বগুড়া: আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে বগুড়ায় সাতটি নির্বাচনী আসনের মধ্যে চারটি আসনের মনোনয়নপত্র যাচাই বাছাই সম্পন্ন হয়েছে। এ আসনে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন মোট ৪৮ জন।
মনোনয়নপত্র যাচাই বাছাই করে আলোচিত ইউটিউবার আশরাফুল ইসলাম আলম ওরফে হিরো আলমসহ আটজনের মনোনয়নপত্র বাতিল ও সাতজনের মনোনয়ন স্থগিত করা হয়েছে।
রোববার (৩ ডিসেম্বর) বিকেলে রিটার্নিং অফিসার ও বগুড়ার জেলা প্রশাসক মো. সাইফুল ইসলাম জানান, স্থগিত হওয়া প্রার্থীরা তাদের তথ্য সংশোধন করার সুযোগ পাবেন।
জানা গেছে, বগুড়া-১ (সারিয়াকান্দি-সোনাতলা) আসনে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন মোট ১২ জন। তাদের মধ্যে স্বতন্ত্র এক প্রার্থীর মনোনয়নপত্র স্থগিত ও ন্যাশনাল পিপলস পার্টির(এনপিপি) প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল করা হয়েছে। স্বতন্ত্রপ্রার্থী শাহাজাদী আলম লিপি তার মনোনয়নপত্রের সঙ্গে কাস্টমসের মূসক রিটার্ন দাখিল না করায় এবং মূসকের ৭০ হাজার টাকা বকেয়া রাখায় তার প্রার্থীতা স্থগিত করেছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। এছাড়া এই আসনের এনপিপি প্রার্থী ইবনে সাফি বিন হাবীব ঋণখেলাপি হওয়ায় তার মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়।
বগুড়া-২ (শিবগঞ্জ) আসনে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন মোট ১০ জন। তাদের মধ্যে তৃণমূল বিএনপি প্রার্থী বজলুর রহমানের মনোনয়নপত্র স্থগিত ও ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) প্রার্থী ইউনুস আলীর মনোনয়ন বাতিল করা হয়েছে। কাস্টমস এর মূসক রিটার্ন দাখিল না করায় এবং মূসকের ৪০ হাজার টাকা বকেয়া রাখায় বজলুর রহমানের প্রার্থীতা স্থগিত করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। ইউনুস তার মনোনয়নপত্রে নিজেই প্রস্তাবক ও সমর্থক হিসেবে স্বাক্ষর করায় তার মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে।
বগুড়া-৩ (আদমদীঘি-দুপচাঁচিয়া) আসনে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন মোট ১৬ জন। তাদের মধ্যে তিনজনের মনোনয়নপত্র স্থগিত ও পাঁচজনের মনোনয়নপত্র বাতিল করেছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। স্বতন্ত্র প্রার্থী প্রজন্মলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ফেরদৌস স্বাধীন ফিরোজ, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির প্রার্থী আফরিনা পারভীন ও জাকের পার্টির গোলাম মোস্তফার মনোনয়নপত্র স্থগিত করা হয়। এর মধ্যে ফিরোজ ও আফরিনার মনোনয়নপত্রে সমর্থনকারীর স্বাক্ষর না থাকায় এবং গোলাম মোস্তফা তার সম্পদের বিবরণী দাখিল না করায় তার মনোনয়নপত্র স্থগিত করা হয়।
এছাড়া পাঁচ স্বতন্ত্র প্রার্থী যথাক্রমে জামিলুর রশিদ তালুকদার, এরশাদুল হক, আদমদীঘি উপজেলা আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক খান মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ আল মেহেদী, আফজাল হোসেন ও দুপচাঁচিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি অজয় কুমার সরকারের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। প্রথম চারজনের এক শতাংশ ভোটারের স্বাক্ষরে গরমিল থাকায় এবং অজয় কুমার সরকারের ক্রেডিট কার্ডের ঋণ পরিশোধ না করায় তার মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয় বলে জানিয়েছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা।
বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন মোট ১০ জন। তাদের মধ্যে যাচাই বাছাইকালে দুইজনের মনোনয়নপত্র স্থগিত এবং আলোচিত ইউটিউবার আশরাফুল ইসলাম আলম ওরফে হিরো আলমের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। যে দুইজনের মনোনয়নপত্র স্থগিত করা হয়েছে তারা হলেন- তৃণমূল বিএনপির জালাল উদ্দিন ও এনপিপি’র মনোয়ার জাহিদ। জালালের মনোনয়নপত্রে প্রস্তাবক ও সমর্থকের স্বাক্ষর না থাকায় এবং জাহিদের মনোনয়নপত্রে প্রস্তাবক ও সমর্থক একই ব্যক্তি হওয়ায় তাদের মনোনয়নপত্র স্থগিত করা হয়।
হিরো আলম দলীয় প্রার্থী হলেও তিনি মনোনয়নপত্রে দলের নাম উল্লেখ করেননি, হলফনামায় তার স্বাক্ষর নেই। এসব কারণে রিটার্নিং অফিসার তার মনোয়নপত্র বাতিল করেন। হিরো আলম বিষয়টিকে উকিলের (আইনজীবী) ভুল উল্লেখ করে বলেন, ‘রিটার্নিং অফিসার চাইলেই আজ এসব সংশোধন করে নিতে পারতেন।
হিরো আলম আপিল করবেন উল্লেখ করে বলেন, প্রয়োজনে হাইকোর্টে যাবো। হিরো আলম ভোটের মাঠে ছিল, ভোটের মাঠেই থাকবে।
মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই শেষে জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও বগুড়া জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম জানান, বাতিলকৃত প্রার্থীরা ৫ থেকে ৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনের কাছে আপিল করার সুযোগ পাবেন। তবে সেক্ষেত্রে সোমবার (০৪ ডিসেম্বর) পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। সোমবার বগুড়ার বাকি ৫, ৬ ও ৭ আসনের মনোনয়নপত্র যাচাই বাছাই হবে। যাচাইবাছাই শেষে সোমবার বিকেল ৪টার পর আমাদের রায়ের কপি নিয়ে নির্বাচন কমিশন বরাবর আপিল করতে হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৮২৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩, ২০২৩
কেইউএ/এসএম