ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৬ আশ্বিন ১৪৩১, ০১ অক্টোবর ২০২৪, ২৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

স্থায়ী ব্যাংক শাখার অভাবে বেরোবিতে ভোগান্তি

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪২০ ঘণ্টা, নভেম্বর ৭, ২০১৮
স্থায়ী ব্যাংক শাখার অভাবে বেরোবিতে ভোগান্তি বেরোবিতে অফিস কক্ষের সামনে শিক্ষার্থীরা। ছবি: বাংলানিউজ

বেরোবি (রংপুর): বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বেরোবি) প্রতিষ্ঠার ১০ বছর পার করলেও এখনো স্থাপন করা হয়নি স্থায়ী ব্যাংক শাখা। এতে করে ফরমপূরণ এবং ভর্তির অর্থসহ বিভিন্ন ফি জমাদানের সময় চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। 

এক দশকেও স্থায়ী ব্যাংক শাখা স্থাপন না হওয়ার কারণ হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উদাসীনতাকেই দায়ী করছেন শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন শিক্ষার্থীদের ভোগান্তির বিষয়টি অবগত থাকলেও ১০ বছরেও কোনো উদ্যোগ নেয়নি।

এমনকি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর অবকাঠামোগত যে পরিকল্পনা করা হয় সেটাতেও ব্যাংক স্থাপনের কোনো পরিকল্পনা করেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।  

ব্যাংকের একটি শাখা স্থাপনের ব্যাপারে যেমন নীরব থেকেছে বিগত প্রশাসন। তেমনি এ ব্যাপারে বর্তমান প্রশাসনও তেমন সরব নয়। ফলে দিনের পর দিন শিক্ষার্থীরা ফি জমা দিতে গিয়ে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।  

সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা যায়, রোববার (৪ নভেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান, অর্থনীতি, লোক-প্রশাসন, বাংলা, অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস, উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের প্রায় ১০টি ব্যাচের সেমিস্টার ফি, ফরম পূরণের টাকা জমা দেওয়ার তারিখ ছিলো। চিপা করিডোরের একটি ছোট রুমে অস্থায়ী ব্যাংক বুথে প্রায় ৫শ' শিক্ষার্থী তাদের বিভিন্ন ফি জমা দিতে গিয়ে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি হচ্ছে। এমনকি ওই করিডোর দিয়ে প্রশাসনিক কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও যাতায়াত করতে পারছে না। পাশাপাশি একই সময়ে এতো শিক্ষার্থীর টাকা জমা নিতে হিমশিম খাচ্ছেন অস্থায়ী ব্যাংকের দু'জন কর্মকর্তা। একই অবস্থা প্রতিনিয়ত চলছে।  

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, রংপুরের লালবাগ এলাকায় জনতা ব্যাংকের একটি অস্থায়ী ব্যাংক বুথের মাধ্যমে চলছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সেমিস্টার ফি, হল ফি জমাসহ সব ধরনের অর্থ জমাদানের কার্যক্রম।
বেরোবিতে অফিস কক্ষের সামনে শিক্ষার্থীরা।  ছবি: বাংলানিউজবিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র পরামর্শ দফতরের একটি অস্থায়ী কক্ষে দীর্ঘদিন ধরে চলছে শিক্ষার্থীদের এ অর্থ গ্রহণের কাজ। সপ্তাহে পাঁচদিন সকাল ১১ টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত চলে অর্থ জমা কার্যক্রম। সব ধরনের অর্থ গ্রহণে দু'জন কর্মকর্তা যেমন হিমশিম খাচ্ছেন তেমনি শিক্ষার্থীদের সময় অপচয় হচ্ছে দ্বিগুণ হারে।  

দীর্ঘদিন ধরে এ সমস্যা সৃষ্টি হলেও বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যাংকের স্থায়ী শাখা স্থাপনে নজর দেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এতে বেহাল দশায় চলছে অর্থ জমাদানের কাজ। বিশেষ করে সেমিস্টার পরীক্ষার আগেই একইসঙ্গে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে টাকা জমা দিতে বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন শিক্ষার্থীরা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই অস্থায়ী ব্যাংক বুথেই শিক্ষার্থীদের একইসঙ্গে হল ভর্তি, একাডেমিক সেশনের ভর্তি, ফরম পূরণের অর্থ, মেডিকেল ও লাইব্রেরি কার্ডের জন্য অর্থ , অনার্স ও মাস্টার্সের সার্টিফিকেট উত্তোলনে অর্থ জমাদানসহ সব ধরনের অর্থ জমা দিতে হয়। একটি ভাড়া করা কক্ষে সেখানে এতোগুলো কাজ সংক্ষিপ্ত সময়ে মাত্র দু'জন কর্মকর্তাকে কাজগুলো সামলাতে হয়। যার ফলে টাকা জমা দিতে গিয়ে শিক্ষার্থীরা দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকছেন ঘণ্টার পর ঘণ্টা। দিনদিন ভোগান্তির মাত্রা বেড়েই চলছে শিক্ষার্থীদের।

অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের শিক্ষার্থী বাপ্পি বাংলানিউজকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থায়ী ব্যাংক শাখা না থাকায় দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থেকে টাকা জমা দিতে হয়েছে। সামনে পরীক্ষা আর আজ প্রায় চারঘণ্টা সময় নষ্ট হলো।

অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী জিকেম আলী ও আবিদ ক্ষোভ প্রকাশ করে বাংলানিউজকে বলেন, আজকেই আমাদের ফরমপূরণের টাকা জমার শেষ তারিখ। সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দাঁড়িয়ে আছি এখন বাজে সাড়ে ১২টা এখন পযর্ন্ত টাকা জমা দিতে পারিনি।  

রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী হাসিব আখলাক বাংলানিউজকে বলেন, প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে ফরমপূরণের টাকা জমা দেওয়ার জন্য অপেক্ষায় আছি। কোনো স্থায়ী ব্যাংক বুথ নেই তার উপর বিভাগগুলো হঠাৎ করে ভর্তি তারিখ নির্ধারণ করে। এতে করে একদিনে একাধিক বিভাগের ভর্তি-ফরম পূরণের তারিখ একইদিনে হওয়ায় শিক্ষার্থীদের ভোগান্তির সীমা ছাড়িয়ে যায়।  

মুখতার ইলাহী হলের শিক্ষার্থী মাহবুল মণ্ডল ক্ষোভ প্রকাশ করে বাংলানিউজকে বলেন, ক্লাস না করে হল ফি জমা দিতে এসেও জমা দিতে পারলাম না ভিড়ের কারণে।  

জনতা ব্যাংক লালবাগ শাখার কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান হাবিব বাংলানিউজকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাকাল থেকেই আমরা আর্থিক সেবা দিয়ে যাচ্ছি। আমরা শুধু অর্থ জমা রাখি। আর বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি শাখা স্থাপনের ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে মৌখিক আলোচনা হয়েছে।  

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বাংলানিউজকে বলেন, আমি ঢাকায় আছি তাই আজকের সমস্যার বিষয়টি জানতে পারেনি। আর বলা আছে ব্যাংক বুথে টাকা জমা দেওয়ার সময় শিক্ষার্থীদের ভিড় দেখা দিলে তাৎক্ষণিক সমস্যা সমাধানের জন্য আরেক জন কর্মকর্তা কাজ করবেন। কিন্তু আজকের সমস্যার বিষয়টি এখনো কেউ জানায়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য একটি আলাদা ব্যাংক বুথ স্থাপনের পরিকল্পনা আছে আমাদের।  

বাংলাদেশ সময়: ০৯০৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৭, ২০১৮
এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।