ঢাকা, বুধবার, ১৪ কার্তিক ১৪৩১, ৩০ অক্টোবর ২০২৪, ২৬ রবিউস সানি ১৪৪৬

শিক্ষা

কুড়িগ্রামে এসএসসির প্রশ্নফাঁস: কেন্দ্র সচিবসহ আটক ৩

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩২২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২২, ২০২২
কুড়িগ্রামে এসএসসির প্রশ্নফাঁস: কেন্দ্র সচিবসহ আটক ৩

কুড়িগ্রাম: কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারী উপজেলায় এসএসসি পরীক্ষার প্রশ্নফাঁস হওয়ার ঘটনায় নেহাল উদ্দিন উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও কেন্দ্র সচিব মো. লুৎফর রহমানসহ তিনজনকে আটক করেছে পুলিশ।
 
আটক অপর দুইজন হলেন- ভুরুঙ্গামারীর নেহাল উদ্দিন উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আমিনুর রহমান রাসেল ও খণ্ডকালীন শিক্ষক মাওলানা জুবায়ের হোসেন।

বুধবার (২১ সেপ্টেম্বর) দুপুরে আটকদের ভূরুঙ্গামারী থানা থেকে কুড়িগ্রাম আদালতে পাঠানো হয়েছে।  

এর আগে, প্রশ্নফাঁসের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার (২০ সেপেটম্বর) দিনগত রাতে তাদের আটক করা হয়। এজাহারে উল্লেখিত প্রধান চার আসামির মধ্যে স্কুলের ক্লার্ক আবু হানিফ বর্তমানে পলাতক রয়েছেন।

প্রশ্নফাঁস হওয়ার ঘটনায় দিনাজপুর বোর্ড বৃহস্পতিবার (২২ সেপ্টেম্বর) অনুষ্ঠিতব্য গণিত পরীক্ষাসহ চারটি বিষয়ের পরীক্ষা স্থগিত ঘোষণা করেছে। এছাড়া ২৪ সেপ্টেম্বর পদার্থ, ২৫ সেপ্টেম্বর কৃষি শিক্ষা ও ২৬ সেপ্টেম্বর রসায়ন পরীক্ষাও স্থগিত করা হয়েছে।

অপরদিকে প্রশ্নফাঁসের ঘটনায় মঙ্গলবার রাত সাড়ে নয়টার দিকে ভূরুঙ্গামারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কক্ষে কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম, পুলিশ সুপার আল আসাদ মো. মাহফুজুল ইসলাম, দিনাজপুর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান কামরুল ইসলাম ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দীপক কুমার দেব শর্মা প্রায় তিন ঘণ্টাব্যাপী রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন।

মামলার বাদী ওই পরীক্ষাকেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আদম মালিক চৌধুরী দায়েককৃত এজাহারে অভিযোগ করেছেন, ইংরেজি দ্বিতীয় পত্রের পরীক্ষা শেষে মঙ্গলবার প্রশ্নফাঁসের অভিযোগেকেন্দ্র সচিবকে উপজেলা ইউএনওর উপস্থিতিতে জিঙ্গাসাবাদ করলে তিনি স্বীকার করেন যে, তার কাছে পরের একাধিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র রয়েছে। এরপর লুৎফর রহমানের কক্ষে বইয়ের তাক থেকে একটি কাপড়ের ব্যাগ পাওয়া যায়। এতে গণিত, রসায়ন, উচ্চতর গণিত, কৃষি শিক্ষা ও পদার্থ বিজ্ঞান প্রশ্নপত্র প্যাকেটবদ্ধ অবস্থায় ছিল। এর মধ্যে একটি প্যাকেট ছাড়া অন্য প্যাকেটগুলোর মুখ খোলা ছিল। এই মামলায় লুৎফর রহমান ছাড়াও সহকারী শিক্ষক আমিনুর রহমান রাসেল, জোবায়ের হোসেন ও ক্লার্ক আবু হানিফসহ অজ্ঞাতপরিচয় আরো ১০-১৫ জনকে আসামি করা হয়। পূর্ব-পরিকল্পিতভাবে আবু হানিফের সহায়তায় প্রধান শিক্ষক কৌশলে ওই প্যাকেটগুলো কেন্দ্রে আনেন বলে এজাহারে অভিযোগ করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, প্রধান শিক্ষক ও ওই কেন্দ্রের কেন্দ্র সচিব লুৎফর রহমান কৌশলে বেশ কয়েকটি বিষয়ের প্রশ্ন আনার সময় কেন্দ্রে দায়িত্বরত ট্যাগ অফিসার বোর্ডের দেএয়া তালিকা অনুযায়ী পাঠানো প্রশ্নেপত্রের খাম গণনা করার নিয়ম থাকলেও তারা দায়িত্ব অবহেলা করে তা করেননি। পরে প্রধান শিক্ষক কয়েকজন শিক্ষকের সহায়তায় ফাঁস করা প্রশ্নপত্রের উত্তরমালা তৈরি করে ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে হোয়াটস অ্যাপের মাধ্যমে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা মূল্যে বিক্রি করেন। প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনাটি স্থানীয় সাংবাদিকদের নজরে এলে বিষয়টি কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক ও উপজেলা ইউএনওকে অবগত করা হলে তারা প্রাথমিক তদন্ত শুরু করেন। মঙ্গলবার উপজেলা ইউএনও দীপক কুমার দেব শর্মা, সহকারী পুলিশ সুপার মোর্শেদুল হাসান, ওসি আলমগীর হোসেনের নেতৃত্বে একটি দল প্রধান শিক্ষকের কক্ষে অভিযান চালিয়ে গণিত, কৃষি বিজ্ঞান, পদার্থ বিজ্ঞান ও রসায়নের প্রশ্নপত্র পায়। যে বিষয়গুলোর পরীক্ষা এখানো হয়নি।

প্রশ্নগুলো প্রধান শিক্ষকের কক্ষে রয়েছে, নিশ্চিত হয়ে পুলিশ সেখানে অভিযান চালায়। পরে বিকেলে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুর রহমান ও প্রধান শিক্ষক লুৎফর রহমানকে থানায় নিয়ে আসে। পরে রাতে প্রধান শিক্ষককে আটক দেখিয়ে মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারকে ছেড়ে দেওয়া হয়। পরে রাতে ইংরেজি শিক্ষক আমিনুর রহমান রাসেল, চুক্তিভিত্তিক শিক্ষক মাওলানা জোবায়ের হোসাইনকে আটক করে। পরে বুধবার ভোরে সহকারী শিক্ষক হামিদুল ইসলাম ও সোহেল আল-মামুন নামে দুইজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে আসা হয়। মামলার অপর আসামি ক্লার্ক আবু হানিফ পলাতক রয়েছেন।

ভূরুঙ্গামারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলমগীর হোসেন বাংলানিউজকে জানান, তিনজন আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মামলার তদন্ত চলছে।

কুড়িগ্রাম জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা শামসুল আলম বাংলানিউজকে জানান, মামলায় অভিযুক্ত আসামি ছাড়াও দায়িত্বপ্রাপ্ত কোনো কর্মকর্তার গাফিলতি আছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কেউই রেহাই পাবেন না।

কুড়িগ্রাম পুলিশ সুপার আল আসাদ মো. মাহফুজুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, সুনির্দিষ্ট প্রমাণের ভিত্তিতে আসামিদেরকে আটক করা হয়েছে। এ মামলাটি গুরত্বসহকারে তদন্ত করা হচ্ছে। এ ঘটনার সঙ্গে যারাই জড়িতদেরকে আইনের আওতায় আনা হবে। তিনি নিজেই তদন্ত কাজ তদারকি করছেন এবং দ্রুততম সময়ে আসামিদের বিচারের মুখোমুখি করা হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৩২১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২১, ২০২২
এফইএস/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।