জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি): জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জকসু) এর পূর্ণাঙ্গ গঠনতন্ত্র প্রণয়ন করে শিগগির নির্বাচনের দাবি জানিয়েছে ছাত্র সংগঠনগুলোর নেতারা। করোনাকালীন সংকটে সার্বিকভাবে শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়ানোসহ বর্তমান প্রেক্ষাপটে ছাত্র সংসদের বিকল্প নেই বলে মনে করেন তারা।
জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের আগে জকসুর ১৪টি নির্বাচন হয়েছে। তন্মধ্যে ১৯৫৪ সালে জগন্নাথ কলেজ ছাত্র সংসদের (জকসু) প্রথম নির্বাচন হয়। এরপর স্বাধীনতার আগ পর্যন্ত ছাত্র সংসদের ১০টি কমিটি নির্বাচিত হয়। স্বাধীনতার পরে ১৯৭২, ১৯৭৯, ১৯৮৬, ১৯৮৭ সালে জকসুর আরও চারটি নির্বাচন হয়। তবে ২০০৫ সালে জাতীয় সংসদে পাস হওয়া জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আইনে ছাত্র সংসদের বিধান যুক্ত করা হয়নি।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক সাঈদ মাহাদী সেকেন্দার বলেন, শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে ছাত্রসংসদ খুব গুরুত্বপূর্ণ। ছাত্রসংসদ নতুন নেতৃত্ব সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখবে। আমি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি অতি দ্রুত গঠনতন্ত্র প্রণয়ন ও নির্বাচন আয়োজন করার পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য।
কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচন আয়োজনের দাবি জানিয়েছেন উদীচী জবি সংসদের সভাপতি অনিক সাহা সুমিত। তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরো পরিবেশকে পূর্ণাঙ্গতা দান করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সুস্থ সাংস্কৃতিক সংগঠনের একজন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মী হিসেবে আমিও কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের পক্ষে।
জবি রঙ্গভূমির আহ্বায়ক মাসফিকুল হাসান টনি বলেন, ক্যাম্পাসে গণতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্টির জন্য ছাত্র সংসদ অত্যাবশ্যক। আমাদের অপ্রাপ্তির খাতা বেশ লম্বা। সেই অপ্রাপ্তির জায়গা পূরণ করতে নিরপেক্ষ ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দাবি জানাই। এক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর সম্মিলিত প্রচেষ্টা ও প্রশাসনের সহযোগিতা জরুরি।
ছাত্র ইউনিয়ন জবি সংসদের সাধারণ সম্পাদক খায়রুল ইসলাম জাহিন বলেন, ডাকসু নির্বাচনের পর শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে প্রশাসন একটি খসড়া গঠনতন্ত্র ওয়েবসাইটে ঝুলিয় দিলেও পরবর্তীতে ছাত্র সংসদের বিষয়টিকে উপেক্ষা করা হয়েছে। বারবার ছাত্র সংসদের গঠনতন্ত্র এড়িয়ে যাওয়া মানে শিক্ষার্থীদের গণতান্ত্রিক চর্চার অধিকারকে কুক্ষিগত করা। তাই আমরা ছাত্র সংসদের গঠনতন্ত্রটি সিন্ডিকেটে অনুমোদন দিয়ে তা জাতীয় সংসদে পাঠানোর দাবি জানাই।
ছাত্রফ্রন্ট জবি শাখার সহ-সভাপতি সুমাইয়া সুমা বলেন, করোনার পূর্ব থেকেই সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট বিভিন্ন ক্রিয়াশীল সংগঠনকে নিয়ে নিয়ে ধারাবাহিকভাবে জকসু নির্বাচনের জন্য প্রশাসনের কাছে দাবি জানিয়ে এসেছে। শিক্ষার গণতান্ত্রিক পরিবেশের জন্য ছাত্রদের নেতৃত্বের বিকল্প নেই। তাই বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়া সাপেক্ষে জকসু নির্বাচন নিয়ে প্রশাসন তৎপর হবে সেটিই প্রত্যাশা করি।
বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ জবি শাখার যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল হাসান মিশু বলেন, একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ন্যায্য অধিকার আদায়ে ছাত্র সংসদ অত্যাবশ্যক। আমরা চাই অতি দ্রুত জকসুর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হোক।
জবি ছাত্রদলের নেতা মো. কাজী জিয়া উদ্দিন বাসেত বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষার্থীদের জ্ঞানের সুষ্ঠু বিকাশের জন্য ছাত্র সংসদের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ না থাকাটা দুঃখজনক। তাই প্রশাসনের কাছে আহ্বান শিক্ষার্থীদের বর্তমান প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে একটি পূর্ণাঙ্গ গঠনতন্ত্র অনুমোদন ও নির্বাচন আয়োজন করার জন্য।
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সম্মেলন প্রস্তুত কমিটির আহ্বায়ক আশরাফুল আলম টিটন বলেন, ক্যাম্পাসের ক্রিয়াশীল সংগঠনগুলো নিয়ে বসে জকসু নির্বাচন আয়োজনের দিকে যাওয়া উচিত বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের। ক্যাম্পাস খোলার পর আমরাও জকসু নিয়ে সোচ্চার হব।
বাংলাদেশ সময়: ১৯০২ ঘণ্টা, মার্চ ০৫, ২০২১
এইচএডি