সিলেট: সিলেটে সিটি করপোরেশন নির্বাচন আসন্ন। মেয়র পদে এ যাবত আট জন মনোনয়ন সংগ্রহ করেছেন।
সিসিকের মসনদে থাকা আরিফুল হক চৌধুরী রহস্য জিইয়ে রেখেছেন এতদিন। সিটি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগের দিন ২ এপ্রিল হঠাৎ লন্ডন সফরে যান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। যুক্তরাজ্য সফরকালে তিনি বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে দেখা করেন। দেশে ফিরে তিনি প্রার্থিতার বিষয়ে কোনো কিছু পরিষ্কার করেননি। কেবল ২০ তারিখে রেজিস্ট্রারি মাঠে সমাবেশে নিজের অবস্থান জানান দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
তবে কী জানাবেন? নির্বাচন থেকে রণেভঙ্গ দেবেন, নাকি দলের সিদ্ধান্তে অটল থেকে মেয়াদকালে নগরের উন্নয়নে সরকারের অসহযোগিতার কথা তুলে ধরবেন? এমন নানা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে সাধারণ মানুষের মনে।
অবশ্য আজকের নাগরিক সমাবেশে তিনি দল কিংবা নির্বাচন-এই দুটির একটিকে বেছে নেবেন। নির্বাচনে অংশ নিলে আরিফুল হক চৌধুরীকে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্য নির্বাহী কমিটির সদস্যপদ ছাড়তে হবে। মোট কথা দলে তার অবস্থান টিকিয়ে রাখতে হলে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে হবে। দীর্ঘ এই জল্পনা-কল্পনার পরিসমাপ্তি ঘটবে আজ শনিবার (২০ মে) আরিফ তার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানানোর মধ্য দিয়ে। আর তা হলে সিলেটের ইতিহাসে দুই বারের বেশি কেউ মেয়র পদে থাকতে পারেন না, এই মিথ সত্য হতে পারে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের অধীনে সিটি করপোরেশন নির্বাচনে যাবে না বিএনপি। দলের এই নির্দেশনা মানতে তৃতীয়বারের মতো মেয়র প্রার্থী হচ্ছেন না আরিফুল হক চৌধুরীও। কেননা, মেয়র পদে প্রার্থী হলে বিজয় ছিনিয়ে নেওয়ার আশঙ্কা পোষণ করছেন তিনি। আর এটা হলে মসনদের পাশাপাশি দলের পদও হারাতে হতে পারে তাকে। তাছাড়া সিলেট বিএনপিতে গড়ে ওঠেছে আরিফ এন্ট্রি বলয়। নির্বাচনে দাঁড়ালে ওই বলয়ও তাকে ডুবাতে সচেষ্ট থাকবে।
আরিফের ঘনিষ্ট বিএনপির একাধিক নেতা জানিয়েছেন, ভোটের আগে সমীকরণ মেলাচ্ছেন আরিফ। তার এই হিসাবের মধ্যে দলের বিরোধিতা করে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলে বিএনপির রাজনীতিতে পুনরায় ফিরতে পারবেন কি না। প্রশাসন নিরপেক্ষ থাকবে কি না, বিএনপি নির্বাচনে না আসায় আরিফ বলয়ের দলীয় নেতা-কর্মীরা প্রকাশ্যে অংশ নিতে পারবেন না। নির্বাচনে তারা এজেন্টের দায়িত্বও পালন করতে পারবেন না। এতে ৪২টি ওয়ার্ডের মোট ১৯০টি কেন্দ্রে বিশ্বস্ত এজেন্ট পাওয়া যাবে কি না এবং ইভেএমে সুষ্ট’ ভোট হবে কি না।
তাছাড়া দলের চেয়ারপার্সন তারেক রহমানের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক নেই আরিফের। ফলে দলে ভালো পদ পাওয়ার সম্ভাবনাও ক্ষীণ। আর সিলেট নগরে আরিফুল হকের যথেষ্ট জনপ্রিয়তা আছে মনে করেন নেতাকর্মীরা।
এর আগে গত পহেলা মে দিবসের নগরের রেজিস্ট্রারি মে এক সমাবেশে প্রার্থী হওয়ার ইঙ্গিত দিয়ে মেয়র আরিফ বলেন, সারা দেশে বিএনপি নির্বাচনে না গেলেও সিলেটের প্রেক্ষাপট ভিন্ন। সিলেটে আমরা নির্বাচনে যাবো। ২০ মে জনসভা করে বিস্তারিত ব্যাখ্যা করবেন তিনি। আরিফের এই বক্তব্যে ফের শুরু হয় তোলপাড়।
নির্বাচনে প্রার্থিতার বিষয়ে আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, এখনই নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। আর নির্বাচনে দাঁড়ালে এজেন্ট দিতে গেলে তাদেরও বাড়িঘরে গিয়ে হয়রানি এমনকি গ্রেফতার করা হবে। ইভিএম পদ্ধতির সঙ্গে জনগণ এখনো অভ্যস্থ নয় এবং ইভিএম পদ্ধতিতে ভোটের ফলাফল পাল্টে দিয়ে অল্পভোটে ফেল দেখানো হতে পার, এমনও আশঙ্কও করছেন।
আর বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলন করে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন সিসিকের চার নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর বিএনপি নেতা রেজাউল হাসান লোদী (কয়েস লোদী)। সেই সঙ্গে দলের সব নেতাকর্মীদের এই নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। যেকারণে নির্বাচন না করার চাপ চলে এসেছে আরিফুল হকের ওপর।
যদিও মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, তার ওপর কোনো চাপ নেই। দল সিদ্ধান্ত নিয়েছে, বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে যাবে না। নির্বাচন করতে হলে দলের আদর্শ থেকে সরে আসতে হবে। আর দল করতে হলে নির্বাচন ত্যাগ করতে হবে। কী করবো তিনি সে বিষয় আজ নগরবাসীর সামনে জানাবেল বলেও জানান আরিফুল হক চৌধুরী।
কমিশনের ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, ২৩ মে এই নির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন। মনোনয়নপত্র বাছাই ২৫ মে ও প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ১ জুন। আগামী ২১ জুন ইভিএমে সিলেট সিটি করপোরেশনে ভোট হবে।
বাংলাদেশ সময়: ০৭২২ ঘণ্টা, মে ২০, ২০২৩
এনইউ/এএটি