ঢাকা, রবিবার, ৭ আশ্বিন ১৪৩১, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

এক বছরে সাক্ষরতার হার বেড়েছে ১ শতাংশ

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০৩৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৬, ২০১৯
এক বছরে সাক্ষরতার হার বেড়েছে ১ শতাংশ

ঢাকা: সরকারের নিরলস প্রচেষ্টায় দেশে বর্তমানে সাক্ষরতার হার বেড়ে শতকরা ৭৩ দশমিক ৯ ভাগে উন্নীত হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন।

আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস উপলক্ষে বৃহস্পতিবার (৫ সেপ্টেম্বর) সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান প্রতিমন্ত্রী।  

সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রণালয়ের সচিব আকরাম-আল-হোসেন, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এএফএম মনজুর কাদিরসহ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।


 
গতবছর সাক্ষরতার হার ছিল ৭২ দশমিক ৯ শতাংশ, ২০১৭ সালে ছিল ৭২ দশমিক ৩ শতাংশ।  
 
সরকারের নির্বাচনী ইশতেহারে ২০১৪ সালের মধ্যে শতভাগ নিরক্ষরমুক্ত করার অগ্রগতির বিষয়ে সচিব বলেন, বর্তমানে তিন কোটি ২৫ লাখ নিরক্ষর। আগামী পাঁচ বছরে এক কোটি লোককে নিরক্ষর মুক্ত করা হবে। উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচির মধ্যে ২০৩০ সালের মধ্যে নিরক্ষরমুক্ত টার্গেট থাকবে।
 
আগামী ৮ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবসে ইউনেস্কো কর্তৃক এ দিবসের প্রতিপাদ্য ‘লিটারেসি অ্যান্ড মাল্টিলিঙ্গুলিজম’ এর সঙ্গে সঙ্গতি রেখে বাংলায় প্রতিপাদ্য করা হয়েছে ‘বহুভাষায় সাক্ষরতা, উন্নত জীবনের নিশ্চয়তা’।
 
প্রতিমন্ত্রী জানান, বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত প্রায় এক কোটি ৮০ লাখ নিরক্ষরকে অক্ষরজ্ঞান দেওয়া হয়। সাক্ষরতা বিস্তারে এ বিশাল অর্জনের জন্য বাংলাদেশ ১৯৯৮ সালে ইউনেস্কো কর্তৃক ‘আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা পুরস্কার’ লাভ করে। ‘সবার জন্য শিক্ষা’ এবং ‘সহস্রাব্ধ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রাসমূহ’ সাফল্যজনকভাবে অর্জনের জন্য ২০১৪ সালে ইউনেস্কো মহাসচিব ইরিনা বোকোভা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘শান্তি বৃক্ষ’ পদক প্রদান করেন।
 
তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক প্রতিশ্রুতি ‘টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি)’ এবং জাতীয় অঙ্গীকারের সব লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য সরকার ৭ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা (২০১৬-২০২০) প্রণয়ন করেছে। টেকসই উন্নয়ন অভীষ্টের চতুর্থ লক্ষ্যে সাক্ষরতা বিস্তার, দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ এবং জীবনব্যাপী শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টির জন্য ৭ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা সাব-সেক্টরের জন্য ব্যাপক পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এ কর্মসূচির উল্লেখযোগ্য কিছু দিক রয়েছে।
 
মৌলিক সাক্ষরতা প্রকল্প (৬৪ জেলা)
এ কর্মসূচির মাধ্যমে দেশের ৬৪ জেলায় নির্বাচিত ২৫০টি উপজেলার ১৫ থেকে ৪৫ বছর বয়সী ৪৫ লাখ নিরক্ষরকে সাক্ষরতা জ্ঞান দেওয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে এ প্রকল্পের মাধ্যমে প্রথম পর্যায়ে ১৩৪টি উপজেলায় শিখন কেন্দ্রের মাধ্যমে ২৩ লাখ ৫৯ হাজার ৪৪১ জন নিরক্ষরকে সাক্ষরতা দেওয়া হয়েছে।
 
পিইডিপি-৪ এর আওতায় বিদ্যালয় বহির্ভূত শিশুদের জন্য উপানুষ্ঠানিক প্রাথমিক শিক্ষা:
দারিদ্র্য, অনগ্রসরতা, শিশুশ্রম, ভৌগলিক প্রতিবন্ধকতা ইত্যাদি কারণে এখনও অনেক শিশু বিদ্যালয় বহির্ভূত রয়েছে। উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যবস্থায় এসব শিশুর প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করার জন্য পিইডিপি-৪ এর সাব-কম্পোনেন্টের আওতায় ৮-১৪ বছর বয়সী বিদ্যালয় বহির্ভূত ১০ লাখ শিশুকে উপানুষ্ঠানিক প্রাথমিক শিক্ষা দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
 
উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা বোর্ড:
উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা আইন, ২০১৪ এর আলোকে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা বোর্ড প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। বোর্ডের মাধ্যমে সারা দেশে সরকারি-বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠান যারা উপানুষ্ঠানিক শিক্ষার সঙ্গে জড়িত তাদের প্রতিষ্ঠানের রেজিস্ট্রেশন, শিক্ষকদের যোগ্যতা ও দক্ষতা নিরূপণ, শিক্ষার্থীদের নিবন্ধন, প্রশ্নপত্র প্রণয়ন, পরীক্ষা গ্রহণ ও সনদ দেওয়া হবে।
 
উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি (এনএফইডিপি):
৭ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা এবং এসডিজি-৪ এর লক্ষ্যমাত্রাসমূহ অর্জনের জন্য উপানুষ্ঠানিক শিক্ষার সেক্টর ওয়ার্ড এপ্রোচ প্রোগ্রাম (এসডব্লিউএপি) হিসেবে ‘নন-ফরমাল এডুকেশন ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম’ (এনএফইডিপি) নামে একটি বৃহৎ কর্মসূচিভিত্তিক প্রস্তাবনা তৈরি করেছে। কর্মসূচিটির আওতায় ১৫ বছরের ঊর্ধ্বে ৫০ লাখ নিরক্ষরকে মৌলিক সাক্ষরতা প্রদান; ১৫-৪৫ বছর বয়সী ৫ লাখ যুব ও বয়ষ্ক নতুন সাক্ষরতা অর্জনকারী ব্যক্তিদের দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ প্রদান; প্রাথমিকভাবে ৫০০টি আইসিটি বেইজড স্থায়ী কমিউনিটি লার্নিং সেন্টার (সিএলসি)  স্থাপন করা হবে এবং ৬৪টি জেলায় ৬৪টি জীবিকায়ন দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র  স্থাপন করা হবে।
 
মুজিববর্ষে শতভাগ শিক্ষার্থী রিডিং পড়তে পারবে
সচিব বলেন, এক সময় ইউনেস্কোর রিপোর্ট ছিল যে বাংলাদেশের তৃতীয় থেকে পঞ্চম শ্রেণির ৬৫ শতাংশ বাচ্চা রিডিং পড়তে পারে না। এখন খুব কম ছাত্র-ছাত্রী রয়েছে যারা রিডিং পড়তে পারে না। মুজিববর্ষে শতভাগ শিক্ষার্থী রিডিং পড়তে পারবে, এটা আমাদের চ্যালেঞ্জ। এখন আমরা প্রত্যেক স্কুলে দুর্বল বাচ্চাকে চিহ্নিত করে তাদের ওপর জোর দিতে নির্দেশ দিয়েছি।
 
কেজি স্কুলের বইয়ের বোঝা কমানো নিয়ে প্রশ্নে সচিব বলেন, হাইকোর্টোর নির্দেশনা দিয়েছে যে বাচ্চাদের ওপর অতিরিক্ত বইয়ের বোঝা চাপানো যাবে না। কিন্ডার গার্টেনের বিরুদ্ধে কিছু ব্যবস্থা নিচ্ছি। ব্যাঙের ছাতার মতো কিন্ডার গার্টেন গড়ে উঠেছে। এগুলো রেগুলেট করাটাও বেশ ডিফিকাল্ট। উপজেলা পর্যায়ের কর্মকর্তারা দেখছেন, তারা নির্দেশরা সুপারভাইজ করছেন। সব জায়গায় যে পালন হচ্ছে তা না।
 
প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমাদের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কিছু দুর্বলতা রয়েছে। অভিভাবকেরা আমাদের প্রাইমারিতে দিতে চায় না। কেমন যেন একটা আর্ট হয়ে গেছে, আমার ছেলেটাকে আমি ইংলিশ স্কুলে, কেজি স্কুলে পড়াব। আমাদের প্রাথমিকের ভালো ভালো বাচ্চাদের বিভিন্ন কায়দা করে নিয়ে যাচ্ছে।
 
**২০২১ থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পরীক্ষা থাকবে না
বাংলাদেশ সময়: ২০৩৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৫, ২০১৯
এমআইএইচ/এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।