এর মধ্যে ডাকসুর অন্যতম দায়িত্বপূর্ণ সহ-সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে লড়াইয়ে অংশ নিচ্ছেন ১৩ জন। সার্বিক বিবেচনায় এই পদে বিভিন্ন ছাত্রসংগঠন প্রার্থী দিলেও ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন থাকছেন এগিয়ে।
প্রার্থী তালিকা অনুসারে, স্বতন্ত্র জোটের অমিত প্রামাণিক, ছাত্র মুক্তিজোটের অনুপ রায়, ছাত্রলীগ বিসিএলের আশরাফুল আলম ফাহিম, স্বাধিকার স্বতন্ত্র পরিষদের মো. আবু রায়হান, ছাত্রদলের খোরশেদ আলম, জাসদ ছাত্রলীগের মো. জহরুল ইসলাম, কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের মো. ফারুক হোসেন, বাংলাদেশ ছাত্রমৈত্রীর রহমত উল্লাহ, ইসলামী শাসনতন্ত্রের শরীয়াত উল্লাহ, প্রগতিশীল ছাত্রজোটের সাদেকুল ইসলাম ও স্বতন্ত্র থেকে ফারাহ মাহযাবিন এবং শাহিদুল ইসলাম প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।
সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, ছাত্রলীগের শীর্ষ চার নেতার একজনের বাইরেও সাদ্দাম হোসেন ক্যাম্পাসে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে নিজের আলাদা একটি বলয় তৈরি করেছেন। যার কারণে এজিএস পদে নিজেকে শক্ত অবস্থান নিয়ে গেলেও অন্য প্রার্থীদের ক্ষেত্রে বিপরীত চিত্র। একমাত্র কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের প্রার্থী মো. ফারুক হোসেন ছাড়া বাকি প্রার্থীদের অনেকেই অপেক্ষাকৃত ক্যাম্পাসের অপরিচিত মুখ।
দলের ভোট থাকলেও ছাত্রদল ক্যাম্পাস ছাড়া হওয়ার কারণে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তেমন মেশার সুযোগ পাননি সংগঠনটির প্রার্থী খোরশেদ আলম। সাংগঠনিক অবস্থান দুর্বল হওয়ার কারণে অন্য প্রার্থীরা ভোটের মাঠে তেমন প্রভাব ফেলতে পারবেন না। ভিপি, জিএস পদে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস পেলেও এজিএসপদে অনেকটাই নির্ভার ছাত্রলীগের সাদ্দাম হোসেন।
২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে ভর্তি হন তিনি। বিতর্ক অঙ্গন থেকে উঠে আসার কারণে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মনোনীত হওয়ার পরপরই সবার নজরে আসেন। ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতাদের নিয়ে বিভিন্ন কথা আসলেও ব্যতিক্রম ছিলেন সাদ্দাম। নিজ সংগঠনের কর্মীদের পাশাপাশি সাধারণ শিক্ষার্থীদের হয়ে কথা বলার চেষ্টা করছেন। প্রগতিশীল চিন্তা-চেতনা লালন করায় শিক্ষক সমাজের কাছে আলাদা গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে তার। অনেক শিক্ষার্থী ব্যক্তিগত পছন্দ থেকেও এজিএস পদে তাকে ভোট দেওয়ার কথা বলেছেন। তবে শিক্ষার্থীদের আরেকটি অংশ মনে করছেন, কথার ফুলঝুরি নয়, ঘোষিত বিষয়গুলো বাস্তবায়নের পর মূল্যায়নের কথা ভাবছেন।
ডাকসু নির্বাচন নিয়ে জানতে চাইলে সাদ্দাম হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আমাদের আত্মিক বন্ধন রয়েছে। তাদের আনন্দ-বেদনা মিলন-বিরহ সংকটে আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে পথ চলেছি। তাদের যে স্বপ্ন রয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে ঘিরে সেই স্বপ্ন আমরা ইশতেহারে প্রস্ফুটিত করতে পেরেছি। এ কারণেই আমরা সবখানে ইতিবাচকভাবে সাড়া পাচ্ছি। শিক্ষার্থীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে সমর্থন দিচ্ছে। আমাদের ভোট দিয়ে তারা মনে করছে নিজেদেরই ভোট দিচ্ছে। ছাত্রলীগের বিজয়ের মধ্য দিয়ে প্রকারন্তরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বিজয় হবে।
এবারের নির্বাচনে ছাত্রলীগের চ্যালেঞ্জ হিসেবে দাঁড়িয়েছে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের প্যানেল। সে হিসেবে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম-আহ্বায়ক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্যোগ বিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের ছাত্র ফারুক হোসেন এজিএস পদে আলোচনায় রয়েছেন। কোটা সংস্কার আন্দোলনে নেতৃত্ব ও ছাত্রলীগের হাতে মারধরের শিকার হয়ে ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের একটি অংশের সমর্থন পাবেন তিনি- এমনটাই ধারণা করছেন অনেকে।
নির্বাচন ঘিরে পরিকল্পনার কথা জিজ্ঞেস করলে ফারুক হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, আন্দোলনে সফল হওয়ার কারণে আমাদের একটা সমর্থন রয়েছে, প্রচারণায়ও সাড়া পাচ্ছি সেভাবে। নির্বাচিত হলে আমরা লেজুড়ভিত্তিক রাজনীতি, গণরুম গেস্টরুমে শিক্ষার্থীদের নির্যাতন বিলোপ করে মুক্তবুদ্ধি চর্চার কেন্দ্র হিসেবে স্বপ্নের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তোলার জন্য কাজ করবো। ডাকসুর হেল্প ডেস্ক চালু করার মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীরাও সহযোগিতা পাবে।
এই দুই প্রার্থীর বাইরে আলোচনায় থাকবেন ছাত্রদল মনোনীত প্রার্থী খোরশেদ আলম সোহেল, প্রগতিশীল ছাত্রজোটের সাদেকুল ইসলাম। আগামী ১১ মার্চ ডাকসুর ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬২২ ঘণ্টা, মার্চ ০৮, ২০১৯
এসকেবি/এএ