বরিশাল: প্রচার-প্রচারণার শেষ দিনে ৩০ দফা নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছেন বরিশাল সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও বিএনপি নেতা প্রয়াত আহসান হাবিব কামালের ছেলে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী কামরুল আহসান রুপন।
শনিবার (১০ জুন) দুপুরে শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত বরিশাল প্রেসক্লাবে আয়োজিত ওই ইশতেহার অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে রুপন বলেন, একই পরিবারের অনেকে কমিটিতে থাকলে সব থেকে বেশি সমালোচনা হয়।
বহিষ্কার কেন করা হয়েছে এমন প্রশ্ন তুলে এটার পেছনেও রহস্য আছে উল্লেখ করে রুপন বলেন, বিএনপির অনেক বড় বড় নেতা আওয়ামী লীগের কাছ থেকে অর্থের বিনিময়ে কাজ করছেন। জাতীয় পার্টির সঙ্গেও অর্থের বিনিময়ে কাজ করছেন। আমার বাবা বিএনপির জন্মলগ্ন থেকে এ শহরে যুবদল থেকে শুরু করে মহানগর ও জেলা বিএনপির সভাপতি ছিলেন, তিনি মেয়র ছিলেন। বিএনপি পরিবারেই আমার জন্ম এখানে দ্বিধাবিভক্তি বা ভাগ করার কিছু নেই, যে আমি বাইরের কেউ এবং বিএনপি পরিবারের সন্তান না।
রুপন বলেন, আমি তো আর বলতে পারি না ধানের শীষে ভোট দিয়েছেন যারা নৌকায় ভোট দেবেন তারা। এটা কি কোনো পাগলেও ভোট দেবে। যারা বিএনপিকে ভালোবাসে, তারা কখনো হাতপাখা বলেন, লাঙল বলেন, নৌকা বলেন, তারা ভোট দেবে না।
বিএনপির যারা নির্বাচনে রয়েছেন ২০ থেকে ২২ (সাধারণ ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে) জন, তাদের সঙ্গে সমন্বয় রয়েছে জানিয়ে রুপনের মতে তাদের যারা ভোট দেবেন। তারা তাকেও ভোট দেবেন।
বিএনপির নেতাকর্মীরা নৌকা ও জাতীয় পার্টির সমর্থনে কাজ করছে বলে এমন অভিযোগের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে রুপন বলেন, আওয়ামী লীগের যিনি প্রার্থী রয়েছেন তার শ্বশুর বাড়ি নগরের ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে। বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির বরিশাল বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট বিলকিস জাহান শিরীনের বাবার বাড়ি আর তার (নৌকার প্রার্থীর) শ্বশুর বাড়ি পাশাপাশি এবং সম্পর্কে তার দুলা ভাই। অনেক অডিও এবং কল রেকর্ড আছে তিনি (বিলকিস জাহান শিরীন) সরাসরি তার দুলা ভাইয়ের পক্ষে ভোট চাচ্ছেন। এছাড়া তার ভাই ফেসবুকে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর পক্ষে বিভিন্ন ধরনের পোস্টও দিচ্ছেন।
এ সময় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক নৌকার পক্ষে শতভাগ কাজ করছেন বলেও জোড়ালো অভিযোগ তোলেন রুপন।
কারও ইন্ধনে আপনি প্রার্থী হয়েছেন সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে রুপন বলেন, আমি তো মনে করেছিলাম আমার প্রধান প্রতিপক্ষ হবেন সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ সাহেব। কিন্তু আমার দুর্ভাগ্য তাকে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী হিসেবে পায়নি।
আমার ওপর অন্যায় অত্যাচার কম করেনি জানিয়ে রুপন বলেন, এখন উনি হাতপাখার পক্ষে কাজ করছেন, তাহলে আমার পক্ষে কীভাবে কাজ করবেন।
রুপন বলেন, বরিশালের মানুষ বিশ্বাস করে একটি বিপ্লবের মাধ্যমে সরকারের পরিবর্তন হবে। তারা বিশ্বাস করে আমার দল জাতীয়তাবাদী দল সামনে ক্ষমতায় আসবে। সেই বিশ্বাস রেখেই আমাকে মানুষ ভোট দেবে।
কোনো রক্তচক্ষুর ভয়ে নির্বাচনের প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সরে দাঁড়াবেন জানিয়ে রুপন বলেন, একটি কারণ আমি সব সময় বলেছি। আমাকে যদি মেরে ফেলা হয় তাহলে আমি নির্বাচনের মাঠে থাকতে পারবো না।
সুষ্ঠু ভোট হলে ফলাফল মেনে নেবেন জানিয়ে রুপন বলেন, যে দেশে দিনের ভোট রাতে হয় সেই ফলাফল চাপিয়ে দেওয়া হয়। সেটা মেনে নেবেন না।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির বরিশাল বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট বিলকিস জাহান শিরীন তার বিরুদ্ধে অভিযোগে বিষয়ে বাংলানিউজকে বলেন, ৪০ থেকে ৪৫ বছর ধরে আমি বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। একটি অসুস্থ, রুচিহীন ছেলে কি বললো সেটি শোনার ইচ্ছে নেই। তিনি দলের সিদ্ধান্তে বহিষ্কার হয়েছেন।
তিনি বলেন, এ ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে বিএনপি নেতা মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ-বীর বিক্রম, শাহজাহান ওমর-বীর উত্তম, সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুর রহমান বিশ্বাস, সরফুদ্দিন আহমেদ সান্টু, নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আফজালুল করিমসহ অনেকের বাসা রয়েছে। কিন্তু এ এলাকায় যারা বিয়ে করবে তারা কি আমার আত্মীয় হয়ে যাবে। ৩৫ বছর আগের বিয়ের দায়িত্বও কি আমার।
তিনি আরও বলেন, বিএনপির রাজনীতির প্রতি আমার সততা, দল ও শহীদ জিয়ার পরিবারের প্রতি আমার আনুগত্য ওরা সহ্য করতে পারছে না। ওর বাবারাও কখনও আমার কিছু করতে পারেননি।
বাংলাদেশ সময়: ১৯১২ ঘণ্টা, জুন ১০, ২০২৩
এমএস/আরআইএস