ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

নির্বাচন ও ইসি

গাজীপুর সিটি নির্বাচন

ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে সহিংস অবস্থানে জাহাঙ্গীরের সমর্থকরা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০২১ ঘণ্টা, মে ২৫, ২০২৩
ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে সহিংস অবস্থানে জাহাঙ্গীরের সমর্থকরা

গাজীপুর থেকে: রাত পোহালেই ভোট। গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন (গাসিক) নির্বাচন-২০২৩।

এরই মধ্যে ভোগ গ্রহণের জন্য ভোট কেন্দ্রগুলোতে প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ভোট কেন্দ্রের নিরাপত্তায় ইতোমধ্যে মাঠ পর্যায়ে দায়িত্ব পালনের প্রস্তুতি নিয়েছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। নির্বাচনকে ঘিরে ভোটারদের মধ্যেও অনেক উৎসাহ-উদ্দীপনা রয়েছে।  

এদিকে পাড়া মহল্লায় স্থাপিত অস্থায়ী নির্বাচনী অফিসগুলো থেকে জনমানুষের মধ্যে ভোটার স্লিপ বিতরণ করছেন নির্বাচনে অংশ নেওয়া মেয়র-কাউন্সিলরদের কর্মীরা।

ইসি সূত্রে জানা গেছে, গাসিক নির্বাচনে ৪৮০টি ভোট কেন্দ্রের মধ্যে ৩৫১টিই ঝুঁকিপূর্ণ। এসব কেন্দ্রে সহিংসতার আশঙ্কা রয়েছে। তালিকা অনুযায়ী ঝুঁকিপূর্ণ এসব কেন্দ্রে অতিরিক্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন রাখা হবে। এছাড়া বাকি ১২৯টি ভোটকেন্দ্রকে সাধারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে।  

নির্বাচনে মেয়র পদে ৮ জন, সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর পদে ৭৯ জন এবং সাধারণ আসনের কাউন্সিলর পদে ২৪৬ জনসহ মোট ৩৩৩ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তাদের মধ্যে মেয়র পদে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খান নৌকা, স্বস্তন্ত্র জায়েদা খাতুন টেবিল ঘড়ি, সরকার শাহানুর ইসলাম রনি হাতি, হারুন অর রশিদ  ঘোড়া, গণফ্রন্টের আতিকুল ইসলাম মাছ, জাপার এম এম নিয়াজ উদ্দিন লাঙ্গল, ইসলামী আন্দোলনের গাজী আতাউর রহমান হাতপাখা, জাকের পার্টির রাজু আহম্মেদ গোলাপ ফুল প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সূত্রে জানা গেছে, ঝুঁকিপূর্ণ ৩৫১টি ভোট কেন্দ্রে সহিংসতা হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এসব কেন্দ্রে ভোটাররা যেতে উৎসাহ পাচ্ছেন অনেকটাই কম। মেয়র ও কাউন্সিলর পদপ্রার্থীদের কর্মীরা সহিংস পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারেন। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সতর্ক রয়েছে।  

গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের (জিএমপি) উপ-কমিশনার (ডিসি- ক্রাইম অ্যান্ড অপস) আবু তোয়াব মো. শামসুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, নির্বাচনে যেসব কেন্দ্র গুরুত্বপূর্ণ (ঝুঁকিপূর্ণ) রয়েছে সেগুলোতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন থাকবে। ভোট কেন্দ্রের বাইরে বা ভেতরে কেউ যদি কোনো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে তবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

গাজীপুরের স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, জাহাঙ্গীর আলম গতবার মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন। কিন্তু তিনি একজন বিতর্কিত মানুষ। তিনি গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। কিন্তু মেয়র থাকাকালীন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে কটূক্তি করেছেন। এ ছাড়াও দলেন বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত না মানা ও মেয়র থাকাকালীন তার লাগামহীন দুর্নীতির অভিযোগে তাকে আওয়ামী লীগ থেকে স্থায়ী (আজীবন) বহিষ্কার করা হয়েছে। এ বছর নির্বাচনে মেয়র পদে জাহাঙ্গীর আলম থাকতে না পারলেও তার মা জায়েদা খাতুন টেবিলঘড়ি প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে লড়ছেন। সব মিলিয়ে এবার নির্বাচনে জাহাঙ্গীর আলমের সমর্থকরা অনেকটাই সক্রিয়। তারা বিভিন্ন কেন্দ্রে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে পারেন। সাবেক মেয়রের পক্ষের লোকেরা ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলোতে সহিংসতা সৃষ্টি করতে পারেন।

৫৭ নম্বর ওয়ার্ডের ভোটার আফজাল বাংলানিউজকে বলেন, মেয়র পদপ্রার্থী আজমত উল্লা খান একজন প্রবীণ রাজনীতিবিদ। তিনি একজন শিক্ষিত ও ভদ্র মানুষ। এর আগে তিনি পরপর তিনবার টঙ্গী পৌরসভার চেয়ারম্যান ছিলেন। ওই সময় তিনি টঙ্গীর অনেক উন্নয়নমূলক কাজ করেছেন। এদিকে জাহাঙ্গীর আলমকে নিয়ে বিতর্ক থাকলেও তারা মা ক্লিন ইমেজের মানুষ। আমরা চাই গাজীপুরের যিনি মেয়র হবেন, তিনি যেন জনগণের জন্য কাজ করেন।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একটি সূত্র জানায়, মাঠ পর্যায়ের তথ্য অনুযায়ী যারা নির্বাচন কেন্দ্রীক সহিংসতা ও নাশকতা সৃষ্টি করতে পারে তাদের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। তালিকা অনুযায়ী সবাইকে নজদারি করা হচ্ছে। মেয়র পদপ্রার্থীদের কর্মীদের মধ্যে সহিংসতা হতে পারে বলে আমরা আশঙ্কা করছি। তবে যেকোনো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আমরা সতর্ক রয়েছি।

নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে নিয়োজিত থাকছে পর্যাপ্ত সংখ্যক পুলিশ, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) ৩২ প্লাটুন, স্টাইকিং ফোর্স হিসেবে র‌্যাবের ৩২টি টিম, পর্যাপ্ত আনসারসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা। তারা নির্বাচনে বিশৃঙ্খলা মোকাবিলায় নিয়োজিত থাকবে। সেই সঙ গোয়েন্দা বিভাগের সদস্যরা সাদা পোশাকে বিভিন্ন স্থানে নিয়োজিত থাকবে।

র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বাংলানিউজকে বলেন, নির্বাচন কমিশনের চাহিদা অনুযায়ী র‌্যাব সদস্য মোতায়েন থাকবে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে। আমরা মূলত অন্যান্য বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে নিয়োজিত থাকছে।

পাশাপাশি সাইবার ওয়ার্ল্ডেও র‌্যাবের নজরদারি অব্যহত থাকবে। যাতে কেউ বা কোনো গোষ্ঠী কোনো প্রকার গুজব ছড়াতে না পারে- যোগ করেন তিনি।  

বৃহস্পতিবার (২৫ মে) গাসিক নির্বাচনের ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এ নির্বাচনে মেয়র পদে ৮ জন, সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর পদে ৭৯ জন এবং সাধারণ আসনের কাউন্সিলর পদে ২৪৬ জনসহ মোট ৩৩৩ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এছাড়া ১৫ নং ওয়ার্ডে সাধারণ আসনে কাউন্সিলর পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় একজন নির্বাচিত হয়েছেন।

নির্বাচনে ৫৭টি ওয়ার্ডে ৪৮০টি ভোটকেন্দ্রে ৩ হাজার ৪৯৭টি ভোট কক্ষ থাকবে। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী গাজীপুর সিটি করপোরেশনে মোট ভোটার সংখ্যা ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৬৩ জন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৪৭ জন এবং মহিলা ভোটার ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৮ জন। আর হিজড়া ভোটার ১৮ জন।

এ নির্বাচনে ৪৮০ জন প্রিজাইডিং অফিসার, ৩ হাজার ৪৯৭ জন সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার ও ৬ হাজার ৯৯৪ জন পোলিং অফিসারসহ ১০ হাজার ৯৭১ জন ভোট গ্রহণকারী কর্মকর্তা থাকবেন।

বাংলাদেশ সময়: ০০২১ ঘণ্টা, মে ২৫, ২০২৩
এসজেএ/এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।