ঢাকা: রোহিঙ্গাদের কারণে এবার চট্টগ্রাম অঞ্চলের প্রবাসীদেরও জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) নিতে বেগ পেতে হবে। এক্ষেত্রে বিশেষ কমিটি সুপারিশ পেলেই কেবল সহজ হবে এ পরিচিতি কার্ড প্রাপ্তি।
ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, রোহিঙ্গারা সমতলে ছড়িয়ে পড়ায় চট্টগ্রাম অঞ্চলের ৩২টি এলাকাকে নির্বাচন কমিশন ২০১৯ সালে বিশেষ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করেছে। এক্ষেত্রে দেশে বসবাসরত ওইসব এলাকার নাগরিককে এনআইডি পেতে বা ভোটার হওয়ার জন্য বিশেষ ফরম পূরণ করতে হয়। এতে দিতে হয় বাড়তি বেশি কিছু তথ্য। পরে যা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নেতৃত্বে গঠিত বিশেষ কমিটির যাচাইয়ে সত্যতা মিললে অনুমোদন দেওয়া হয়। এতে এ অঞ্চলের নাগরিকদের ভোটার হতে বা এনআইডি পেতে অপেক্ষাকৃত বেশি সময় লাগে। এবার প্রবাসে বসে এ অঞ্চলের যারা আবেদন করছেন, তাদেরও সেবাপ্রাপ্তিতে বিলম্ব হবে।
জানা গেছে, ইতিপূর্বে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর অনেকে অবৈধ যোগসাজশের মাধ্যমে পাসপোর্ট নিয়ে মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে গিয়ে অপকর্ম করে ধরা পড়ছেন বাংলাদেশি নাগরিক হিসেবে। এতে দেশের সুনাম ক্ষুণ্ন হচ্ছে। তাই প্রবাসে থেকেও যেন কোনো রোহিঙ্গা এনআইডি নিতে না পারে, সেজন্য বিশেষ কমিটির অনুমোদন পেতে হবে।
তবে বিশেষ কমিটিকে যাচাই বাছাইয়ের কাজটি দ্রুত সম্পন্ন করা জন্য কক্সবাজার, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান, চট্টগ্রাম ও রাঙামাটির জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারদের নির্দেশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের পরিচালক (নিবন্ধন ও প্রবাসী) মো. আব্দুল মমিন সরকার নির্দেশনাটি পাঠিয়েছেন।
নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ভোটার নিবন্ধন ও জাতীয় পরিচয়পত্র দিতে প্রবাসে বসবাসরত বাংলাদেশিদের দীর্ঘদিনের দাবি। দেশে টাকা পাঠানো, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা, ওয়েজ ওয়ার্নার বন্ড, বাংলাদেশে বিনিয়োগসহ অনেক ক্ষেত্রে প্রবাসে বসবাসরত বাংলাদেশিদের জাতীয় পরিচয়পত্র প্রয়োজন হয়। নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত মোতাবেক জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনু বিভাগের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে সংযুক্ত আরব আমিরাতে ভোটার নিবন্ধন ও জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়ার কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
আবুধাবি দূতাবাস ও দুবাই কনস্যুলেটে এ পর্যন্ত এক হাজার ৫২৪ জনের বায়োমেট্রিক গ্রহণ করা হয়েছে। ভোটারদের নিবন্ধন ফরম-২ (ক) তে প্রদত্ত বাংলাদেশের বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানায় সংশ্লিষ্ট উপজেলা/থানা নির্বাচন অফিসার/রেজিস্ট্রেশন অফিসার কর্তৃক তদন্ত সম্পন্ন করে ভোটারযোগ্য নাগরিকদের নির্ধারিত প্রক্রিয়া সম্পাদন করে জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়া হচ্ছে। তদন্ত কার্যক্রমে বিলম্ব হলে প্রবাসীদের জাতীয় পরিচয়পত্র দিতেও বিলম্ব হয়।
রোহিঙ্গা সমস্যার কারণে নির্বাচন কমিশন কর্তৃক চট্টগ্রাম অঞ্চলের ৩২টি উপজেলা/থানাকে বিশেষ এলাকা ঘোষণা করা হয়েছে।
ওই ৩২টি উপজেলা/থানার ভোটারযোগ্য ব্যক্তিদের নিবন্ধনের জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নেতৃত্বে ‘বিশেষ কমিটি’ গঠন করা হয়েছে। ওই কমিটির যাচাই-বাছাই এবং সুপারিশ প্রাপ্তির পর সংশ্লিষ্ট এলাকার ভোটার নিবন্ধন সম্পন্ন হয়।
এ অবস্থায় সংযুক্ত আরব আমিরাতে বসবাসরত চট্টগ্রাম অঞ্চলের বিশেষ এলাকাভুক্ত ৩২টি উপজেলা/থানার বাংলাদেশি নাগরিকদের জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়ার জন্য ভোটার নিবন্ধনের আবেদনগুলোর তদন্ত এবং বিশেষ কমিটির যাচাই-বাছাই কার্যক্রম দ্রুততম সময়ে সম্পাদন আবশ্যক।
নির্বাচন কমিশনের এ মহতী উদ্যোগকে সফলভাবে বাস্তবায়নের অংশীজন হিসেবে এ সংক্রান্ত বিশেষ কমিটির কার্যক্রম দ্রুততম সময়ে সম্পাদনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ করছি।
বিশেষ কমিটির সদস্যরা হলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, সহকারী কমিশনার (ভূমি) ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) (তার অবর্তমানে এসআই/এএসআই পদমর্যাদার নিচে নয়), উপজেলা আনসার ও ভিডিপি কর্মকর্তা, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রতিনিধি (কর্মকর্তার নিচে নয়), বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের প্রতিনিধি (কর্মকর্তার নিচে নয়), প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধি (কর্মকর্তার নিচে নয়), জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধি (কর্মকর্তার নিচে নয়), স্পেশাল ব্রাঞ্চ এর প্রতিনিধি (কর্মকর্তার নিচে নয়), পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের প্রতিনিধি (পার্বত্য জেলার ক্ষেত্রে), হেড ম্যান (পার্বত্য জেলার ক্ষেত্রে), কারবারী (পার্বত্য জেলার ক্ষেত্রে), সংশ্লিষ্ট পৌরসভার মেয়র অথবা প্যানেল মেয়র, ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান অথবা প্যানেল চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাচন অফিসার (সংশ্লিষ্ট উপজেলা)।
বিশেষ যা যাচাই করবে:
ভাই/বোনের ডাটাবেইজে বাবা/মায়ের নামের সঙ্গে আবেদনকারীর ফরম-১ এ উল্লেখিত বাবা/মাতার নামের মিলিয়ে দেখবে।
চাচা/ফুফুর ডাটাবেজে তাদের বাবার নাম ও ঠিকানার সঙ্গে আবেদনকারীর বিশেষ তথ্য ফরমে প্রদত্ত পিতামহের নাম ও ঠিকানার মিল দেখবে।
প্রয়োজনে নিকট আত্মীয়ের মোবাইল নম্বরে কথা বলে তাদের পরিচিতি/তথ্য সম্পর্কিত বিষয়ে নিশ্চিত হবে।
এছাড়াও ভোটার তালিকা আইন, ২০০৯ অনুযায়ী ভোটার হতে ইচ্ছুক উপযুক্ত ব্যক্তিকে বাংলাদেশের কোথাও ‘সচরাচর নিবাসী’ হতে হবে।
নির্বাচন কমিশন কর্তৃক জারিকৃত পরিপত্রে ওই জেলাসমূহে যদি কেউ সচরাচর নিবাসের দাবি করে তবে সেই দাবির যথার্থতা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে অনুসন্ধান করতে হবে। শুধু একটি নিবাসের ঠিকানাই এ জন্য যথেষ্ট হবে না। নিবাসের প্রমাণস্বরূপ তাকে এ সংক্রান্তপ্রণীত অতিরিক্ত তথ্য সংগ্রহ ফরম অনুযায়ী সব তথ্য দেওয়া হবে।
সংশ্লিষ্ট জেলাগুলোতে কোনো ব্যক্তি নিজস্ব সম্পত্তির সূত্রে তালিকাভুক্তির দাবি করে তবে তাদের সম্পত্তির মালিকানা ও এ সংক্রান্ত অন্যান্য তথ্য সংশ্লিষ্ট দলিলাদির তথ্য দিতে হবে।
যারা বাংলাদেশি কোনো নাগরিকের সঙ্গে বৈবাহিক সূত্রে ভোটার তালিকাভুক্তির দাবি করবেন তাদের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক জারিকৃত নাগরিক সনদপত্রসহ দলিলাদির তথ্য সংগ্রহকারীকে দিতে হবে।
অন্য কোনো সূত্রে কেউ ভোটার হওয়ার উপযুক্ত দাবি করলে তাদের এ সম্পর্কিত প্রমাণাদি তথ্য সংগ্রহকারীকে দিতে হবে।
নির্বাচন কমিশন সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রবাসী বাংলাদেশি আছে এমন ৪০টি দেশে দূতাবাসের মাধ্যমে এনআইডি কার্যক্রম হাতে নিতে চায়।
বাংলাদেশ সময়: ২১৩০ ঘণ্টা, জুলাই ২০, ২০২৩
ইইউডি/আরআইএস