ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

নির্বাচন ও ইসি

‘আপস করবো না, প্রয়োজনে পদত্যাগ করবো’

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৩৯ ঘণ্টা, মার্চ ১৬, ২০২৩
‘আপস করবো না, প্রয়োজনে পদত্যাগ করবো’ কথা বলছেন নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর।

ঢাকা: নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলেছেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে আমরা কোনো কম্প্রোমাইজ (আপস) করবো না। শতভাগ সুষ্ঠু নির্বাচনের গ্যারান্টি দিচ্ছি।

সুষ্ঠু নির্বাচন না করতে পারলে আমরা দায়িত্ব থেকে সরে যাবো।

বৃহস্পতিবার (১৬ মার্চ) নির্বাচন ভবনের নিজ দফতরে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন।

দলীয় সরকারের অধীনে ভোট সুষ্ঠু হবে না, এ ধারণা ভাঙার দায়িত্ব কার? এমন প্রশ্নের জবাবে মো. আলমগীর বলেন, এটা ভাঙার দায়িত্ব রাজনীতিবিদদের। এখানে নির্বাচন কমিশনের কিছু করার নেই। এটা রাজনৈতিক সমস্যা, রাজনৈতিকভাবেই সমাধান করতে হবে। এ বিষয়ে আমাদের কিছু করার নেই। সংবিধানও সে দায়িত্ব আমাদের দেয়নি। আমাদের নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব হচ্ছে ভোট সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করা। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে থেকেই লেবেল প্লেয়িং ফিল্ড থাকা। নির্বাচনে যারা অংশ নেবে তারা স্বাধীনভাবে প্রচার করতে পারে, ভোটাররা যাতে ভোটকেন্দ্রে এসে তাদের ইচ্ছেমতো পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারেন, ভোট গণনা যাতে সুষ্ঠুভাবে হয়, নির্বাচনের ফলাফল যাতে সঠিকভাবে প্রতিফলিত হয় ভোটারদের ইচ্ছার ও সেটা আমাদের দায়িত্ব।  সে দায়িত্ব পালনের প্রতি আমাদের শতভাগ অঙ্গীকার রয়েছে। আমরা সেটা করবো।

তিনি বলেন, আমরা শুধু এটুকু বলতে পারি, যে ধরনের সরকারই থাকুক না কেন, বর্তমান ইসি শততাগ সৎ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করবে।

এটা তো বিরোধী পক্ষ মূল্যায়ন করছে না, এ বিষয়ে তিনি বলেন, তারা কেন করছে না, তারাই ভালো বলতে পারবে। তবে আমাদের এক বছরে কার্যক্রম দেখে তারা কী বলতে পারবে আমরা নিরপেক্ষতা ভঙ্গ করেছি। অথবা কারো প্রতি আমাদের আচরণ, দুই প্রার্থীর প্রতি আচরণ দুই রকম হয়েছে।

দলীয় সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ ভোট করা সম্ভব? এ প্রশ্নের জবাবে ওই কমিশনার বলেন, কমিশন চাইলে সেটা সম্ভব। পৃথিবীর সব দেশেই প্রায় দলীয় সরকারের অধীনেই নির্বাচন হয়। এটা নির্ভর করে নির্বাচন কমিশন কতটা সঠিকভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করে। আমরা যদি আমাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করি এবং সেটা আমাদের ইচ্ছা আছে, অবশ্যই একটা সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব। অতীতে কেন পারেনি সেটা অতীতে কমিশন পারবে। আগের কমিশন আর বর্তমান কমিশনের লোক হচ্ছে ভিন্ন। তাদের আচরণের সঙ্গে এদের আচরণ মিলবে না।

সংকট দূর করার জন্য সংলাপের দায়িত্ব কে নেবে? এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সংবিধান কী সেই দায়িত্ব আমাদের দিয়েছে। আমাদের বিভিন্ন অংশীজন, সুশীল সমাজের মতামত নেওয়ার ক্ষমতা তো দেওয়া আছে। এখন আর হচ্ছে না। হয়তো পরবর্তীতে হতে পারে। সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে হতে পারে। আবার কোনো কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে হতে পারে। অর্থাৎ যাদের সহযোগিতা প্রয়োজন বলে আমরা মনে করি অথবা প্রয়োজন সুষ্ঠু, সুন্দর নির্বাচনের জন্য, তাদের সঙ্গে তো আমরা নির্বাচনের আগে হয়তো আবারও হতে পারে। সেটা তো থাকতে পারে। এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এটা তো সব সময় আছে, যে নির্বাচন কমিশন যেকোনো সময় যেকোনো দলের সঙ্গে বসে বা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সিদ্ধান্ত নিতে পারে।

প্রশাসনের ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারবে? এমন প্রশ্নের জবাবে মো. আলমগীর বলেন, গাইবান্ধা উপ-নির্বাচন তারা বড় উদাহরণ। প্রশাসন যারা কাজ করেছিলেন, যাদের গাফিলতি পাওয়া গেছে বা যারা অন্যায় কাজের সঙ্গে জড়িতছিলেন তাদের সবার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আমরা চিঠি দিয়েছি এবং সেটা মনিটরিং করেছি। কতজনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে ইত্যাদি আমরা দুই/এক সপ্তাহ পরপরই মনিটর করছি। প্রার্থীর সংশ্লিষ্টতা তো আমরা বলতে পারি না। যারা জড়িত ছিল তারা প্রার্থীর কথা বলেনি। তারা কেন বললো না সেটাই তো রহস্য। তাদেরকে বারবার প্রশ্ন করা হয়েছে, তদন্ত কর্মকর্তারা বারবার প্রশ্ন করেছেন এমন কাজ করলেন কেন, তারা বলেছেন আমরা স্বেচ্ছায় করেছি। এখন তারা যদি বলেন স্বেচ্ছায় করেছি। তারা যদি কারো নাম বলতো আমরা ব্যবস্থা নিতে পারতাম। এখানে তো অনুমান, আন্দাজভিত্তিক কোনো অ্যাকশন নেওয়া যায় না। যেকোনো প্রশাসানিক, বিচারিক বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে হলে আপনাকে যা তদন্তে প্রমাণিত হবে তার ভিত্তিতে ব্যবস্থা নিতে হবে।

অন্য এক প্রশ্নের জবাবে সাবেক ওই ইসি সচিব বলেন, লেবেল প্লেয়িং ফিল্ডের বিষয়টি আমরা তফসিল ঘোষণা আগে দেখবো। আমাদের কিছু কৌশল থাকবে, যাতে সুষ্ঠু নির্বাচন করা যায়। সেই কৌশলগুলো তো আমরা বলবো না। অবশ্যই কিছু কৌশল থাকবে। নির্বাচন অবশ্যই সুষ্ঠু হবে গ্যারান্টি দিচ্ছি আমরা। আমরা যতক্ষণ এই চেয়ারে আছি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য কাজ করে যাবো।

যদি কম্প্রোমাইজ করতে হয় তাহলে কী করবেন? এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তখন আর আমাদের এই চেয়ারে দেখবেন না। আমরা যে কাজের জন্য শপথ করেছি সেটা যদি না-ই করতে পারি, তাহলে এই চেয়ারে থাকবো কেন? আমাদের কমিশনে যারা আছি সবার মনোভার এ রকমই। অবশ্যই আমরা যদি সুষ্ঠু নির্বাচন করতে পারবো না এটা বিশ্বাস করি না। প্রয়োজনে দায়িত্ব থেকে সরে যাবো। সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে কোনো কম্প্রোমাইজ করবো না।

তিনি আরও বলেন, সব দল নির্বাচনে অংশ নেবে কিনা, আমাদের তো ৪০টি নিবন্ধিত দল আছে, আরও অনেক দল থাকবে। কাজেই সবাই যে আসবে এটা তো বলা যায় না। বিদেশি-দেশি কেউ কোনো চাপ দেয় না। আমরা বিশ্বাস করি আমরা আমাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করবো।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৩৮ ঘণ্টা, মার্চ ১৬, ২০২৩
ইইউডি/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।