ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

নির্বাচন ও ইসি

জাফর উল্লাহর চেয়ে পাঁচগুণ দামি গাড়িতে চড়েন স্ত্রী

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৫৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৭, ২০২৩
জাফর উল্লাহর চেয়ে পাঁচগুণ দামি গাড়িতে চড়েন স্ত্রী আ.লীগের প্রেসিডিয়াম মেম্বার কাজী জাফর উল্লাহ

ফরিদপুর: ফরিদপুর-৪ আসনে (ভাঙ্গা, সদরপুর ও চরভদ্রাসন) এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে নৌকার মাঝি হয়েছেন দলটির প্রেসিডিয়াম মেম্বার কাজী জাফর উল্লাহ।  

নির্বাচন কমিশনে দায়েরকৃত হলফনামায় আগেরবার ২০১৮ সালে কাজী জাফর উল্লাহ তার পেশা হিসেবে শিল্পপতি উল্লেখ করলেও এবার তার পেশা বদলে রাজনীতি বলে উল্লেখ করেছেন।

হলফনামায় দেখানো হয়েছে, কাজী জাফর উল্লাহর ১০ লাখ ৮১ হাজার ৫১১ টাকা মূল্যের গাড়ি ব্যবহার করেন আর তার স্ত্রীর নামে ৫৮ লাখ টাকা মূল্যের গাড়ি রয়েছে। অর্থাৎ জাফর উল্লাহর চেয়ে পাঁচগুণ দামি গাড়িতে চড়েন তার স্ত্রী।

আওয়ামী লীগের এই প্রভাবশালী প্রেসিডিয়াম মেম্বারের আয়ের বড় উৎস শেয়ার, সঞ্চয়পত্র ও ব্যাংক আমানত। এ খাতে তার বাৎসরিক আয় ৩ কোটি ৮৮ লাখ ২৫ হাজার ৩১৪ টাকা বলে তিনি হলফনামায় ঘোষণা দেন।  

হলফনামায় দেওয়া তথ্য অনুযায়ী কাজী জাফর উল্লাহর মোট সম্পদের পরিমাণ ৬২ কোটি ৩৭ লাখ ৩২ হাজার ৫৩৯ টাকা এবং তার নিট সম্পদের পরিমাণ ৬১ কোটি ৬১ লাখ ৩৪ হাজার ৫১৭ টাকা।  

তার বাৎসরিক আয় হিসেবে বাড়ি, অ্যাপার্টমেন্ট, দোকান ও অন্যান্য ভাড়া হতে ১ কোটি ৪৮ লাখ ৯৪ হাজার ৭৯৪ টাকা এবং চাকরি থেকে তার বাৎসরিক আয় ১২ লাখ টাকা বলে উল্লেখ রয়েছে। তবে কৃষি খাত ও ব্যবসা হতে তার কোনো আয় নেই।  

অস্থাবর সম্পত্তি হিসেবে কাজী জাফর উল্লাহর নিজের নামে ৫৩ কোটি ৫৯ লাখ ৫৭ হাজার ২৫১ টাকার এফডিআর এবং তার স্ত্রী সাবেক সংসদ সদস্য নিলুফার জাফর উল্লাহর নামে রয়েছে ১৪ কোটি ৬৮ লাখ ৪৯ হাজার ১১৮ টাকার এফডিআর।  
স্বামী ও স্ত্রী দুজনেরই ৭৫ লাখ টাকা করে রয়েছে দেড় কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র। এছাড়া কাজী জাফর উল্লাহর আরএমএমএল শেয়ারমানি রয়েছে ৪ কোটি ৪৯ লাখ ২০ হাজার টাকা।  

বন্ড, ঋণপত্র, স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত ও তালিকাভুক্ত নয় এমন কোম্পানির শেয়ার রয়েছে কাজী জাফর উল্লাহর নামে ১ কোটি ৯৭ লাখ ৮২ হাজার ৬৭০ টাকা। আর তার স্ত্রীর নামে রয়েছে ১৩ কোটি ৭ লাখ ৯৩ হাজার ১৬০ টাকা। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে তার নামে ২১ লাখ ২৯ হাজার ৩৪ টাকা ও স্ত্রীর নামে ৮৪ লাখ ৫ হাজার ৪৫০ টাকা জমা রয়েছে।  

কাজী জাফর উল্লাহর নিজের ১০ লাখ ৮১ হাজার ৫১১ টাকা মূল্যের এবং স্ত্রীর নামে ৫৮ লাখ টাকা মূল্যের গাড়ি রয়েছে। স্বর্ণ ও অন্যান্য অলংকার রয়েছে কাজী জাফর উল্লাহর নামে ২ লাখ টাকার এবং স্ত্রীর নামে ৭ লাখ ৩১ হাজার টাকার।  

এছাড়া ৮ লাখ ৯৯ হাজার ২১২ টাকার ইলেকট্রনিক সামগ্রী, স্বামী-স্ত্রী দুজনের মিলিয়ে ৫ লাখ ২৫ হাজার টাকার আসবাবপত্র এবং যথাক্রমে ৪৫ হাজার ৮০ টাকা ও ২ লাখ ৩০ হাজার ৭৮৪ টাকা মূল্যমানের আগ্নেয়াস্ত্র রয়েছে স্বামী ও স্ত্রী দুজনের।  

এর বাইরে কাজী জাফর উল্লাহর নগদ টাকার পরিমাণ ৫ লাখ ৬৫ হাজার ২৩৮ টাকা এবং তার স্ত্রীর নগদ টাকা দেখানো হয়েছে ৬ লাখ ৭ হাজার ২২৭ টাকা।

স্থাবর সম্পত্তি হিসেবে কাজী জাফর উল্লাহর নিজের নামে ফরিদপুরের শ্রীপুরে ১৬ লাখ ৪৯ হাজার ২৫৭ টাকা মূল্যের এবং তার স্ত্রীর নামে ১ কোটি ৯৮ লাখ ৫৮৯ টাকা মূল্যের অকৃষি জমির তথ্য উল্লেখ রয়েছে হলফনামায়।  

এছাড়া কাজী জাফর উল্লাহর নিজের নামে ঢাকার ধানমন্ডিতে ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা ও মিরপুরে ১ লাখ ৭৮ হাজার ৮১৮ টাকা মূল্যের দালান এবং তার স্ত্রীর নামে ঢাকার বনানীতে ১ কোটি ৬ লাখ ৯৪ হাজার ৭৮৩ টাকা মূল্যের বাড়ি রয়েছে।  

কাজী জাফরউল্লাহর নামে ৮৩ লাখ ৫৪ হাজার ৪৬৮ টাকা মূল্যমানের দুটি অ্যাপার্টমেন্টের তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে।

এর আগে ২০১৮ সালের নির্বাচনে দেখা যায়, কাজী জাফর উল্লাহ পেশায় একজন শিল্পপতি। বাড়ি, অ্যাপার্টমেন্ট ও অন্যান্য ভাড়া বাবদ তার আয় ৮৩ লাখ ৮৭ হাজার ৭৩৫ টাকা এবং শেয়ার, সঞ্চয়/ব্যাংকে আমানত ১ কোটি ৪ লাখ ৯৯ হাজার ৪৯১ টাকা। চাকরি (ডিরেক্টর রিমোনেরেশন) থেকে আয় ১২ লাখ টাকা।  

এসময় তার নিজের নামে ৯৩ হাজার ৯২১ টাকা ও স্ত্রীর নামে ৩৯ লাখ ৩৩ হাজার ৪৩৭ টাকা এবং ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে তার নিজের নামে ২ লাখ ২৮ হাজার ৮৭৫ টাকা ও স্ত্রীর নামে ৫০ লাখ ৪০ হাজার ৪২৫ টাকা ছিল। বন্ড, ঋণপত্র, স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত ও তালিকাভুক্ত নয় এমন কোম্পানির শেয়ার রয়েছে কাজী জাফর উল্লাহর নামে ১০ কোটি ৪ লাখ ৭৮ হাজার টাকা আর তার স্ত্রীর নামে রয়েছে ৫ কোটি ৮ লাখ ১১ হাজার ২শ’ টাকা।  

এসময়ে তার এফডিআর ছিল ৭ কোটি ৯০ লাখ টাকা, সঞ্চয়পত্র ছিল ১ কোটি ৫ লাখ টাকা ও শেয়ারমানি ডিপোজিট ছিল ৪ কোটি ৪৯ লাখ ২০ হাজার টাকার। তার স্ত্রীর নামে ছিল ১ কোটি ৩৫ লাখ টাকার এফডিআর ও ৮০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র।  

কাজী জাফর উল্লাহ নির্বাচন কমিশনে দাখিল করা হলফনামায় ২০১৮ সালে তার বিরুদ্ধে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ এ দুর্নীতি দমন কমিশন আইন ২০০৪ এর ২৬ (২) (ক) ধারায় মামলা (বিশেষ মামলা নম্বর- ০৩/২০০৮, ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৮ এ একই আইনের ২৭/১ (১) জরুরি বিধিমালা ২০০৭ এর ১৫ ধারায় মামলা (বিশেষ মামলা নম্বর- ১৫/২০০৮) এবং একই আদালতে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০০২ এ দায়েরকৃত বিশেষ মামলা নম্বর- ১৪/২০০৮ এর তথ্য উল্লেখ করেন।  

তিনটি মামলাই ২০১১ সালের ৪ জানুয়ারি হাইকোর্টকর্তৃক নিষ্পত্তি করা হয়েছে। তবে এবারের হলফনামায় তিনি তার বিরুদ্ধে অতীতে দায়েরকৃত ফৌজদারি মামলা এবং তার ফলাফলের ঘরে কোনো তথ্য উল্লেখ না করে সেগুলো দাগ দিয়ে কেটে দিয়েছেন।

এবার আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান মনোনীত হয়েছেন কাজী জাফর উল্লাহ। ২০১৮ ও ২০১৪ সালের নির্বাচনে কাজী জাফর উল্লাহ ফরিদপুর-৪ আসনে নৌকার প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। ২০০৮ সালে এই আসনে আওয়ামী লীগ থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তার স্ত্রী কাজী নিলুফার জাফর।

বাংলাদেশ সময়: ১৫২৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৭, ২০২৩
এসএএইচ 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।