ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৫ আশ্বিন ১৪৩১, ০১ অক্টোবর ২০২৪, ২৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

দুই যুগ ধরে ইবির শিক্ষাবৃত্তি সীমাবদ্ধ ১২০ টাকায়!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৪২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৯, ২০১৮
দুই যুগ ধরে ইবির শিক্ষাবৃত্তি সীমাবদ্ধ ১২০ টাকায়!

ইবি: ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) শিক্ষাবৃত্তি চালুর দুই যুগ পার হলেও বাড়েনি এর পরিমাণ। বিগত বছরগুলোতে বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন শিক্ষাবর্ষে ভর্তির সময় বিভিন্ন খাতে ভর্তি ফি বাড়ানো হলেও বাড়ানো হয়নি শিক্ষাবৃত্তি। দুই যুগ ধরে একজন শিক্ষার্থী মেধার মূল্যায়ন পায় মাত্র ১২০ টাকা। এই যৎসামান্য শিক্ষাবৃত্তি বর্তমান সময়ে একজন শিক্ষার্থীর ন্যূনতম চাহিদা মেটানো সম্ভব নয় বলে মনে করেন শিক্ষার্থীরা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বৃত্তি শাখা সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৬ সালে তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. ইনাম উল হক বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের মেধাবী শিক্ষার্থীদের সম্মানী হিসেবে বৃত্তি প্রদানের জন্য একটি নীতিমালা তৈরি করেন।  

পাশাপাশি ওই বছরের সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক বাৎসরিক ৬ লাখ টাকা বৃত্তির জন্য বরাদ্দ দেয় প্রশাসন।

পরবর্তীতে ওই নীতিমালা ও সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী একজন মেধাবী শিক্ষার্থীকে সম্মানী হিসেবে মাসে ১২০ টাকা করে শিক্ষাবৃত্তি দেন  বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।  

পরবর্তীতে এ নীতিমালার কোনো সংশোধন না হওয়ায় এর কোনো পরিবর্তন হয়নি। বছরের পর বছর অতিক্রম হলেও বাড়েনি বৃত্তির টাকা। অথচ দুই যুগে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন খাতে বাড়ানো হয়েছে আকাশচুম্বী ফি।  

এদিকে গতবছরে এফসি সভায় বৃত্তি শাখার জন্য আরো দুই লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়ার সুপারিশ আসে। পরে সুপারিশের ভিত্তিতে মোট ৮ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয় প্রশাসন। কিন্তু ৮ লাখ টাকা বরাদ্দ দিলেও শিক্ষার্থীদের জন্য এখনো বাড়ানো হয়নি বৃত্তির পরিমাণ।  

বৃত্তি শাখা থেকে প্রশাসনকে একাধিকবার বরাদ্দকৃত টাকা থেকে শিক্ষার্থীদের জন্য বৃত্তির টাকার পরিমাণ বাড়ানোর তাগিদ দিলেও  প্রশাসন এতে কর্ণপাত করেনি বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। টাকার পরিমাণ না বাড়িয়ে প্রতি বর্ষে ৭ জনের পরিবর্তে ৯ জন শিক্ষার্থীকে বৃত্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে মোট বিভাগ ৩৩টি। এর মধ্যে ২৫টি (নতুন ৮টি বাদ) বিভাগে মেধা ও সাধারণ দুই ভাগে শিক্ষাবৃত্তি চালু আছে। প্রতিটি বিভাগের প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় শিক্ষাবর্ষের মেধাতালিকায় থাকা প্রথম সাতজন শিক্ষার্থীকে বৃত্তি দেয়  বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তিন শিক্ষাবর্ষ থেকে প্রথম তিনজন করে মোট ২২৫ জন শিক্ষার্থীকে মেধা তালিকায়  এবং পরের চারজন করে মোট ৩০০ জন শিক্ষার্থীকে সাধারণ বৃত্তি দেয়  বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

মেধা তালিকায় থাকা একজন শিক্ষার্থীকে মাসে ১২০ টাকা করে বাৎসরিক ১৪৪০ টাকা দেয় প্রশাসন। অপরদিকে সাধারণ তালিকায় থাকা একজন শিক্ষার্থীকে মাসে ১০০ টাকা করে বাৎসরিক ১২০০ টাকা দেওয়া হয়।  

এ বিষয়ে ইংরেজি বিভাগের ৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থী আদনান শাকুর বাংলানিউজকে বলেন, ‘বর্তমান সময়ে মাসে ১২০ টাকা দিয়ে একজন শিক্ষার্থী কোনোভাবেই তার পড়াশোনায় সাপোর্ট দিতে পারে না। আর্থিক ভাবে অসচ্ছল একজন শিক্ষার্থীর এক বছরের বৃত্তির টাকা জমিয়ে এক সেমিস্টারের বইও কেনা সম্ভব না।  সুতরাং এই বৃত্তিটা শিক্ষার্থীদের লোভ দেখানো অথবা প্রহসন ছাড়া কিছু নয়। ’

এদিকে শিক্ষার্থীদের বৃত্তির টাকা পেতে হলে একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে হয়। ১২০০ টাকা পেতে ওই শিক্ষার্থীর খরচ হয় ৫০০ টাকা। এ কারণে অনেক শিক্ষার্থী তার মেধাবৃত্তি উত্তোলন করেন না বলেও জানা গেছে।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. রাশিদ আসকারী বাংলানিউজকে বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি নীতিগতভাবে সমর্থন করি। বৃত্তির টাকা বাড়ানোর প্রক্রিয়াটা একটু সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। আমি সংশ্লিষ্ট অফিসকে যাচাই বাছাই করার নির্দেশ দিয়েছি। আশাকরি খুব তাড়াতাড়ি এ বিষয়ে চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। ’

বাংলাদেশ সময়: ০৮৩৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৯, ২০১৮
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।