এবারের নির্বাচনে ১২টি ছাত্রসংগঠনসহ স্বতন্ত্র মিলিয়ে সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে প্রার্থী হয়েছেন ১৪ জন। তবে মূল লড়াই জমবে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী ও স্বতন্ত্র থেকে নির্বাচন করা গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ছাত্র এ আর এম আসিফুর রহমানের মধ্যে।
চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকায় লক্ষ্য করা গেছে, উপরের দু’জন ছাড়াও ছাত্র ফেডারেশনের ঢাবি শাখার সভাপতি উম্মে হাবিবা বেনজীর, প্রগতিশীল ছাত্রজোটের ফয়সাল মাহমুদ সুমন, ছাত্র সমাজের মামুন ফকির, ছাত্রদলের আনিসুর রহমান খন্দকার অনিক, ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলনের মাহমুদুল হাসান, কোটা সংস্কার আন্দোলনের রাশেদ খান, ছাত্রমুক্তি জোটের রাশেদুল ইসলাম, ছাত্রলীগ জাসদ থেকে শফিকা রহমান শৈলী, স্বতন্ত্র জোটের শাফী আবদুল্লাহ, ছাত্রলীগ বিসিএল শাহরিয়ার রহমান, ছাত্রমৈত্রীর সনম সিদ্দিকী ও স্বতন্ত্র থেকে জালাল আহমেদ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, ক্যাম্পাসে বর্তমানে ছাত্রলীগের অবস্থানের কারণে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অন্য প্রার্থীদের মধ্য থেকে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী মূল লড়াইয়ে থাকবেন। তার সঙ্গে যুক্ত হবেন স্বতন্ত্র থেকে প্রার্থী হওয়া দীর্ঘদিন ধরে ক্যাম্পাস সাংবাদিকতায় শিক্ষার্থীদের পাশে থেকে নিজের আলাদা অবস্থান তৈরি করা গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ছাত্র এআরএম আসিফুর রহমান। সরকারবিরোধী ছাত্রসংগঠনগুলোর মধ্যে বিভক্তি, ছাত্রদলের প্রার্থী অপরিচিত, জোটগত সমঝোতা না হওয়া, ব্যক্তির স্বচ্ছ ইমেজ না থাকার কারণে অন্য প্রার্থীরা মূল লড়াইয়ে আসার সম্ভাবনা কম বলে অভিমত বিশ্লেষকদের। তাই জিএস পদে আসিফ-রাব্বানীতে লড়াই জমবে বলে ধারণা অধিকাংশের।
ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগে অধ্যয়নরত। প্রচারণায় নিজেকে ‘মানবিক ছাত্রনেতা’ হিসেবে উল্লেখ করে ছাপানো লিফলেটে স্বপ্নের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নির্মাণে দিয়েছেন প্রতিশ্রুতি। আবাসন, খাবার, চিকিৎসা, পরিবহন, শিক্ষা ও গবেষণা, খেলাধুলা, সংস্কৃতি চর্চা, শিক্ষার্থী হয়রানি প্রতিরোধ সেল করার মাধ্যমে ভূমিকার কথা বলেছেন তিনি। এছাড়াও সন্দেহাতীতভাবে ক্লিন ইমেজের অধিকারী, শিক্ষার্থীদের মধ্যে তুমুল জনপ্রিয় ও দৃষ্টান্তমূলক শিক্ষার্থীবান্ধব, বিভিন্ন যৌক্তিক ইস্যুতে অনলাইনে কার্যক্রমে সুখ্যাতি রয়েছে উল্লেখ করলেও বিষয়টি নিয়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের এক শ্রেণীর মধ্যে রয়েছে আলোচনা-সমালোচনা।
তবে সংগঠনের ইশতেহার ঘোষণার সময় গোলাম রাব্বানী বলেন, ‘ডাকসু নির্বাচনে আমাদের প্যানেল সেরাদের সেরা। আমাদের প্রতি শিক্ষার্থীদের অগাদ বিশ্বাস রয়েছে আমাদের ভালোবাসার আধিপত্য। ১০ বছর ধরে সুষ্ঠু ও সুন্দর ক্যাম্পাস এ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ কর্মীদের একাগ্রতার ফসল। যতবারই ডাকসুতে ছাত্রলীগের প্যানেল নির্বাচিত হয়েছে, ততবারই ডাকসু প্রাণ ফিরে পেয়েছি। আমরা শিক্ষার্থীদের ভোটের মাধ্যমে স্বপ্নের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গড়তে চাই।
অন্যদিকে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ছাত্র এ আর এম আসিফুর রহমান ক্যাম্পাস সাংবাদিকতায় ছিলেন দীর্ঘদিন। শিক্ষার্থীদের আবাসন সমস্যা, খাবার, নানা ধরনের হয়রানি, নির্যাতন নিপীড়ন, রেজিস্ট্রার ভবনের দৌরাত্ম্য, শিক্ষক নিয়োগে অনিয়মসহ শিক্ষা সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে একটি জাতীয় দৈনিকে প্রতিবেদন করে আলোচনায় অনেক আগ থেকেই। যার কারণে ক্যাম্পাসের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, রাজনীতি সংশ্লিষ্ট সবার কাছে অন্যরকম পরিচিতি রয়েছে তার। ক্যাম্পাস সাংবাদিকতায় বর্ষসেরার রিপোর্টার হওয়ার পাশাপাশি দুইবার সাংবাদিক সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হন। শিক্ষার্থীদের সব সমস্যা চিহ্নিত করে সঙ্গে সমাধান কি হতে পারে তা তুলে ধরে অনলাইন-অফলাইনে প্রচারণায়ও সরব রয়েছেন এ প্রার্থী।
প্রচারণায় কি বিষয় লক্ষ্য করছেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে আসিফুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, শিক্ষার্থীদের মধ্যে একটা শঙ্কার বিষয় লক্ষ্য করছি নির্বাচনে সুষ্ঠু ভোট হবে কি না। আবাসিক শিক্ষার্থীরা দীর্ঘদিন দখল-দারিত্ম্যের মধ্যে থাকার সেখান বের হয়ে আসতে উৎসাহী। অন্যদিকে অনাবাসিক শিক্ষার্থীরা নির্বাচনী প্রক্রিয়াটাকে নীলনকশা হিসেবে মনে করছে। আমরা ভোটগ্রহণের সময় বৃদ্ধির দাবি জানিয়েছি।
নির্বাচিত হলে ডাকসু নিয়ে পরিকল্পনা নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সবাই বিভিন্ন রকম প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে। শিক্ষার্থীদের একটা কথা বলতে চাই আমি শিক্ষার্থীদের জন্য কাজ করেছি। যখন তাদের পক্ষে কথা বলার কেউ ছিল না আমি বলার চেষ্টা করেছি। আমাকে যারা স্বতন্ত্র হিসেবে সমর্থন দিয়েছে তারা নিজেদের জায়গা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য কাজ করছে। আমি একটাই প্রতিশ্রুতি দেবো শিক্ষার্থীদের পক্ষে কথা বলেছি এবং কথা বলে যাবো। সে কথাগুলো হবে নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে। চটকদার কোনো কিছু থাকবে না।
বাংলাদেশ সময়: ০৬২৩ ঘণ্টা, মার্চ ০৭, ২০১৯
এসকেবি/জেডএস