ঢাকা, শনিবার, ৬ আশ্বিন ১৪৩১, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

বাবার স্বপ্ন পূরণে ছেলের কীর্তি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২৪৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৯, ২০১৯
বাবার স্বপ্ন পূরণে ছেলের কীর্তি

ঢাকা: বাবা চেয়েছিলেন অবহেলিত গ্রামের মানুষের মধ্যে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে। চেয়েছিলেন হাওরপাড়ের মানুষের জন্য একটি কলেজ প্রতিষ্ঠা করতে। কিন্তু তা আর করে যেতে পারেননি নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ উপজেলার সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা, গণপরিষদ সদস্য, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর একান্ত সহচর, মরহুম ডা. আখলাকুল হোসেন আহমেদ। 

তার সেই অপূর্ণ ইচ্ছা বাস্তবায়ন করেছেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব ছেলে সাজ্জাদুল হাসান। তিনি নিজ গ্রামে গড়ে তুলেছেন শহীদ স্মৃতি মহাবিদ্যালয়।

প্রতিষ্ঠার পর থেকেই ভালো ফলাফলের পাশাপাশি হাওরপাড়ে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে যাচ্ছে কলেজটি।  

সম্প্রতি কলেজটিকে এমপিওভুক্ত করেছে সরকার। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কলেজটি হাওরাঞ্চলে শিক্ষার প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে। এমপিওভুক্তি হওয়ায় শিক্ষক-কর্মকর্তাদের মধ্যে উৎসাহ কাজ করবে। এতে নতুন উদ্যম পাবেন তারা।  

জানা যায়, গত ২৩ অক্টোবর দেশের ২ হাজার ৭৩০ বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করার ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর মাঝে রয়েছে শহীদ স্মৃতি মহাবিদ্যালয়টিও।  

এ খবরে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, স্থানীয় অধিবাসীদের মতো বেশ উচ্ছ্বসিত কলেজের প্রতিষ্ঠাতা সাজ্জাদুল হাসানও। যা নিজের ফেসবুক পেজে প্রকাশ করেছেন তিনি। সেখানে তিনি তুলে ধরেছেন নিজের অভিব্যক্তিও।  

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব সাজ্জাদুল হাসান লিখেছেন, গত ২৪ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরসঙ্গী হিসেবে আজারবাইজানের বাকু যান তিনি। এর আগে নেত্রকোনার জেলা প্রশাসককে টেলিফোনে জানান, আদর্শনগরের শহীদ স্মৃতি কলেজটি এমপিওভুক্ত হয়েছে।  

নিজের টাইম লাইনে তিনি বলেন, ‘যখন প্লেনে অন বোর্ড হলাম, তখন ভীষণভাবে আমার বাবা মরহুম ডা. আখলাকুল হোসেন আহমেদের কথা মনে হচ্ছিল। তিনি এখানে একটি কলেজ প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন। বাবার সেই অসম্পূর্ণ স্বপ্ন আল্লাহর রহমতে পূরণ করতে পেরেছি। জন্মস্থানে একটি কলেজ করার জন্য আমার পিতার অনেক ইচ্ছা ছিল। ’

‘কলেজটিতে আজ শত শত ছাত্র-ছাত্রী পড়াশোনা করছে। কলেজ থেকে পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেয়েছে। কলেজটি স্বল্প সময়ে এমপিওভুক্ত হয়েছে। আমার বাবার কথা মনে হচ্ছিল আর প্লেনে বসে চোখ ভরে পানি আসছিলো। আমার বাবা যদি আজ বেঁচে থাকতেন, যদি এ কলেজে নিয়ে যেতে পারতাম, ছাত্র-ছাত্রী সুন্দর পোশাক পড়ে ভালো পরিবেশে ক্লাস করছে, শিক্ষক/শিক্ষিকাগণ এমপিওভুক্তি হওয়ায় তাদের মনে কত আনন্দ। মাঝে মাঝে মনে হয়, আব্বা পরপারে থেকে খুশি মনে সব দেখছেন এবং আশীর্বাদ করছেন। ’

কলেজের শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে সাজ্জাদুল হাসান লেখেন, ‘আমি আমার প্রিয় ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে অনুরোধ করবো, তোমরা ভালো করে পড়াশোনা করবে। আর সম্মানিত শিক্ষক/শিক্ষিকামণ্ডলী আপনাদের কাছে আমার অনুরোধ, আপনারা ভালো করে পড়াশোনা করাবেন তবেই আমার পিতার আত্মা শান্তি হবে। আমার বাবার জন্য দোয়া করবেন আল্লাহ যেন উনাকে জান্নাতবাসী করেন। ’

শহীদ স্মৃতি মহাবিদ্যালয়‘আমার বাবার এই স্বপ্ন পূরণের জন্য কলেজটির অবকাঠামো, নান্দনিকতা আনয়ন, পরিবেশ ভালো রাখার জন্য প্রধান প্রকৌশলী, প্রধান স্থপতি, জেলা প্রশাসক এবং ইউএনওসহ সব স্তরের কর্মকর্তা, শিক্ষক-শিক্ষিকামণ্ডলী ও সর্বস্তরের এলাকাবাসী- যারা নিরলস পরিশ্রম করেছেন এবং এখনও করে যাচ্ছেন তাদের প্রতি রইলো আমার গভীর কৃতজ্ঞতা,’ যোগ করেন তিনি।  

মোহনগঞ্জ উপজেলা নেত্রকোনা জেলার একটি প্রাচীন জনপদ। এ উপজেলার বেশির ভাগ অংশ হাওরবেষ্টিত। তবুও শিক্ষা, সংস্কৃতি, বাণিজ্য ও যোগাযোগের ক্ষেত্রে এ উপজেলার রয়েছে সমৃদ্ধ ইতিহাস। এ উপজেলার আদর্শনগরের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক কার্যক্রমকে এগিয়ে নিতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব সাজ্জাদুল হাসানের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ২০১৫ সালে শহীদ স্মৃতি মহাবিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়।  

২০১৭ সনে এই মহাবিদ্যালয় থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় প্রথম ব্যাচের ২৬ জন শিক্ষার্থী অংশ নেন। ওই বছর পাসের হার ছিলো শতভাগ। এ ধারাবাহিকতা বজায় থাকে ২০১৮-২০১৯ শিক্ষাবর্ষেও।  

কলেজ সূত্র জানায়, চলতি বছরে এইচএসসি পরীক্ষায় কলেজের ১০৮ জন শিক্ষার্থী পাস করেছেন। এর মধ্যে দুইজন পেয়েছেন জিপিএ ৫। এছাড়া এবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথমবর্ষে ভর্তির জন্য মেধাতালিকায় জায়গা করে নিয়েছেন এই কলেজের এক ছাত্রী।  

স্থানীয় বাসিন্দা ও অভিভাবক আবুল কাশেম বলেন, এত অল্প সময়ের মধ্যে কলেজের সুনাম চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছে। আধুনিক ও মানসম্মত শিক্ষা দেওয়ার কারণেই তা সম্ভব হয়েছে।  

মোহনগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আরিফুজ্জামান বলেন, কলেজের প্রতিষ্ঠাতা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব সাজ্জাদুল হাসান স্যার শতব্যস্ততার মাঝেও কলেজের শিক্ষাকার্যক্রমের নিয়মিত খোঁজখবর রাখেন এবং বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে দিক-নির্দেশনা দেন। তার প্রচেষ্টায় শহীদ স্মৃতি মহাবিদ্যালয় এমপিওভুক্ত হয়েছে।  

তিনি বলেন, আমরা বিশ্বাস করি, অদূর ভবিষ্যতে এই কলেজের শিক্ষার্থীরা দেশে-বিদেশে শিক্ষাক্ষেত্রে অবদান রাখবে এবং উন্নত বাংলাদেশ বিনির্মাণে ভূমিকা রাখবে।

বাংলাদেশ সময়: ২০৩৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৮, ২০১৯
এমএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।