ঢাকা: একাদশ জাতীয় সংসদের দুজন সংসদ সদস্য (এমপি) মৃত্যুবরণ করায় তাদের আসনে উপ-নির্বাচন নিয়ে জটিলতা দেখছেন সংশ্লিষ্টরা।
ইসি কর্মকর্তারা বলছেন, আইনে কোনো বাধা আপাতত দৃষ্টিতে না থাকলেও নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল হলে নির্বাচন ব্যবস্থাপনায় কিছু জটিলতা দেখা দিতে পারে।
শনিবার (৩০ সেপ্টেম্বর) ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে স্বতন্ত্র থেকে নির্বাচিত এমপি আব্দুস সাত্তার ভূঞা এবং লক্ষ্মীপুর-৩ আসনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচিত এমপি একেএম শাহজাহান কামাল মৃত্যুবরণ করেন। সংবিধান অনুযায়ী, জাতীয় সংসদের কোনো আসন শূন্য হওয়ার পরবর্তী নব্বই দিনের মধ্যে নির্বাচন কমিশনকে উপ-নির্বাচন সম্পন্ন করতে হয়।
৩০ সেপ্টেম্বর আসন শূন্য হওয়ার তারিখ হিসেবে এই দুই আসনে উপ-নির্বাচন সম্পন্ন করতে হবে ২৮ ডিসেম্বরের মধ্যে।
এদিকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় গণনা শুরু হবে আগামী ২ নভেম্বর। এদিন আসন ভিত্তিক ৩০০ সংসদীয় আসনগুলোর ভোটার তালিকাও প্রকাশ করা হবে। আর এর পরবর্তী এক সপ্তাহের মধ্যেই ঘোষণা করা হতে পারে নির্বাচনের তফসিল।
ইসি কর্মকর্তারা বলছেন, একটি উপ-নির্বাচন সম্পন্ন করতে ৪০ দিনের মতো সময়ের প্রয়োজন হয়। এখনো আসন শূন্য ঘোষণার গেজেট প্রকাশ হয়নি। এরপরেই সংসদ সচিবালয় প্রকাশিত গেজেটের ভিত্তিতে ভোটের তারিখ দিতে হবে ইসিকে। এক্ষেত্রে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা পূর্বে ৪০ দিন সময় হাতে পাওয়া নিয়ে সংশয় থেকে যাচ্ছে।
আবার স্থানীয় সরকার নির্বাচন আইন অনুযায়ী, কোনো নির্বাচিত স্থানীয় সরকারের কোনো পদ শূন্য হলে সেই স্থানীয় সরকারের মেয়াদ পূর্তির আগের নব্বই দিনের মধ্যে উপ-নির্বাচন করা যায় না। তবে সংসদ নির্বাচনের ক্ষেত্রে এমন কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। অর্থাৎ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল হওয়ার পরেও ভোটের তারিখ রাখতে না পারার বিষয়ে আইনে স্পষ্ট করে কিছু বলা নেই।
এ নিয়ে ইসির নির্বাচন ব্যবস্থাপনা শাখার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলছেন, প্রথমে আসন শূন্য হওয়ার গেজেট প্রকাশ হতে হবে। এরপর ইসি সচিবালয় থেকে নির্বাচনের সকল বিষয় উল্লেখ কমিশনের কাছে নথি উত্থাপন করা হবে। কমিশন বৈঠকে বিস্তর আলোচনার পর নির্বাচন হবে কি হবে না সে সিদ্ধান্ত হবে।
উকিল আব্দুস সাত্তার ভূঞা ১৯৭৯ সালে তৎকালীন কুমিল্লা-১ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ও জুনের নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০১ সালের নির্বাচনে তৎকালীন ৪ দলীয় জোট সরকার থেকে টেকনোক্রেট হিসেবে আবদুস সাত্তার আইন, মৎস্য ও ভূমি মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বও পালন পান। তবে ২০০৮ সালের নির্বাচনের পরে রাজনৈতিক কার্যক্রম থেকে তিনি নিষ্ক্রিয় ছিলেন। ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি আবারও ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে বিএনপির মনোনীত সংসদ সদস্য হিসেবে জয়লাভ করেন। ২০২৩ সালের ২ জানুয়ারি তাকে বিএনপি থেকে বহিষ্কার করা হলে উপ-নির্বাচনে স্বতন্ত্র থেকে জয়লাভ করে ফের সংসদে আসেন তিনি।
অন্যদিকে বীর মুক্তযোদ্ধা একেএম শাহজাহান কামাল ১৯৭৩ সালে প্রথম সংসদে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
২০১১ সালে তিনি লক্ষ্মীপুর জেলা পরিষদের প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরে ২০১৪ ও ২০১৮ সালে সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
দুজন এমপিই শনিবার ভোররাতে রাজধানীর একটি হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৩২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৩০, ২০২৩
ইইউডি/এমজেএফ