শিক্ষার্থী দু’জন হলেন- খুবির জীব বিজ্ঞান স্কুলের এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স ডিসিপ্লিনের মাস্টার্স ১৭ ব্যাচের এলিজা সুলতানা ও আফরোজা সুলতানা সোনিয়া। তাদের স্টুডেন্ট আইডি যথাক্রমে এমএস ১৭১০২১ ও এমএস ১৭১০০৯।
বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতি ও আদর্শের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে এ ধরনের একাডেমিক জালিয়াতির বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর বরাবর ওই ডিসিপ্লিনের বিভিন্ন ব্যাচের শিক্ষার্থীরা আবেদন করেছেন।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশের এনভাইরনমেন্টাল সায়েন্স ডিসিপ্লিনের মাস্টার্স প্রোগ্রাম সম্পর্কিত ৩ নম্বর ধারার উপধারা ৩.১ এবং ৩.২ (বি) তে বর্ণিত আছে, মাস্টার্স প্রোগ্রাম অবশ্যই তিন টার্মে অন্তর্ভুক্ত হবে, যার প্রতি টার্মের মেয়াদ হবে অবশ্যই ৬ মাস।
অনুসন্ধানে জানা যায়, এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স ডিসিপ্লিনের মাস্টার্স ১৭ ব্যাচের অন্য কোনো শিক্ষার্থীকে ফলাফল না দিয়ে অতি গোপানে ১৭.০৯.২০১৮ তারিখে এলিজা সুলতানা এবং আফরোজা সুলতানা সোনিয়ার ফল প্রকাশিত হয়। তার একদিন পর ১৮.০৯.২০১৮ তারিখে ডিসিপ্লিনের শিক্ষক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয় যা সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যমূলক।
অভিযোগ রয়েছে, শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় অবৈধভাবে অংশগ্রহণে তাদের সুযোগ করে দেওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচলিত নিয়ম ভঙ্গ করে কোর্সের মেয়াদ (সর্বনিম্ন ১৮ মাস) শেষ হওয়ার আগেই তড়িঘড়ি করে থিসিসের ডিফেন্স সম্পন্ন করে শিক্ষক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। এর ঠিক আগের দিন দু’জন ছাত্রীর ফল প্রকাশ করা হয়। তারা দু’জনেই ডিসিপ্লিন প্রধান প্রফেসর ড. সালমা বেগমের থিসিস স্টুডেন্ট। যার কারণে অভিযোগের তীর তার দিকেই উঠেছে।
এলিজা সুলতানা অনার্সে সিজিপিএ ৩.৫৫ পেয়ে ৬ষ্ঠ স্থান লাভ করেন এবং আফরোজা সুলতানা সোনিয়া সিজিপিএ ৩.৫২ পেয়ে ৭ম স্থান অধিকার করেন। এবং স্নাকোত্তর পর্বে তাদের ফলাফল যথাক্রমে সিজিপিএ ৩.৭৬ ও ৩.৫৮।
এ অবস্থায়, ক্ষমতার অপব্যবহার করে এমএস (ইএস ডিসিপ্লিনের) ডিগ্রির অর্ডিন্যান্স বর্হিভূতভাবে দুই ছাত্রীর সর্বনিম্ন সময় ১৮ মাস সম্পূর্ণ করার আগেই থিসিস জমা দিয়ে রেজাল্ট প্রকাশ করা বড় ধরনের একাডেমিক জালিয়াতি। এতে এ ধরনের জালিয়াতিতে যে কেউ উৎসাহিত হবেন এবং খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। পাশাপাশি উক্ত ডিসিপ্লিনের অন্য ছাত্র-ছাত্রীরা তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হবেন বলে মনে করছেন শিক্ষার্থীরা।
ডিসিপ্লিনের একাধিক শিক্ষার্থী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমরা সব সময় আমাদের বিশ্বদ্যালয়কে নিয়ে গর্ব করি। আমাদের চিন্তা করতেই কষ্ট হচ্ছে যে আমাদের ডিসিপ্লিনে এ রকম একটা একাডেমিক জালিয়াতির ঘটনা ঘটেছে। এতে প্রকৃত মেধাবীরা তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হবে।
এ বিষয়ে ডিসিপ্লিন প্রধান প্রফেসর ড. সালমা বেগম বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের মাস্টার্সের যে অধ্যাদেশটি আছে সেটা আপনি ভালো করে পড়েন। আমাদের ইউনিভার্সিটিতে যারা একাডেমিক সেকশনের রেজাল্ট করে তাদের সঙ্গে কথা বলেন। আমি এ ব্যাপারে আপনার সঙ্গে কথা বলবো না। কারণ মাস্টার্সের যে অধ্যাদেশ আছে, যে নিয়ম-কানুন আছে, সে নিয়ম-কানুনের মধ্যে এটা না গেলে কন্ট্রোলার সেকশন থেকেও এ রেজাল্ট করতো না। এটা মাস্টার্সের নিয়ম অনুযায়ী হয়েছে।
মাত্র দু’জনকে মাস্টার্সের রেজাল্ট দেওয়া হলো কেন- এ প্রশ্নের জবাবে বলেন, দু’জন চেয়েছে। দু’জন বলেছে তাদের কমপ্লিট হয়ে গেছে। অন্যরা যদি আসতো আমি অন্যদেরটাও দেখতাম। আমি তো সবার কাছে চাইনি। তারা নিজেরা এসে বলেছে তাদেরটা কমপ্লিট হয়ে গেছে। আমি তাদের বলেছি এ ব্যাপারে কিছু জানি না। ইউনিভার্সিটিতে যারা সেকশন নিয়ে ড্রিল করে তার তাদেরকেও বলেছে । তারা তাদের অ্যালাও করেছে। রেজাল্ট পাবলিশ করেছে। এখানে আমার নিজস্ব কিছু করণীয় নেই।
যদিও বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশের কোথাও সময় শেষ হওয়ার আগে ফলাফল বা সার্টিফিকেট দেওয়ার বিধান নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে বিগত দিনেও এ ধরনের কোনো ঘটনা নেই।
খুবির ভিসি প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ফায়েকুজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, বিষয়টি আমার নলেজে আছে। স্কুল সংশ্লিষ্ট ডিনের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে নির্দেশ দিয়েছি।
তিনি বলেন, কোর্স শেষের আগেই সার্টিফিকেট দেওয়ার অভিযোগ করে ওই ডিসিপ্লিনের বিভিন্ন ব্যাচের শিক্ষার্থীরা আমার কাছে একটি আবেদনও করেছে।
বাংলাদেশ সময়: ১০২১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৮, ২০১৮
এমআরএম/এএ