ঢাকা, রবিবার, ৬ আশ্বিন ১৪৩১, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

১৬ শিক্ষার্থীর জন্য ৪ শিক্ষক, ‍দ্বিতল ভবন থাকলেও নেই রাস্তা

খোরশেদ আলম সাগর, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২২৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৯, ২০১৯
১৬ শিক্ষার্থীর জন্য ৪ শিক্ষক, ‍দ্বিতল ভবন থাকলেও নেই রাস্তা আদিতমারী উপজেলার নামুড়ী বালিকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।

লালমনিরহাট: লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার নামুড়ী বালিকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। বিদ্যালয়টিতে ১৬ জন শিক্ষার্থী জন্য রয়েছে চারজন শিক্ষক। এদিকে, রাস্তা না থাকলেও দ্বিতল ভবন রয়েছে বিদ্যালয়টিতে।

সরেজমিনে বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয়টির তৃতীয় শ্রেণিতে মাত্র চারজন, চতুর্থ শ্রেণিতে চারজন ও পঞ্চম শ্রেণিতে আটজন মিলে মোট ১৬ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। তারা সবাই ক্লাস বাদ দিয়ে মাঠে খেলছিল।

প্রধান শিক্ষক হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করে চলে গেছেন। বাকি তিনজন শিক্ষকের একজন অফিস কক্ষে ঘুমাচ্ছেন অন্য দুইজন বাইরে গল্প করছেন। তখন সাংবাদিকদের ছবি তুলতে দেখে শিক্ষকরা তাড়াহুড়া করে শিক্ষার্থীদের নিয়ে দৌঁড়ে ক্লাসে ফিরে যান।

শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও স্থানীয়রা জানান, উপজেলার পলাশী ইউনিয়নের নামুড়ী গ্রামে ১৯৮৮ সালে নামুড়ী বালিকা প্রাথমিক বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন স্থানীয় শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিরা। প্রতিষ্ঠাকালীন সময় পড়াশোনার মান ভাল থাকায় শিক্ষার্থীর সংখ্যা অনেক বৃদ্ধি পায়। পরবর্তীতে প্রধান শিক্ষক বীরেন্দ্র নাথ সরকার ওরফে শিয়ালুর এক আধিপত্তের কারণে নিম্নমুখী হয়ে পড়ে শিক্ষার মান ও পরিবেশ। বাধ্য হয়ে অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের পাশের বিদ্যালয়ে ভর্তি করেন। বর্তমানে কাগজ কলমে ১৩৭ জন শিক্ষার্থী থাকলেও বাস্তবে রয়েছে মাত্র ১৬/২০ জন শিক্ষার্থী। প্রধান শিক্ষক ক্ষমতাসীন দলের নেতা হওয়ায় ক্ষমতা আর সুযোগ নিয়ে বিদ্যালয়টির রেজিস্ট্রেশন করেন এবং তার স্ত্রী সুজাতা রানীকে সহকারী শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেন। স্কুলে ক্লাস নিচ্ছেন শিক্ষিকা। পরবর্তীতে ২০১৩ সালে জাতীয়করণ করা হয় বিদ্যালয়টি। জাতীয়করণের পরে প্রতিষ্ঠাকালীন তিন শিক্ষকের বদলি হলেও প্রধান শিক্ষক বীরেন্দ্রনাথ সস্ত্রীক রয়েছেন বহাল তবিয়তে। ফলে তাদের নিজস্ব গড়া নিয়ম নীতিতেই চলে বিদ্যালয়ের পাঠদান।

বিদ্যালয় টিকিয়ে রাখতে পাশের বিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী এবং ভুয়া কিছু নাম দিয়ে শিক্ষার্থীর হাজিরা খাতা তৈরি করেছেন এবং সে অনুযায়ী ভোগ করেন যাবতীয় সরকারি সুযোগ সুবিধা। বাঁশ বাগানের ভেতর ও ধান ক্ষেতের আইল দিয়ে বিদ্যালয়ের যোগাযোগ। নেই মূল ফটক। তথ্যের ডিসপ্লে বোর্ড থাকলেও নেই কোনো তথ্য। প্রবেশ পথেই বিপদজনক টয়লেটের খোলা ম্যানহোল। সেখানে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। সেদিকেও নজরদারি নেই বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।

কয়েকজন অভিভাবক জানান, প্রধান শিক্ষক ও তার স্ত্রীর একক সিদ্ধান্তে চলে বিদ্যালয়টি। সবাই বদলি হলেও তাদের বদলি হয় না। আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা, এমপি, মন্ত্রীদের সঙ্গে তার বেশ সখ্যতা থাকায় শিক্ষা অফিস ভুলেও এ বিদ্যালয় পরিদর্শন করেন না। ফলে নিজেদের গড়া নিয়মে চলে বিদ্যালয়।

প্রধান শিক্ষকের স্ত্রী বিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠাতা সহকারী শিক্ষক সুজাতা রানী বাংলানিউজকে বলেন, আগের তুলনায় পাঠদান ভালো হলেও রাস্তার অভাবে শিক্ষার্থীরা আসে না। শিক্ষার্থীরা বিলম্বে আসায় ছুটির আগে হাজিরা নেওয়া হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলা শিক্ষা অফিসের এক কর্মচারী বাংলানিউজকে বলেন, এ বিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিলে বড় নেতাদের ফোন আসে। তাই কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। পাশেই একাধিক বিদ্যালয় তবুও এটি অনুমোদন দেওয়া ঠিক হয়নি। রাস্তা ছাড়া বিদ্যালয়টির যারা অনুমোদন দিয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।

প্রধান শিক্ষক বীরেন্দ্র নাথ (শিয়ালু) বাংলানিউজকে বলেন, পাঠদানের মানের জন্য নয়, রাস্তার অভাবে শিক্ষার্থী নেই। এখানে ভুয়া শিক্ষার্থী নেই। তবে যারা অনুপস্থিত তারা সবাই পরিবারের সঙ্গে কাজের সন্ধানে এলাকার বাইরে রয়েছে। বাড়ির পাশে হলেও বদলির চেষ্টা করেছি। কিন্তু কর্তৃপক্ষ বদলি না করায় একই চেয়ারে কাটছে প্রায় ৩১ বছর।

আদিতমারী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার এনএম শরীফুল ইসলাম খন্দকার বাংলানিউজকে বলেন, বিদ্যালয়টির এমন করুণ পরিস্থিতি আমার জানা নেই। পরিদর্শন করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ০৮২২ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৯, ২০১৯
এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।