খুলনা: পরিসংখ্যান বলে উন্নয়নশীল দেশসমূহে ফল ও শাক-সবজির সংগ্রহত্তোর ক্ষতি ৫০ শতাংশের ওপরে। বাংলাদেশে তার ব্যতিক্রম নয়।
এই শিক্ষক কুলবোট প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি করেছেন মিনি কোল্ডস্টোরেজ।
জানা যায়, ফল ও শাক সবজির সংরক্ষণাগার প্রয়োজনের তুলনায় খুব বেশি নেই বাংলাদেশে। এর প্রধান কারণ সংরক্ষণাগার তৈরির নির্মাণ খরচ ও কৃষকদের প্রযুক্তিগত জ্ঞানের অভাব অথবা ফল ও শাক-সবজি শীতলীকরণের উপকারিতা পুরোপুরিভাবে না জানা। অথচ শুধু তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণই ফল ও শাক-সবজি সংরক্ষণকাল ১ সপ্তাহ থেকে ১ মাস পর্যন্ত বাড়িয়ে দিতে পারে। ফল ও শাক সবজি সংরক্ষণাগার নির্মাণ খরচ কমানো ও সহজে বোধগম্য প্রযুক্তি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ‘স্টোর ইট কোল্ড’ কোম্পানি যুগোপযোগী এক নতুন শীতলীকরণ যন্ত্র আবিষ্কার করে যার নাম কুলবোট। এই প্রযুক্তি উদ্ভাবনে অগ্রণী ভূমিকা রাখে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া ডেভিস এর হর্টিকালচার ইনোভেশন ল্যাবরেটরি। এই কুলবোট প্রযুক্তি ছোট পরিসরের কৃষকের ফল ও শাক-সবজির সংরক্ষণাগার হিসেবে বিভিন্ন উন্নয়নশীল দেশে ব্যবহৃত হচ্ছে।
ড. প্রশান্ত কুমার দাশ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রকল্পের অধীনে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের জার্ম প্লাজম সেন্টারে এই কুলবোট প্রযুক্তি ব্যবহার করে ১০ ফিট*৮ ফিট*৯ ফিট মাপের স্বল্পমূল্যের একটি হিমাগার তৈরি করেছেন। প্রকল্পের মূল লক্ষ্য ছিল বিভিন্ন প্যাকেজিং দ্রব্য এবং প্রি-কুলিং মাধ্যম ব্যবহার করে সহজে পচনশীল আকর্ষণীয় দামি স্ট্রবেরি ফলের সংরক্ষণকাল বাড়ানো।
প্রকল্পের প্রধান গবেষক ড. প্রশান্ত কুমার জানান, তিনি স্ট্রবেরি ফলের প্রি-কুলিং এর জন্য তিনটি মাধ্যম ব্যবহার করেন, যেমন কুলবোট প্রযুক্তি, হাইড্রোকুলার এবং সাধারণ টেবিল ফ্যানের বাতাসে শীতলীকরণ। প্রাথমিকভাবে ব্যয় কুলবোট প্রযুক্তিতে বেশি হলেও দীর্ঘমেয়াদে ফলাফল বিবেচনায় কুলবোট এই তিন মাধ্যমের মধ্যে সবচেয়ে উপযোগী। কুলবোট প্রযুক্তির মাধ্যমে হিমাগার তৈরির জন্য একটি স্বতন্ত্র পাকা ঘর, একটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র (এসি), একটি কুলবোট, শোলা, ইনসুলেশন পেপার ও একটি কনসিল দরজা প্রয়োজন। যদি কারও স্বতন্ত্র ঘর থাকে তবে হিমাগারে নির্মাণ খরচ অনেকাংশে কমে যাবে। হিমাগার নির্মাণের সম্ভাব্য খরচ ২ লাখ ৭৫ হাজার টাকার মতো। যদি জমি কিনে ছোট আকারে হিমাগার বানানো হয় তবে খরচ বেড়ে ১ থেকে ২ কোটিতে গিয়ে দাঁড়াবে। কুলবোট প্রযুক্তির বড় অন্তরায় সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ সংযোগ। যদিও সোলার প্যানেল ব্যবহার করে এই সমস্যার সমাধান করা সম্ভব।
তিনি মনে করেন, ১০ ফিট * ৮ ফিট * ৯ ফিট ঘরে একজন কৃষক ৪০-৫০ মণ ফল ও শাক-সবজি যেমন আলু, আম, স্ট্রবেরি, ফুলকপি, টমেটো ইত্যাদি দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করে রাখা যাবে। এই অল্প খরচের হিমাগার (মিনি কোল্ডস্টোরেজ) বাংলাদেশের মতো কৃষিপ্রধান দেশের জন্য অত্যন্ত কার্যকরী হবে।
গবেষণা কাজের প্রধান ড. প্রশান্ত মনে করেন, প্রি-কুলিং অপারেশন বাংলাদেশে চোখে পড়ে না। উত্তরাঞ্চলে এখন স্ট্রবেরির চাষাবাদ অনেকাংশে বেড়েছে এবং কৃষকরা আকর্ষণীয় লাভজনক ফল হিসেবে স্ট্রবেরি উৎপাদন করছে। কিন্তু ফল সংরক্ষণাগারের অভাবে তারা সঠিক দাম পাচ্ছেন না এবং বেশি দিন স্ট্রবেরি সংরক্ষণ করে রাখতে পারছে না। আলু, টমেটো, গাজরসহ বিভিন্ন কৃষিপণ্যের ক্ষেত্রেও একই সমস্যা বিরাজমান।
এ গবেষক মনে করেন, কুলবোট প্রযুক্তির হিমাগার এ সমস্যার সমাধানে অনেকাংশেই সফল হবে। এছাড়া দক্ষিণাঞ্চলের ডুমুরিয়া, তালা, কেশবপুর উপজেলা বাংলাদেশের সবজি উৎপাদনের ক্ষেত্রে রোল মডেল। এসব অঞ্চলে এই হিমাগার তৈরি করলে কৃষকরা সংগ্রহত্তোর ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পাবেন এবং আর্থিকভাবে লাভবানও হবেন।
কুলবোট প্রযুক্তিতে তৈরি মিনি কোল্ডস্টোরেজ বাংলাদেশে ক্ষুদ্র পরিসরে কৃষিপণ্য সংরক্ষণে বিপ্লব ঘটাতে পারবে, আশা পর্যবেক্ষক মহলের।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৪৫ ঘণ্টা, মার্চ ২২, ২০২১
এমআরএম/এইচএডি/