ঝালকাঠি: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঝালকাঠি-১ (রাজাপুর-কাঁঠালিয়া) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে এমপি প্রার্থী হয়েছেন বিএনপি ছেড়ে আসা শাহজাহান ওমর।
নির্বাচন কমিশনে তার দেওয়া হলফনামায় দেখা গেছে, তার চেয়ে তার স্ত্রীর অর্থ সম্পদ অনেক বেশি রয়েছে।
তবে তার ও পরিবারের নামে স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি এবং তার নামে থাকা বিচারাধীন ও তদন্তনাধীন মামলার কোনো বিবরণ হলফনামায় উল্লেখ নেই।
এবার শাহজাহান ওমর ও তার স্ত্রীর সম্পদ এবং নগদ টাকার পরিমাণ দেখানো হয়েছে মোট ৫ কোটি ৬৩ লাখ ২৪ হাজার ৪১৭ টাকা। আর ২০১৮ সালের হলফনামার তথ্য অনুযায়ী এ দম্পতির সম্পদ এবং নগদ টাকার পরিমাণ ছিল ৭ কোটি ১৫ লাখ ৩৯ হাজার ৯৯৬। এ হিসেবে গতবারের তুলনায় এবার তাদের সম্পদ ও নগদ অর্থ এক কোটি ৫২ লাখ ১৫ হাজার ৫৭৯ টাকা কম দেখানো হয়েছে।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হলফনামা সূত্রে জানা যায়, শাহজাহান ওমরের কৃষি জমি, বাড়ি, দোকান ও অন্যান্য উৎস্য থেকে বার্ষিক আয় ৩০ লাখ ৫৯ হাজার ১৭০ টাকা। নিজের নামে নগদ অর্থ আছে ৬ লাখ ৬৪ হাজার ৫২৭ টাকা। স্ত্রীর নামে আছে ৩৫ লাখ ১৪ হাজার ৪৫০ টাকা। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে তার নামে জমা করা টাকার পরিমান ৭ লাখ ৮৩ হাজার ৮৫৭ টাকা এবং স্ত্রীর নামে আছে ৩ লাখ ৮৭ হাজার ৯১৩ টাকা। বিভিন্ন ধরনের সঞ্চয়পত্র, স্থায়ী আমানত বিনিয়োগ ও এফডিআরে নিজের নামে ১ কোটি ৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা এবং একই খাতে স্ত্রীর নামে আছে ১ কোটি ১ লাখ টাকা। তার গাড়ির মূল্য ৬০ লাখ ৭০ হাজার টাকা এবং স্ত্রীর গাড়ি মূল্য ১৭ লাখ ৪ হাজার টাকা। এছাড়া উভয়ের আসবাবাপত্রসহ আরও ১৮ লাখ ৭৫ হাজার টাকার সম্পদ আছে।
এদিকে ২০১৮ সালে নির্বাচনের হলফনামার তথ্য অনুযায়ী বছরে কৃষি, ব্যাংক আমানত ও পেশাগত আয় উল্লেখ করা হয়েছিল ২৮ লাখ ৫৯ হাজার ৮৩২ টাকা। শাহজাহান ওমরের নগদ টাকার পরিমাণ ছিল তখন ৭ লাখ ৭১ হাজার ৩৪৪ টাকা এবং স্ত্রীর নামে নগদ টাকা ছিল ৭০ হাজার ৮৭৭। তার নামে ব্যাংকে জমাকৃত টাকা ছিল ৫ লাখ ৪৯ হাজার ৯১৩ এবং স্ত্রীর নামে ছিল ৩ লাখ ৪৭ হাজার ২১২ টাকা। স্থায়ী আমানত ছিল ২ কোটি ১২ লাখ ৪২ হাজার টাকা এবং স্ত্রীর ছিল ১ কোটি ৮২ লাখ ৯ হাজার ৮৮১ টাকা। গাড়ির মূল্য ছিল ৬০ লাখ ৭০ হাজার টাকা এবং স্ত্রীর গাড়ির মূল্য ১৭ লাখ ৪ হাজার টাকা। তাদের উভয়ের ব্যবহৃত স্বর্ণের মূল্য ছিল ৮ লাখ ২৭ হাজার টাকা। এছাড়া উভয়ের ইলেকট্রিক ও আসবাবাপত্রের মূল্য ছিল ১৮ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। উভয়ের কৃষি ও অকৃষি জমির মূল্য ছিল ৪৫ লাখ ৮৭ হাজার ৭৬১ টাকা। বরিশাল ও রাজাপুরে মোট তিনটি বাড়ি ও পাকা ভবনের মূল্য ছিল ১ কোটি ৭৮ লাখ ৪০ হাজার ৫০৮ টাকা। এ ছাড়াও ঢাকায় খামারের মূল্য দেখানো হায়েছে ৪৮ লাখ ২৪ হাজার ৫০৮ টাকা।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হলফনামা অনুযায়ী শাহজাহান ওমরের চেয়ে তার স্ত্রীর নগদ টাকার পরিমাণ প্রায় পাঁচ গুণ বেশি দেখানো হয়েছে। পাশাপাশি তিনি ও তার স্ত্রীর নামে স্থায়ী আমানত সমপরিমাণ বলে উল্লেখ করেছেন। তবে শাহজাহান ওমরের নামে ১/১১ এর সময় দুদকের দায়ের করা অবৈধ অর্থসম্পদ উপার্জনের মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হওয়া এবং বর্তমান সরকারের গাড়ি পোড়ানোর মামালার কোনো তথ্য হলফনামায় নেই। যদিও ২০১৮ সনের হলফনামায় রাজাপুর ও ঢাকার ২০০৭ সনের দুটি মামলার কথা উল্লেখ করা হয়েছিল। এর মধ্যে রাজপুর থানায় দায়ের করা মামলায় আদালত তাকে খালাস দিয়েছেন। আর ঢাকার গুলশান থানার মামলায় খালাস পাওয়ার পর সেটি উচ্চ আদালতে আপিল বিচারাধীন। কিন্তু দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় শাহজাহান ওমরের সর্বশেষ মামলার কোনো তথ্য উল্লেখ করা হয়নি।
হলফনামায় দেখা যাচ্ছে, গত পাঁচ বছরে শাহজাহান ওমরের নগদ অর্থ কমলেও তার স্ত্রীর নগদ অর্থ বেড়েছে ৩৪ লাখ ৪৩ হাজার ৫৭৩ টাকা। তবে তার স্ত্রীর এ টাকা বৃদ্ধির উৎস হলফনামায় নেই। এছাড়া বরিশালের ব্রাউন কম্পাউন্ড সড়কে বীর উত্তম ভবন এবং রুপাতলী বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন নির্মাণাধীন বীর উত্তম হাসপাতালের কোনো তথ্য হলফনামায় উল্লেখ করা হয়নি। অথচ ২০১৮ সনের হলফনামায় বরিশাল ও নিজ গ্রাম রাজাপুরে তার মোট তিনটি বাড়ির কথা উল্লেখ করা হয়েছিল।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৭, ২০২৩
এসআই