ঢাকা, সোমবার, ১৫ আশ্বিন ১৪৩১, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

করোনার হটস্পট কুষ্টিয়া, স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে ইবি শিক্ষার্থীরা

তারিকুল ইসলাম, ইবি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭১০ ঘণ্টা, জুলাই ৯, ২০২১
করোনার হটস্পট কুষ্টিয়া, স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে ইবি শিক্ষার্থীরা কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়

ইবি: করোনার হটস্পট হয়ে উঠছে কুষ্টিয়া জেলা। শনাক্ত ও মৃত্যুর হার প্রতিদিন বেড়েই চলেছে।

পাশাপাশি ঝিনাইদহ জেলাতেও বেড়েই চলেছে করোনার শনাক্ত ও মৃত্যুর হার। পার্শ্ববর্তী দুই জেলার ভয়ানক পরিস্থিতির কারণে মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা (ইবি)।  

কঠোর লকডাউনে কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্শ্ববর্তী মেস-বাসাতে অবস্থানকৃত শিক্ষার্থীরা কার্যত আটকা পড়ে গেছে। দুই জেলার প্রায় প্রতিটি ঘরে ঘরে করোনার উপসর্গ থাকায় আতঙ্কে দিনযাপন করছে তারা। যানবাহন না চলায় মেস ছেড়ে বাড়িতে যেতে পারছে না। বাধ্য হয়ে চরম স্বাস্থ্য ঝুঁকি নিয়েই মেসে অবস্থান করতে হচ্ছে তাদের।

জানা যায়, গত ১৯ জুন অনুষ্ঠিত হয়ে যাওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২০তম একাডেমিক কাউন্সিলকে ঘিরে বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্শ্ববর্তী ও কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহের মেসে চলে আসে শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের অনুমতি সাপেক্ষে ঈদুল ফিতরের পর পরই বেশ কয়েকটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় সশরীরে তাদের চূড়ান্ত পরীক্ষা নেওয়ার ঘোষণা দেন। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও একাডেমিক কাউন্সিলে পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেবে সে প্রত্যাশা নিয়ে শিক্ষার্থীরা মেস বাসা-বাড়িতে অবস্থান করতে থাকে।

পরবর্তীতে ১৯ জুন একাডেমিক কাউন্সিলে ঈদুল আজহার পর হল বন্ধ রেখে সশরীরে পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। ঈদের পর হল বন্ধ রেখে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে জেনে আরো শিক্ষার্থী চলে আসে বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্শ্ববর্তী এলাকায় মেস-বাসা ঠিক করার জন্য।  

এর মধ্যে কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহসহ পুরো খুলনা অঞ্চলে করোনা শনাক্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বাড়তে থাকে। ২২ তারিখ থেকে কুষ্টিয়া লকডাউন শুরু হয়। লকডাউনে কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহসহ পুরো খুলনা অঞ্চলে গণপরিবহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তীতে ২৮ জুলাই থেকে সারাদেশে কঠোর লকডাউন শুরু হলে যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে যায়। আগত শিক্ষার্থীরা তাদের নিজ নিজ জেলায় যেতে পারেনি। ফলে আটকা পরে মেসে অবস্থানকারী শিক্ষার্থীরা।  

এদিকে কুষ্টিয়া ঝিনাইদহসহ পুরো খুলনা বিভাগে প্রতিনিয়ত রেকর্ড ভাঙছে করোনার শনাক্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা।

কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার (৯ জুলাই) পর্যন্ত করোনা শনাক্ত ও উপসর্গ নিয়ে কুষ্টিয়া ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের করোনা ইউনিটে মৃত্যুবরণ করেছেন মোট ৩১৮ জন। যার মধ্যে সর্বশেষ ৯ দিনেই ১০৭ জন মৃত্যুবরণ করেছে। জেলায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৯ হাজার ৮৮৪ জন। করোনার হটস্পট হয়ে উঠেছে কুষ্টিয়াসহ পুরো খুলনা অঞ্চল। বিশ্ববিদ্যালয় পার্শ্ববর্তী ও কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ জেলার প্রায় প্রতিটি ঘরে ঘরেই রয়েছে করোনা উপসর্গ। এমনকি খোদ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরেই রয়েছে করোনা রোগী।

এমতাবস্থায় মেসে অবস্থান করা শিক্ষার্থীরা রয়েছে চরম স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে। করোনার উপসর্গের মধ্যে দিয়েই কাটাতে হচ্ছে তাদের দিনকাল। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে বিশ্ববিদ্যালয় পার্শ্ববর্তী ও কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহের মেসে প্রায় সাড়ে পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী অবস্থান করছে। যানবাহন না চলায় এসব শিক্ষার্থীরা কার্যত আবদ্ধ হয়ে পড়েছে।  

করোনায় ইতোমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষক, একজন কর্মকর্তা ও একজন গাড়িচালক প্রাণ হারিয়েছেন। কয়েকজন শিক্ষক ইতোমধ্যে আক্রান্ত হয়ে আইসিইউতে ভর্তি রয়েছেন। এমতাবস্থায় শিক্ষার্থীরা রয়েছে ব্যাপক আতঙ্কে।
 
এদিকে গত ৭ জুন আটকে পরা এসব শিক্ষার্থীদের বাড়ি যাওয়ার লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব পরিবহনে বিভাগীয় শহরে পৌঁছে দেওয়ার দাবি জানিয়ে উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রমৈত্রী।  

ছাত্রমৈত্রীর নেতারা জানায়, ‘আক্রান্তের হার ঊর্ধ্বগতি হওয়ায় শিক্ষার্থীরা মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে। বিষয়টি বিবেচনায় রেখে দ্রুত নিজস্ব পরিবহনে শিক্ষার্থীদের নিজ নিজ বিভাগীয় শহরে নিরাপদে পৌঁছে দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি। ইতোমধ্যে কয়েকটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় নিজস্ব পরিবহনে শিক্ষার্থীদের বাড়ি পৌঁছে দিয়েছে। আরো কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ও সিদ্ধান্ত নিয়েছে শিক্ষার্থীদের পৌঁছে দেওয়ার।

তাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আব্দুস সালাম শিক্ষার্থীদের তালিকা করে পরবর্তী পরিকল্পনা নেওয়ার কথা বলেন। শিক্ষার্থীদের তালিকা জানতে চেয়ে বৃহস্পতিবার (৮ জুলাই) আগামী ১২ জুলাইয়ের মধ্যে গুগল ফরমে শিক্ষার্থীদের আবেদন করার নির্দেশ দেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ১২ তারিখে গুগল ফরমে আবেদনকৃত শিক্ষার্থীদের পরিসংখ্যান করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে বলে জানা গেছে।
 
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের এ মুহূর্তে ব্যক্তিগত সুরক্ষা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। আটকে পড়া শিক্ষার্থীদের নিজস্ব বাড়ি পৌঁছানোর ব্যাপারে প্রক্টর বলেন, মেস, বাস-বাড়িতে কতজন শিক্ষার্থী রয়েছে তার তালিকা করা হচ্ছে। আগামী ১২ জুলাই বেলা ১১টা পর্যন্ত নির্ধারিত গুগল ফরমে শিক্ষার্থীরা তথ্য দিতে পারবে। সেদিনই আইসিটি সেল শিক্ষার্থীদের তালিকা কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করবে। তালিকা দেখে পরবর্তী পরিস্থিতি বিবেচনায় পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।  

বাংলাদেশ সময়: ১৭০৩ ঘণ্টা, জুলাই ০৯, ২০২১
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।