেশ মেরিন একাডেমি প্রথমে মৌখিকভাবে বাংলাদেশ সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তরের কাছে অনুমতি চাইলেও তারা তা পায়নি। সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তর থেকে মৌখিকভাবে জানানো হয় যে, বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজার ও দেশীয় অবস্থা বিবেচনা করে সিট সংখ্যা বাড়ানো সম্ভব না।

তারপরও ২০১১ সালে এই খাতে সংশ্লিষ্টদের সাথে আলোচনা না করে সরকারের ঊর্ধ্বতনদের থেকে অনুমতি নিয়ে বাংলাদেশ মেরিন একাডেমি আসন সংখ্যা বাড়িয়ে ৩০০তে উন্নীত করে বলে জানান বাংলাদেশ সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তরের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শীর্ষ কর্মকর্তা।

তিনি বাংলানিউজকে বলেন, আইন অনুযায়ী একমাত্র সংস্থাপন ও অবকাঠামোগত বিষয় ছাড়া আর অন্য কোনো কিছু ‘বাংলাদেশ মেরিন একাডেমি ‘বাংলাদেশ সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তরের’ অনুমতি ছাড়া বাস্তবায়ন করতে পারবে না। কিন্তু বাংলাদেশ সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তরের অনুমতি ছাড়াই বাংলাদেশ মেরিন একাডেমি আসন সংখ্যা বাড়িয়েছে। ’

এদিকে আসন সংখ্যা বাড়ানো নিয়ে যখন মেরিন একাডেমি ও সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তরের মধ্যে রশি টানাটানি চলছে তখন চাকরির দাবিতে আন্দোলনে নামেন বাংলাদেশ মেরিন একাডেমি থেকে পাশ করে বেকার থাকা ক্যাডেটরা। ফলে প্রতিযোগিতা তো দূরের কথা ছাত্রই পাচ্ছেন না বাংলাদেশ মেরিন একাডেমি।

এছাড়া আসন সংখ্যা বাড়ানোর মত অদূরদর্শী সিদ্ধান্তের জন্য বাংলাদেশ মেরিন একাডেমিকে দুষছেন বেসরকারি মেরিন একাডেমিগুলোও। ‘তাদের অদূরদর্শী সিদ্ধান্তের ফল ভুগতে হচ্ছে বেসরকারি মেরিন একাডেমিগুলোকে’,মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ক্যাপ্টেন জিল্লুর রহমান।

তিনি বাংলানিউজকে বলেন, বাংলাদেশের মেরিন খাত সম্ভাবনাময় একটি ক্ষেত্র। এই খাত থেকে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের সম্ভাবনা থাকলেও সঠিক সিদ্ধান্তের অভাবে মুখ থুবড়ে পড়ছে এই খাত। বাংলাদেশ মেরিন একাডেমি কারো সাথে কোনো আলোচনা ছাড়াই সিট বাড়িয়ে দিলো। তাতে আমাদের আপত্তি ছিলো না। কিন্তু তারা তাদের ক্যাডেটদের কর্মসংস্থান করতে পারলো না। বেসরকারি মেরিন একাডেমিগুলো তাদের ক্যাডেটদের চাকরির ব্যবস্থা করে থাকে নিজস্বভাবে। ২০১১ সালে বাংলাদেশ মেরিন একাডেমি একদিকে যেমন সিট বাড়িয়েছে ঠিক তেমনি বেড়েছে তাদের বেকার ক্যাডেটদের সংখ্যা। এরই মধ্যে বাংলাদেশ মেরিন একাডেমির বেকার ক্যাডেটরা আন্দোলনে নামে। তারপর থেকেই মেরিন শিক্ষা খাত নিয়ে দেশে-বিদেশে নেতিবাচক ইমেজ তৈরি হয়। যার ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে আমাদের।

তবে এসব বিষয়ে মুখ খুলতে নারাজ বাংলাদেশ মেরিন একাডেমির কর্মকর্তারা। বাংলাদেশ মেরিন একাডেমির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কমান্ডার মো. সাজিদ হকের সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা হলেও তা সম্ভব হয়নি।

এদিকে মেরিন একাডেমিগুলো যখন ছাত্র সংকটে ভুগছে তখন দেশে আরো চারটি মেরিন একাডেমি তৈরির কাজ চলছে বলে জানা গেছে বাংলাদেশ সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তর থেকে।

বাংলাদেশ সময়: ১২৫৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৮, ২০১৫
ইউএম/আরআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।