ঢাকা, রবিবার, ৭ আশ্বিন ১৪৩১, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

১৪ কারণে বশেমুরবিপ্রবির ভিসির পদত্যাগ দাবি

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২৫৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৪, ২০১৯
১৪ কারণে বশেমুরবিপ্রবির ভিসির পদত্যাগ দাবি

গোপালগঞ্জ: গোপালগঞ্জ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্বাবিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) উপাচার্য (ভিসি) খোন্দকার নাসির উদ্দিনের পদত্যাগ দাবির স্বপক্ষে ১৪টি প্রধান কারণ তুলে ধরে সংবাদ সম্মেলন করেছে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।

মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর) বেলা ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের একাডেমিক ভবনের সামনে এ সাংবাদিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন এমএসসি গণিত বিভাগের ছাত্র আল গালিব।

লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, আমরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা স্বৈরাচারী ভিসি খোন্দকার নাসির উদ্দিনের পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলন করছি। যার নৈতিক স্থলন চরম পর্যায়ে, পরিপূর্ণ দুর্নীতিতে নিমজ্জিত, তিনি শিক্ষার শত্রু। তার বন্দি জিঞ্জিরা থেকে মুক্ত হওয়ার আন্দোলন করছি।

আমরা তার পদত্যাগ ও অপসারণের দাবিতে কয়েকটি প্রধান কারণ তুলে ধরছি-

১. জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল নির্মাণ কাজ শুরুর আগেই আড়াই কোটি টাকা নির্মাণ ব্যয় দেখানো হয়েছে, যেটি বঙ্গবন্ধুর নামে বিশ্ববিদ্যালয়ে কখনোই মেনে নেওয়া যায় না। এখানে তিনি চরমভাবে বঙ্গবন্ধুকে অপমান করেছেন।

২. বিগত বিভিন্ন সময়ে যে কোনো তুচ্ছ বিষয়ে যথেচ্ছাভাবে শিক্ষার্থীদের শোকাজ করা, অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ (যা ইতোমধ্যে সবাই শুনেছে) এবং অন্যায়ভাবে ৮ জনকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
 
তুচ্ছ বিষয়ে অভিভাবকদের ডেকে এনে ঘোর আপমান ও গালিগালাজ করে থাকেন। যা সহ্য করতে না পেরে অকারণে আত্মাহুতি দিয়েছেন মেধাবি শিক্ষার্থী অর্ঘ বিশ্বাস। যাকে আমরা পরোক্ষ হত্যা বলে মনে করি।

৪. ভিসি কোটার নামে ভর্তি বাণিজ্য ও জালিয়াতি। এমনও অনেক অভিযোগ রয়েছে যেখানে তিনি ভর্তি পরীক্ষা না দেওয়া শিক্ষার্থীদের ভর্তি করিয়েছেন। যা কোনভাবে মেনে নেওয়া যায় না। আপনাদের মাধ্যমে এর সঠিক তদন্ত ও বিচার দাবি করছি।
 
৫. মাত্রাতিরিক্ত ভর্তি ফি ও সেমিস্টার ফি এবং বছর বছর অন্যায়ভাবে ভর্তি ফি বাড়িয়ে চলেছেন, যা শিক্ষার্থীদের শিক্ষা গ্রহণের প্রধান অন্তরায়।
 
৬. বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি উন্নয়নমূলক কাজে তীব্র অনিহা স্পষ্ট। প্রমাণস্বরূপ ৮ বছর পেরিয়ে গেলেও স্থায়ী শহীদ মিনার নির্মাণ হয়নি।

৭. বৃক্ষরোপণের নামে অগণিত টাকা আত্মসাৎ। প্রমাণস্বরূপ জয় বাংলা চত্বরের বনসাই এবং ২ কোটি টাকার গোবর বাণিজ্য।
 
৮. ভিসি আবাসিক ভবনে বিউটি পার্লার বানিয়ে নারীদের যৌন হেনস্থা এবং অনৈতিক কার্যকলাপের রমরমা বাণিজ্য।

৯. চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে নারীদের সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন, যেখানে ঝিলিক নামের নারীকে অন্ত:সত্ত্বা হয়েছে বলে অভিযোগ।
১০. বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে সবসময় খাটো করে দেখেছেন, এমনকি ১৫ আগস্ট সঠিকভাবে পালন করা হয়না। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে যা কখনো মেনে নেওয়া যায়না।
 
১১. এর আগের কর্মস্থল বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকাকালে বিএনপি সমর্থিত শিক্ষক প্যানেল সোনালী দলের হয়ে সক্রিয় থেকেছেন। যার ফল স্বরুপ বঙ্গবন্ধুর সঠিক আদর্শ এখানে বাস্তবায়িত হয়না।
 
১২. সব ধরনের লেনদেনে অনিয়ম ও দুর্নীতীতে আকণ্ঠ নিমজ্জিত তিনি, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থিক হিসাব দেখলেই বুঝা যায়। এসবের কিছু দালিলিক প্রমাণ আমরা আপনাদের কাছে উপস্থাপন করব।

১৩. বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি বিষয়ে যেখানে তার কোনো এখতিয়ার নেই, সেখানেও হস্তক্ষেপ করে শিক্ষার্থীদের মেধা বিকাশে অন্তরায় হিসেবে প্রধান প্রভাবক হিসেবে কাজ করেছেন। যা শিক্ষার পরিবেশকে চরমভাবে বিষাক্ত করে তুলেছে।

১৪. শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে ইউজিসির নিয়ম বহির্ভুত ভাবে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়াদের এবং অধিকতর কম সিজিপিএ ধারীদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। যেখানে তাদের থেকেও অধিকতর যোগ্য এবং মেধাবিদের রিফিউজ করা হয়েছে।

এখানে প্রশ্ন হলো কেন এবং কীভাবে? এর প্রমাণ গত নিয়োগের ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি বিভাগের দুই শিক্ষক।  

অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বৈরাচারী কায়দায় এ খোন্দকার নাসিরউদ্দিন মুক্তমনা শিক্ষক ও সমস্ত শিক্ষার্থীদের দমিয়ে রেখে শিক্ষার পরিবেশ তীব্রভাবে কলুষিত করে যাচ্ছেন। যা সমসাময়িক দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আমরা পিছিয়ে পড়েছি প্রতিনিয়ত।
 
সবাই আজ জেগেছে সবাই শিক্ষার উপযুক্ত পরিবেশ চাই। আর এই ভিসি নাসিরউদ্দিনের পদত্যাগই এর একমাত্র সমাধান। তাই আমাদের এক দফা এক দাবি –এই ভিসির পদত্যাগ।  

আপনারা জানেন, গত ৫ দিন ধরে বিনা বিরতিতে আমরা সাধারণ শিক্ষার্থরা আন্দোলন করে যাচ্ছি। যাতে সংহতি জানিয়েছেন সব বিশ্ববিদ্যালয়সহ বুদ্ধিজীবী ও সুশীল সমাজ। এ আন্দোলনে বিঘ্ন ঘটাতে বর্বর হায়েনা আমাদের উপর তীব্রভাবে নির্যাতন ও হামলা চালিয়েছে এবং কোণঠাসা করার চেষ্টা করে যাচ্ছেন।  

এ সময় আইন বিভাগের ছাত্র শফিকুল ইসলাম, আব্দুল্লাহ আল রাফি, নাহিদ মোল্লা, লোকপ্রশাসন বিভাগের ছাত্রী রেহেনুমা তাবাসুম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
  
গত ১১ সেপ্টেম্বর আইন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী ও ক্যাম্পাস সাংবাদিক ফাতেমা-তুজ-জিনিয়াকে সাময়িক বহিষ্কার করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ভিসির বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতি এবং নারী কেলেঙ্কারির অভিযোগ এনে পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলনের নামে শিক্ষার্থীরা।  

বাংলাদেশ সময়: ১৮৩৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৪, ২০১৯
এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।