ময়মনসিংহ: দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় ময়মনসিংহ-২ (ফুলপুর-তারাকান্দা) আসন থেকে এমপি হওয়ার পর গত ১০ বছরে গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদের সম্পদ বেড়েছে ৫৪ গুণ। সেই সঙ্গে বেড়েছে বার্ষিক আয়ও।
দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন উপলক্ষে নির্বাচন কমিশনে মনোনয়নপত্রের সঙ্গে জমা দেওয়া হলফনামার সঙ্গে দশম ও একাদশ জাতীয় নির্বাচনের হলফনামা বিশ্লেষণ করে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
এতে দেখা যায়, ২০১৪ সালের নির্বাচনের সময় শরীফ আহমেদের বার্ষিক আয় ছিল দুই লাখ ৪০ হাজার টাকা। নিজের ব্যবসা আর অস্থাবর সম্পদ হিসেবে স্ত্রীর ৮০ হাজার টাকা মূল্যের ১০ তোলা সোনা ছাড়া আর কিছু ছিল না। নিজের বা স্ত্রীর নামে স্থাবর কোনো সম্পদও ছিল না। ১০ বছরে গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রীর আয় বেড়েছে ৫৪ গুণ। এছাড়া বেড়েছে নগদ টাকা, কিনেছেন প্রায় কোটি টাকার গাড়ি, হয়েছে বাড়িসহ সম্পদ, আছে জমা করা প্রায় পৌনে চার কোটি টাকা।
এই সময়ে সংসদ সদস্য ও প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি মাছ চাষ করেও তিনি হয়েছেন সফল। বছরে কোটি টাকা আয় করেন শুধু মৎস্য খাত থেকেই। আয়ের সিংহভাগ মাছ চাষ থেকে এলেও সংসদ সদস্য হিসেবে সম্মানী ও বাড়িভাড়া থেকেও তিনি আয় করেছেন।
গৃহায়ণ ও গণপূর্তি প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে ময়মনসিংহ-২ (ফুলপুর-তারাকান্দা) আসন থেকে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য হন। তার বাবা ভাষা সৈনিক প্রয়াত শামছুল হকও ছিলেন সংসদীয় আসনটির একবার প্রাদেশিক সদস্য ও পাঁচবারের সংসদ সদস্য। বাবার মৃত্যুর পর টানা দুইবার এমপি হয়ে বাজিমাত করেন তিনি।
পাঁচ বছর এমপি থাকার পর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যে হলফনামা জমা দিয়েছিলেন তা থেকে দেখা গেছে, এমপি হয়েই আয় সম্পদ বাড়তে শুরু করে। বাড়ি, অ্যাপার্টমেন্ট, দোকান ও অন্যান্য ভাড়া বাবদ বাৎসরিক আয় এক লাখ ২৬ হাজার টাকা। এমপি থাকা অবস্থায় তিনি বনে যান মৎস্য খামারি। তার মৎস্য খামার থেকে বাৎসরিক আয় দেখানো হয় ১৫ লাখ টাকা। শেয়ার, সঞ্চয়পত্র বা ব্যাংক আমানত থেকে আয় দুই লাখ ৮৫ হাজার ৬৮০ টাকা। এমপি হিসেবে বাৎসরিক সম্মানী ছয় লাখ ৬০ হাজার টাকা। দশম সংসদের সময় স্ত্রীর কোনো আয় না দেখানো না হলেও একাদশের সময় দেখানো হয় স্ত্রীর আয় ছয় লাখ ৭২ হাজার ৩৬ টাকা। যদিও স্ত্রীর পেশার কথা উল্লেখ করা হয়নি হলফনামায়। তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, স্ত্রী শেফালী বেগম পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে যুগ্ম সচিব হিসেবে কর্মরত।
এমপি হওয়ার আগে শরীফের হাতে কোনো টাকা না থাকলেও নগদ আট হাজার ৯৭১ টাকা ও ব্যাংকে জমানো টাকা দেখানো হয় এক কোটি চার লাখ ৬৬ হাজার ৯৫৬ টাকা। আগে গাড়ি না থাকলেও এমপি হওয়ার পর ৫৬ লাখ ৫৩ হাজার টাকা মূল্যের টয়োটা ল্যান্ড ক্রুজার গাড়ি কেনেন। দশম সংসদ নির্বাচনে হফলনামায় স্ত্রীর নামে ১০ তোলা স্বর্ণ দেখানো হলেও একাদশের সময় তা দেখানে হয় নি। সে সময় নিজের নামে দশ তোলা স্বর্ণ দেখানো হয় যার মূল্য ৮০ হাজার টাকা। টিভি ফ্রিজের মূল্য ধরা হয়েছিল ২৫ হাজার টাকা। খাট সোফা ডাইনিংয়ের মূল্য ধরা হয়েছিল ২৫ হাজার টাকা।
শরীফ প্রথমবার এমপি হওয়ার সময় অকৃষি জমি, আবাসিক-বাণিজ্যিক কোনো স্থাপনা না থাকলেও এমপি হওয়ার পর পৈত্রিক সূত্রে অকৃষি জমি পান ৯ দশমিক ৫ শতাংশ। একই সঙ্গে ২৪ তলা ভিত্তির উপর পাঁচ তলা ডাবল ইউনিটের বাসাও পান। যদিও শরীফের বাবা ভাষা সৈনিক শামছুল হক প্রয়াত হন ২০০৫ সালে। এমপি অবস্থায় অবশ্য তিনি ঋণগ্রস্ত হন। ফারমার্স ব্যাংক লিমিটেড থেকে ঋণ নিয়েছিলেন ২০ লাখ ৯২ হাজার ৪০৩ টাকা।
একাদশ জাতীয় সংসদে দ্বিতীয়বার এমপি হওয়ার পর তার আয়-সম্পদ আরও বাড়তে থাকে। মন্ত্রী পরিষদে সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান তিনি। পরে অবশ্য মন্ত্রণালয় পরিবর্তন করে দেওয়া হয় গৃহায়ণ ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশনে দেওয়া হলফনামায় দেখানো প্রতিমন্ত্রী শরীফের সম্পদের বিবরণী ঘেঁটে দেখা গেছে, বাড়ি ভাড়া বাবদ বাৎসরিক আয় এক লাখ ৮০ হাজার টাকা। প্রতিমন্ত্রী হওয়ার পর তিনি মাছ চাষে আরও বেশি মনযোগী হয়েছেন। এবার দেখানো হয়েছে মৎস্য খামারে বছরে তার আয় এক কোটি টাকা। মন্ত্রী হিসেবে সম্মানী আট লাখ ২৮ হাজার টাকা। স্ত্রীর বাৎসরিক আয়ও বেড়েছে। এবারের হলফ নামায় স্ত্রীর আয় দেখানো হয়েছে নয় লাখ ৬০ হাজার ১৩০ টাকা। ব্যাংকে জমা করা টাকা থেকে বছরে মুনাফা বাবদ আয় আট লাখ ২০ হাজার ৬৩৬ টাকা।
প্রতিমন্ত্রী শরীফের নিজের হাতে নগদ টাকার পরিমাণও বেড়েছে। তার হাতে নগদ টাকা আছে ১১ লাখ ৩৫ হাজার ১২৮ টাকা। গত নির্বাচনের সময় হলফ নামায় স্ত্রীর নগদ কোনো টাকা না থাকলেও এবার স্ত্রীর নামে নগদ দুই লাখ ৫০ হাজার টাকা দেখানো হয়েছে। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা করা অর্থের পরিমাণও বেড়েছে স্বামী-স্ত্রীর। শরীফের ব্যাংকে জমা আছে তিন কোটি ৭৬ লাখ সাত হাজার ৮৩২ টাকা, স্ত্রীর নামে রয়েছে ৭৩ লাখ ১৪ হাজার ৫৫৪ টাকা। এবার তার গাড়িও বদলেছে। ৯২ লাখ ৫৮ হাজার টাকা মূল্যের টয়োটা ল্যান্ড ক্রুজার গাড়িতে চড়েন এখন। স্ত্রীর নামে কোনো স্বর্ণ দেখানো না হলেও নিজের নামে ১০ তোলা স্বর্ণ আছে, যার মূল্য ৮০ হাজার টাকা দেখানো হয়েছে। এছাড়া টিভি ফ্রিজের মূল্য ধরা হয়েছিল ২৫ হাজার টাকা। খাট সোফা ডাইনিংয়ের মূল্য ধরা হয়েছিল ২৫ হাজার টাকা।
তবে গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী হওয়ার পর এবার ৭৫ লাখ ২৫ হাজার টাকায় নারায়ণগঞ্জে ক্রয় করেছেন ৩০ শতাংশ জমি। হেবা মূলে ১১৮৩ দশমিক ৬৬ অযুতাংশ জমি পেয়েছেন পৈত্রিকভাবে। ছয়তলা ভিত্তির ওপর পাঁচতলা ডাবল ইউনিটের বাসা পেয়েছেন পৈত্রিকসূত্রে। নতুন করে পৈত্রিক সূত্রে ২০টি পুকুর পেয়েছেন। এদিকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে বাকিতে মৎস্য খাদ্য কিনে তার দেনা দেখানো হয়েছে ৪৫ লাখ টাকা।
বাংলাদেশ সময়: ১৮১৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৮, ২০২৩
এসআইএ