‘ছাত্র রাজনীতির নেতৃত্ব থাকবে ছাত্রদের হাতে। লেজুড়বৃত্তি বা পরনির্ভরতার কোন জায়গা থাকবে না।
শনিবার (২৯ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দশম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে সভাপতির ভাষণে রাষ্ট্রপতি এ মন্তব্য করেন।
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় মূলত মুক্তচিন্তা বিকাশের জায়গা। জ্ঞানচর্চা ও গবেষণার মধ্য দিয়ে এখানে নতুন নতুন জ্ঞান ও প্রযুক্তির জন্ম হয়। এসব জ্ঞান ও প্রযুক্তি ক্ৰমে সমগ্র বিশ্বের সম্পদে পরিণত হয়। এর ফলে পৃথিবী সামনের দিকে এগিয়ে যেতে থাকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের এই মহান ব্রতের বিষয়টি আমরা শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করি। কারিকুলামভিত্তিক শিক্ষার পাশাপাশি মুক্তচিন্তা, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ইস্যুতে আলোচনা, জাতিগঠনমূলক কর্মকাণ্ড, সমকালীন ভাবনা, সাংস্কৃতিক চর্চা, খেলাধুলা ইত্যাদি সৃজনশীল কর্মকাণ্ড শিক্ষার্থীদের কেবল দক্ষ ও পরিপূর্ণ করে না; কূপমণ্ডুকতার বেড়াজাল থেকে মুক্ত করে তাদের বুদ্ধিবৃত্তিক চেতনাকেও পরিপুষ্ট করে। এর প্রভাব ব্যক্তি জীবনে তো বটেই, সামষ্টিক জীবনকেও গভীরভাবে প্রভাবিত করে।
অনুষ্ঠানে উগ্রবাদ নিয়ে কথা বলেন রাষ্ট্রপতি। তিনি বলেন, আজকাল বিভিন্ন উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অসহিষ্ণুতা, উগ্রবাদ, জঙ্গিবাদ, মৌলবাদের মতো নেতিবাচক জাতি গভীর উদ্বেগের সঙ্গে প্রত্যক্ষ করছি। আমি মনে করি, এর উদ্ভব ও বিকাশ হয়েছে, মুক্তচিন্তা ও সংস্কৃতি চর্চার অভাবে।
প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে টিকে থাকার কথা উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, সবার সঙ্গে এগিয়ে চলার বিষয়টি মাথায় রেখে আমাদের শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। পাশাপাশি উচ্চশিক্ষার মান নিয়ে কেউ যাতে প্রশ্ন তুলতে না পারে তাও নিশ্চিত করতে হবে। বাস্তবতার প্রয়োজনে দেশে আজ পাবলিক প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় মিলে প্রায় দেড় শতাধিক বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে উঠেছে। জনসংখ্যার অনুপাতে এ সংখ্যা হয়তো অধিক হবে না। কিন্তু উচ্চশিক্ষা যাতে সার্টিফিকেট সর্বস্ব না হয় কিংবা শিক্ষা যাতে বাণিজ্যিক পণ্যে পরিণত না হয় তা দেশ ও জাতির স্বার্থে সম্মিলিতভাবে নিশ্চিত করতে হবে।
এ সময় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকার কথা উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেন, আমাদের মুক্তিসংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের রয়েছে গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা। কিন্তু ১৯৭৫ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর স্বাধীনতাবিরোধী চক্র শিক্ষাঙ্গনে বিশেষ করে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে মৌলবাদ ও উগ্ৰবাদকে উসকে দিয়ে আমাদের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ঐতিহ্যকে ক্ষুণ্ন করার অপচেষ্টা চালায়। মুক্তিসংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ আমাদের ইতিহাসের গৌরবময় অধ্যায়, আর সর্বশ্রেষ্ঠ অর্জন। তাই শিক্ষাৰ্থীসহ দেশের প্রতিটি নাগরিক যাতে স্বাধীনতা বাঙালির মুক্তিসংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে সঠিক ইতিহাস জানতে পারে এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় নিজেদের সমৃদ্ধ করতে পারে সে ব্যাপারেও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে সর্বাত্মক প্রয়াস চালানোর পরামর্শ দেন রাষ্ট্রপতি।
অনুষ্ঠানে আগত বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েটের উদ্দেশ্য করে রাষ্ট্রপতি বলেন, তোমাদের আজকের এই অবস্থানে পৌঁছানোর পেছনে রয়েছে তোমাদের পিতা-মাতা, শিক্ষকমণ্ডলীসহ সমাজ, দেশ ও জনগণের বিপুল অবদান। তোমরা তাদের কাছে ঋণী। তোমরা সমাজ এবং জনগণের প্রতি দায়বদ্ধ থেকে তোমাদের মেধাপ্রজ্ঞা ও কর্ম দিয়ে জাতির আশা আকাঙ্ক্ষা পূরণে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) দশম সমাবর্তন উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর মো. আবদুল হামিদ শনিবার বিকেল সাড়ে ৩টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টেডিয়াম মাঠে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন। এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের জন্য দেশরত্ন শেখ হাসিনা হল ও ছাত্রদের জন্য শহীদ এ এইচএম কামারুজ্জামান হল নামে দুইটি দশতলা বিশিষ্ট আবাসিক হলের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
সমাবর্তন অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন- বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর (ভিসি) প্রফেসর এম আব্দুস সোবহান। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন কোষাধ্যক্ষ প্রফেসর মোস্তাফিজুর রহমান আল-আরিফ। এরপর সমাবর্তন বক্তা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি প্রফেসর ইমেরিটাস আলমগীর মোহাম্মদ সিরাজুদ্দীন বক্তব্য রাখেন। সমাবর্তন অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ।
অনুষ্ঠানে উপমহাদেশের বিশিষ্ট কথা সাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক ও সেলিনা হোসেনকে সম্মানসূচক ডক্টর অব লিটারেচার (ডি-লিট) ডিগ্রি প্রদান করেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। সমাবর্তন অনুষ্ঠান শেষে বিকেল ৫টায় রাবি স্টেডিয়ামে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শুরু হয়। সেখানে গান পরিবেশন করছেন দেশবরেণ্য কণ্ঠশিল্পী সাবিনা ইয়াসমিনসহ অন্যান্য শিল্পীরা।
বাংলাদেশ সময়: ১৭২০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৯, ২০১৮
এসএস/জেডএস