ঢাকা: জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) নিয়েছেন কিন্তু দশ আঙুলের ছাপ দেননি এমন প্রায় অর্ধকোটি ভোটারের দুই হাতের দশ আঙুলের ছাপ ও চোখের আইরিশের প্রতিচ্ছবি নেবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তাই শিগগিরই পরীক্ষামূলক কার্যক্রম হাতে নেওয়া হচ্ছে।
ইসির এনআইডি শাখার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আঞ্চলিক কর্মকর্তাদের ইতোমধ্যে একটি নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে। যেখানে পরীক্ষামূলক কার্যক্রম হাতে নিয়ে প্রতিবেদন পাঠাতে বলা হয়েছে আগামী ১০ দিনের মধ্যে।
জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের পরিচালক (অপারেশন্স) মো. ইউনুচ আলীর পাঠানো ওই নির্দেশনায় উল্লেখ করা হয়েছে, দেশব্যাপী স্মার্টকার্ড মুদ্রণ ও বিতরণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে। ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন উপজেলা/থানা পর্যায়ে ২০০৭ সাল থেকে ২০১৭ সালের ১ জানুয়ারি পর্যন্ত নিবন্ধিত নাগরিকদের স্মার্টকার্ড বিতরণ করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত যে সকল উপজেলা/ থানায় স্মার্টকার্ড বিতরণ করা হয়েছে, সেখানে ২০১৭ সালের ১ জানুয়ারি পর্যন্ত নিবন্ধিত নাগরিকদের স্মার্টকার্ড বিতরণের সময় দশ আঙুলের ছাপ ও চোখের আইরিশ নেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে ২০১৯ সালের ভোটার তালিকা হালনাগাদের সময় একবারেই নাগরিকদের দশ আঙুলের ছাপ ও আইরিশ নেওয়া হয়েছে। কিন্তু মাঝখানে ২০১৭ সালের ২ জানুয়ারি থেকে ২০১৯ সালের হালনাগাদের পূর্ব পর্যন্ত সময়ে নিবন্ধিত নাগরিকদের স্মার্টকার্ড মুদ্রণ ও বিতরণ না হওয়ায় তাদের দশ আঙুলের ছাপ ও চোখের আইরিশ নেওয়া হয়নি। বর্তমানে ইভিএমের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠান সহজ করার লক্ষ্যে ওই সময়ে নিবন্ধিত নাগরিকদের স্মার্টকার্ড বিতরণ ছাড়াই দশ আঙুলের ছাপ ও চোখের আইরিশ নেওয়া প্রয়োজন।
এ লক্ষ্যে প্রত্যেক অঞ্চলে সিটি কর্পোরেশন/শহর এলাকার ১টি ওয়ার্ডে এবং পল্লী এলাকার ক্ষেত্রে ১টি ইউনিয়নসহ মোট ২টি এলাকায় পাইলটিং করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
নির্দেশনায় আরও উল্লেখ করা হয়, আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তাকে আগামী ১০ দিনের মধ্যে পাইলটিং করে একটি পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন এনআইডি মহাপরিচালককে দিতে হবে।
পরীক্ষামূলক কর্মসূচির ক্ষেত্রে উপজেলা/ থানা নির্বাচন অফিসে কর্মরত ডাটা এন্ট্রি অপারেটরদের মধ্য থেকে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট টিম গঠন করতে হবে। একজন অপারেটর দৈনিক ১৫০ জনের বায়োমেট্রিক নেবেন। তবে ভালোভাবে বায়োমেট্রিক নিতে হলে একজন ডাটা এন্ট্রি অপারেটর দৈনিক কত সংখ্যক বায়োমেট্রিক নিতে পারবেন, তা প্রতিবেদনে উল্লেখ করতে হবে।
এদিকে প্রচার-প্রচারণার অংশ হিসেবে প্রত্যেক ওয়ার্ড/ ইউনিয়ন পর্যায়ে তিনদিন করে মাইকিং করাসহ মসজিদ-মন্দির, স্কুল-কলেজে প্রচার এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ চৌকিদার, দফাদারের মাধ্যমে প্রচারণা করতে হবে।
বায়োমেট্রিক গ্রহণের সময় উদ্ভূত সমস্যা নিরূপণ ও সমাধানের উপায় নির্ধারণ; ওই কার্যক্রম বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় ব্যয়ের খাত ও হারসহ ডাটা প্রতি সম্ভাব্য ব্যয় নির্ধারণ করতে হবে।
ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ২০১৭ সালের ২ জানুয়ারির পর ভোটার তালিকা হালনাগাদ কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়। এরপর চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ হয় ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে। সে সময় তৎকালীন ইসির ভারপ্রাপ্ত সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ জানান, ২০১৬ সালের ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত দেশে মোট ভোটার ছিল ১০ কোটি ১৪ লাখ ৪০ হাজার ৬০১ জন। এবার হালনাগাদে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে ৩৩ লাখ ৩২ হাজার ৫৯৩ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১৬ লাখ ৩২ হাজার ৯৭১ জন এবং নারী ১৬ লাখ ৯৯ হাজার ৬২২ জন।
এরপর ২০১৮ সালে সংসদ নির্বাচনের কারণে হালনাগাদ না হলেও ২০১৯ সালে ফের বাড়ি বাড়ি গিয়ে এই কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়, যার চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয় ২০২০ সালে। এই হিসেবে ২০১৭ সালের ১ জানুয়ারির পর এবং ২০১৯ সালের হালনাগাদের আগে তালিকায় অন্তর্ভুক্ত অন্তত ৩৩ লাখ ভোটারের দশ আঙুলের ছাপ ও চোখের আইরিশের প্রতিচ্ছবি নেবে ইসি।
বাংলাদেশ সময়: ২১১২ ঘণ্টা, মার্চ ২৮, ২০২৩
ইইউডি/এমজেএফ