ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর নাম আব্দুর রহমান। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী।
অভিযুক্তরা হলেন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক আব্দুল্লাহিল কাফি, প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক আসাদুল্লাহিল গালিব ও ছাত্রলীগ কর্মী শুভ্র দেব। তাদের দাবি, আব্দুর রহমান গাঁজা সেবন করে পালাতে গিয়ে সিঁড়ি থেকে পড়ে আঘাত পেয়েছেন এবং তাকে হালকা চর-থাপ্পর দেওয়া হয়েছে।
ইন্টারনেট সংযোগ নেওয়াকে কেন্দ্র করে এক শিক্ষার্থীর কক্ষ ভাঙচুরের রেশ না কাটতেই ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে আরেকটি অভিযোগ উঠলো।
হল সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার (২১ সেপ্টেম্বর) রাত সাড়ে ১১টার দিকে মাদার বখ্শ হলে বিভাগের এক বড় ভাইয়ের কাছে পরীক্ষার শিট আনতে যান আব্দুর রহমান। শিট নিয়ে আসার সময় হলের গেটে পৌঁছুলে কাফি, গালিব, শুভ্রসহ কয়েকজন আব্দুর রহমান কোথায় গিয়েছিলেন তা জানতে চান। আব্দুর রহমান শিট নিতে এসেছিলেন বলার পর তাকে চলে যেতে বলে পেছন থেকে কোমড়ে রড দিয়ে আঘাত করা হয়। এর প্রতিবাদ করায় তারা আব্দুর রহমানকে হলের অতিথি কক্ষে নিয়ে ব্যাপক মারধর করেন। একপর্যায়ে সেখান থেকে হলের ওয়াশরুমে নিয়ে রড ও স্ট্যাম্প দিয়ে পেটানো হয় তাকে। ওই সময় আব্দুর রহমানকে গাঁজা সেবন করেছি মর্মে স্বীকারোক্তি দিতে বলেন মারধরকারীরা।
ভুক্তভোগী আব্দুর রহমান বলেন, যতোবারই আমি মাদক সেবন করিনি বলেছি, ততোবারই আমার ওপর চড়াও হয়েছেন গালিব, কাফি ও শুভ্র। আমাকে স্ট্যাম্প ও রড দিয়ে এলোপাতাড়ি আঘাত করে আমার কাছে থাকা পাঁচ হাজার টাকা কেড়ে নেন তারা। গাঁজা সেবনের বিষয়টি স্বীকার না করলে আমাকে প্রাণনাশের হুমকিও দেন। ভয়ে আমি বিষয়টি স্বীকার করলে তারা সেটি ভিডিও করেন। পরে তারা আমাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে রেখে চলে যান।
আব্দুর রহমানের সহপাঠীরা জানান, অভিযুক্ত তিন ছাত্রলীগ নেতা ওই দিন রাত ৩টার দিকে তাকে আহতাবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারে নিয়ে যান। সহপাঠীরা আসার পর ছাত্রলীগ নেতারা চলে যান।
আব্দুর রহমানকে মারধর বা কোনো ধরনের ভিডিও করা হয়নি বলে দাবি করেছেন গালিব, কাফি ও শুভ্র। তারা বলেন, ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে রাতে হলে মাদকবিরোধী অভিযান চলছিল। হলের ছাদে মাদক সেবন করতে দেখে দলের জুনিয়র কয়েকজন কর্মী তাদের ধাওয়া করেন। ওই সময় পালাতে গিয়ে আব্দুর রহমান সিঁড়ি থেকে পড়ে চোখে আঘাত পান। পরে আমরা তাকে ধরে চড়-থাপ্পড় দিয়ে হল কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দিয়েছি।
হলের সাধারণ শিক্ষার্থীরা বলছেন, ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের অঙ্গসংগঠন ছাত্রলীগের কিছু নেতার বেপরোয়া আচরণে প্রায়ই ক্যাম্পাসে এ ধরনের ঘটনা ঘটছে। কোনো শিক্ষার্থী যদি মাদক সেবন করেন তাহলে তার বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নেবে। কাউকে এভাবে অমানুষিক নির্যাতন করার অধিকার কোনো নেতাকর্মীর নেই।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু বলেন, মারধরের কোনো ঘটনা ঘটেনি। বহিরাগতসহ কয়েকজন হলের ছাদে গাঁজা সেবন করছিলেন। ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা তাদের আটক করে হল কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দেন।
প্রাধ্যক্ষ আব্দুল আলীম বলেন, খবর পেয়ে হাসপাতালে ওই আহত শিক্ষার্থীকে দেখতে গিয়েছিলাম। খোঁজ-খবর নিচ্ছি। যারা দোষী তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেবো।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৫৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৩, ২০১৮
এসআই