নরসিংদী: ‘কোনো স্বতন্ত্র মতন্ত্র আমরা চিনি না, মাইরের ওপর কোনো ওষুধ নাই’-এমন বক্তব্য দিয়ে নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটির কাছে শোকজ নোটিশ (কারণ দর্শানোর নোটিশ) খেয়েছেন নরসিংদী জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আহসানুল ইসলাম রিমন।
বৃহস্পতিবার (৩০ নভেম্বর) রাতে তাকে শোকজ নোটিশ দেন নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটির সদস্য নরসিংদীর যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ নাহিদুর রহমান নাহিদ।
রিমন আরও বলেছিলেন, ‘ছাত্রলীগের কোনো পোলাপান স্বতন্ত্ররে মানতো না। স্বতন্ত্ররে কেমনে পিডাইতে অয়, হে অই দেহাইসে, হেরে আমরা এমনেই পিডামু। এ শহরের, এ সদরের কোনো এলাকায় তাদের (স্বতন্ত্র প্রার্থী) কোনো জায়গা দেওয়া যাবে না। তারা নৌকার বিরোধী, মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী, তারা দেশবিরোধী। ’
রিমনের এমন বক্তব্য মুহূর্তেই ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে।
কারণ দর্শানোর নোটিশে বলা হয়েছে, গত ২৯ নভেম্বর বুধবার দুপুরে নরসিংদী ক্লাবে অনুষ্ঠিত নরসিংদী-১–এর আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মোহাম্মদ নজরুল ইসলামের মতবিনিময় সভায় নির্ধারিত ভাষণে আহসানুল বলেছেন, ‘ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা কোনো স্বতন্ত্র-মতন্ত্র চিনে না। মাইরের ওপর কোনো ওষুধ নাই। পোলাপাইনও জানে কীভাবে পিটাইতে হয়। কোনো স্বতন্ত্র-মতন্ত্র ছাত্রলীগ মানে না। স্বতন্ত্র প্রার্থীকে কীভাবে পিটাইতে হয় হে ওই আমগরে শিখাইছে, হেরে আমরা হেমনেই পিটাইমু। এই আসনের কোনো এলাকায় তাঁদের জায়গা দেওয়া যাবে না। ’ এই বক্তব্য প্রথম আলোর পত্রিকার অনলাইনে প্রকাশিত হয়। এমন বক্তব্য গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২ এবং সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালার লঙ্ঘন। আইন ভঙ্গের কারণে কেন আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, নোটিশপ্রাপ্তির ২৪ ঘণ্টার মধ্যে লিখিত ব্যাখ্যা দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হলো।
বুধবার (২৯ নভেম্বর) দুপুরে আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নরসিংদী-১ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য পদে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ও বর্তমান সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম হিরুর পক্ষে নরসিংদী ক্লাব লিমিটেড আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় এমন বক্তব্য দেন রিমন।
জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি জিএম তালেব হোসেনের সভাপতিত্বে সভায় উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী নজরুল ইসলাম হিরু, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মনির হোসেন ভুইয়া, নরসিংদী সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আফতাব উদ্দিন ভুইয়া, বীরমুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মোতালিব পাঠান, আওয়ামী লীগ নেতা আমিরুল ইসলাম ভুইয়া, মোন্তাজ উদ্দিন ভুইয়া, এস এম কাইয়ুমসহ আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনগুলোর নেতৃবৃন্দ।
জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আহসানুল ইসলাম রিমন সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমার বক্তব্য হচ্ছে, দলীয় যারা নৌকার বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী হবে, আমি মনে করি, তারা মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী, বঙ্গবন্ধুর আদর্শের বিরুদ্ধে তারা অবস্থান করছে। আমি তাদের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি দিয়েছি, আমার জেলা ছাত্রলীগ তাদের বাধাগ্রস্ত করবে। নৌকাকে পাস করানোর জন্য যা যা করা দরকার, তাই করব। প্রধানমন্ত্রী যে বলছেন, দলীয় লোক স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে পারবে এমন অথেনটিক কোনো নিউজ আমি দেখি নাই। ’
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জিএম তালেব হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি সভায় পরে গিয়েছি। এমন বক্তব্যের সময় আমি সেখানে উপস্থিত ছিলাম না। সভায় অনেকে অনেক বক্তব্য দিয়েছেন। আমরা লিডাররা গ্রহণযোগ্য বক্তব্য দিয়েছি, এখন পোলাপান মানুষ কোথায় কীভাবে বক্তব্য দিসে, সেটা উল্লেখ করে পত্রপত্রিকায় দেওয়া ঠিক না বলে আমি মনে করি। এমন বক্তব্য আমরা সমর্থন করি না। আমরা সমঝোতায় নির্বাচন করতে চাই। নৌকার জয় ঘটাব সবাইকে সঙ্গে নিয়ে। সবার প্রতি আহ্বান, সবাই যেন নৌকার মিছিলে আসে। নৌকাকে আক্রান্ত করে ডামি প্রার্থী বিজয় লাভ করুক, সেটা আমরাও চাই না, প্রধানমন্ত্রীও চান না। ’
এ বিষয়ে নরসিংদীর জেলা প্রশাসক ও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার ড. বদিউল আলম বলেন, ‘নির্বাচনী আচরণ পরের বিষয়, স্বাভাবিকভাবে কেউ কাউকে পেটানোর হুমকি দিলেই সেটা ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। তাকে হুমকি দেওয়া হয়েছে, তিনি যদি পুলিশে লিখিত অভিযোগ করেন, তাহলে পুলিশ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। ’
নরসিংদী সদর-১ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাজী মোহাম্মদ আলী ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, সাবেক পৌর মেয়র কামরুজ্জামান।
বাংলাদেশ সময়: ১৩১৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১, ২০২৩
এসআই