ঢাকা, বুধবার, ১৪ কার্তিক ১৪৩১, ৩০ অক্টোবর ২০২৪, ২৬ রবিউস সানি ১৪৪৬

শিক্ষা

চিম্বুক পাহাড়ে জুমঘর পাঠাগার, শিক্ষা-সংস্কৃতিচর্চার সুযোগ পাচ্ছে ম্রো শিক্ষার্থীরা

কৌশিক দাশ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৫৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২২
চিম্বুক পাহাড়ে জুমঘর পাঠাগার, শিক্ষা-সংস্কৃতিচর্চার সুযোগ পাচ্ছে ম্রো শিক্ষার্থীরা

বান্দরবান: বান্দরবানের চিম্বুক পাহাড়ে শিশুদের পাঠাভ্যাস গড়ে তুলতে জুমঘর পাঠাগার চালু করেছেন ম্রো ভাষার একজন লেখক ও গবেষক ইয়াংঙান ম্রো।  

জেলা শহর থেকে ১৮ কিলোমিটার দূরে চিম্বুক পাহাড়ের পাদদেশে রামরিপাড়ায় গবেষক ইয়াংঙান ম্রো গড়ে তুলেছেন এই পাঠাগার।

স্থানীয় শিশুদের ম্রো ভাষা সর্ম্পকে জ্ঞানদান আর গল্প, ছড়াও সংস্কৃতিচর্চার এক অন্যন্য দৃষ্টান্ত হয়ে দাঁড়িয়েছে ওই পাঠাগার। আর ওই পাঠাগারের শিক্ষা পেয়ে আলোকিত হচ্ছে পাহাড়ের ম্রো সম্প্রদায়ের শিশুরা।

২০১২ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) প্রাচ্যভাষা বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন ইয়াংঙান ম্রো। এই পর্যন্ত তার ২৯টি বই প্রকাশিত হয়েছে আর সেগুলোর ১৯টি ম্রো ভাষায় ও ১০টি বাংলা ভাষায় লেখা। এর মধ্যে রয়েছে ম্রো ভাষায় রূপকথার গল্প, ম্রোদের লোককাহিনি, ক্রামা ধর্ম ও ম্রো ভাষার ব্যকরণ বই। শিক্ষাজীবন শেষ করে চাকরির আশা না করেই বাবা-মায়ের স্মৃতি ধরে রাখতে এবং ম্রো শিক্ষার্থীদের পাঠ্যাভাস গড়ে তুলতে নিজের পাহাড়ের জুমঘরে তৈরি করেন একটি পাঠাগার, আর প্রতিদিন বিকেলে স্থানীয় শিক্ষার্থীদের পাঠ্যবইয়ের পাশাপাশি শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে সাংস্কৃতিক চর্চার।

ইয়াংঙান ম্রো বাংলানিউজকে জানান, স্থানীয় পিছিয়ে পড়া ম্রো শিশুদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে একটি ব্যতিক্রমধর্মী পাঠাগার প্রতিষ্ঠা করেছি। স্থানীয় ম্রো ভাষায় এই পাঠাগারের নাম দেওয়া হয়েছে ‘সাংচিয়া তেকরা, সাংচিয়া শোনতারা কিম’ বাংলায় যার অর্থ (গল্প শোনা, গল্পবলা)। প্রতিদিনই কয়েকপাড়ার ম্রো শিক্ষার্থীরা প্রতিদিনই এই জুমঘর পাঠাগারে এসে শিক্ষা নিচ্ছে আর গল্প শোনাও গল্প বলার মাধ্যমে পারদর্শী হচ্ছে শিক্ষাজীবনে। গল্পের ছলে এখানে ম্রো জনগোষ্ঠীর ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি প্রথাগত আইনগুলো শিশুদের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ায় খুশি স্থানীয় বাসিন্দারাও। তারা ও ইয়াংঙান ম্রো’র এই কাজে সহযোগিতা করা প্রেনপ্রো ম্রো বাংলানিউজকে জানান, ম্রো জনগোষ্ঠীর শিক্ষার্থীরা বাংলা ভাষা খুব ভালোভাবে বলতে পারে না অনেকেই বিদ্যালয়ে গেলে বাংলা লিখতে ও বলতে অনেক কষ্ট পায় আর তাদের জন্য কিছুটা সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে আমরা এই জুমঘর পাঠাগার তৈরি করেছি আর এখানে বিদ্যালয়ের বাংলা ভাষার পাশাপাশি ম্রো ভাষার চর্চা অব্যাহত রেখেছি। এতে শিশু শিক্ষার্থীরা পড়ালেখায় আগ্রহী হচ্ছে।  

প্রেনপ্রো ম্রো বাংলানিউজকে আরও জানান, বিভিন্ন জেলা শহরে পাঠাগার থাকলেও দুর্গম পাহাড়ী অঞ্চলের সবস্থানে পাঠাগার করা সম্ভব নয়। তাই নিজেদের প্রচেষ্টায় নিজেদের জাতিগোষ্ঠীর শিক্ষা ও কৃষ্টি রক্ষায় আমাদের এই প্রয়াস অব্যাহত রয়েছে।  এদিকে ইয়াংঙান ম্রো’র এমন কর্মকাণ্ডে খুশি স্থানীয় ম্রো জনপ্রতিনিধিরা। তারাও আশ্বাস দিয়েছেন নানা সহায়তার।  

বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য, লেখক ও গবেষক সিং ইয়ং ম্রো এমন উদ্যাগকে স্বাগত জানিয়ে বাংলানিউজকে বলেন, ইয়াংঙান ম্রো এর মতো আদর্শবান এবং উদ্যাগী যুবকদের এমন কর্মকাণ্ড আমাদের দেশের শিক্ষারমান উন্নয়নে আরও কাজ করবে।

তিনি আরও বলেন, তার এমন উদ্যোগকে সুন্দরভাবে পরিচালনার জন্য আমরা বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা করবো।

সিং ইয়ং ম্রো বাংলানিউজকে আরও জানান, চিম্বুক পাহাড়ে ইয়াংঙান ম্রো এর বিনা পারিশ্রমিকে প্রতিদিনই শিক্ষা নেওয়ার সুযোগ পাচ্ছে পাহাড়ের ম্রো সম্প্রদায়ের ৩০ জন শিক্ষার্থী আর তার এমন উদ্যোগ দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে ম্রো সম্প্রদায়ের শিক্ষা ব্যবস্থার অগ্রযাত্রায়।

বাংলাদেশ সময়: ২০৫৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২২
এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।