ঢাকা: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফরিদপুর-৩ আসনে আওয়ামী লীগের (নৌকা প্রতীক) প্রার্থী শামীম হকের প্রার্থিতা বাতিল চেয়ে নির্বাচন কমিশনে (ইসি) আপিল করেছেন আসনটির স্বতন্ত্র প্রার্থী ব্যবসায়ী এ কে আজাদ।
শুক্রবার (৮ ডিসেম্বর) এ কে আজাদের পক্ষে তার আইনজীবী মো. গোলাম কিবরিয়া আপিল আবেদনটি জমা দেন।
এসময় গোলাম কিবরিয়া সাংবাদিকদের বলেন, আওয়ামী লীগের মনোনীত নৌকার প্রার্থী শামীম হক নেদারল্যান্ডসের নাগরিক। স্বতন্ত্র প্রার্থী এ কে আজাদের মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের সময় তথ্য-উপাত্তসহ লিখিত অভিযোগ করা সত্ত্বেও রিটার্নিং কর্মকর্তা শামীম হকের মনোনয়নপত্র বাতিল না করে বৈধ ঘোষণা করেন। রিটার্নিং কর্মকর্তার আদেশের বিরুদ্ধে আজ আপিল দায়ের করা হয়েছে।
তিনি বলেন, শামীম হকের নেদারল্যান্ডসের আগের পাসপোর্ট নম্বর- BESHC8751, জন্ম তারিখ ২১ অক্টোবর ১৯৬০ লেখা আছে। শামীম হক সম্প্রতি তার বাংলাদেশি পাসপোর্ট ইস্যু করার জন্য ফরিদপুর পাসপোর্ট কার্যালয়ে দরখাস্ত দাখিল করেন। সেই দরখাস্তের ২৫ নম্বর কলামে দ্বৈত নাগরিকত্বের ঘরে টিক মার্ক দিয়েছেন। ২৬ নম্বর কলামে অন্য দেশের নাগরিক থাকলে সেই দেশের নামের জায়গায় নেদারল্যান্ডস উল্লেখ আছে। ২৭ নম্বর কলামে তার বর্তমান নেদারল্যান্ডসের পাসপোর্ট নম্বর BY60F0J74 উল্লেখ করা আছে।
গোলাম কিবরিয়া বলেন, সংবিধানের ৬৬(২) অনুচ্ছেদ এবং ১৯৭২ সালের গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের ১২(১) (৬) অনুচ্ছেদের বিধান মতে শামীম হক একজন বিদেশি নাগরিক হওয়ায় তিনি সংসদ সদস্য পদে নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারেন না, তিনি অযোগ্য প্রার্থী। এ ছাড়া তিনি গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (১২) (২)(ক) অনুচ্ছেদ অনুসারে প্রদত্ত এফিডেভিটে এ বিষয়টি গোপন করায় তার ঘোষণাটি মিথ্যা ঘোষণা হিসেবে বিবেচিত হবে এবং সে কারণেও তার মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়ার কথা।
তিনি বলেন, সংবিধানের ৬৬ (২) (গ) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘কোনো ব্যক্তি সংসদের সদস্য নির্বাচিত হইবার এবং সংসদ সদস্য থাকিবার যোগ্য হইবেন না, যদি তিনি কোনো বিদেশি রাষ্ট্রের নাগরিকত্ব অর্জন করেন কিংবা কোনো বিদেশি রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য ঘোষণা বা স্বীকার করেন। ’
এ আইনজীবী বলেন, সংবিধানের ওই অনুচ্ছেদের অনুরূপ বিধানই গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের ১২(১)(৬) অনুচ্ছেদে সন্নিবেশিত হয়েছে। প্রসঙ্গত মনোনয়নপত্র বাছাইয়ে বরিশাল জেলার রিটার্নিং কর্মকর্তা দ্বৈত নাগরিক থাকার কারণে বরিশাল-৪ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী শাম্মী আহমেদের মনোনয়নপত্র বাতিল করে দিয়েছেন। কিন্তু ফরিদপুরের রিটার্নিং কর্মকর্তা উল্টো আদেশ দিয়েছেন। তার আদেশে সংক্ষুব্ধ হয়ে আপিল করা হয়েছে।
ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ জানিয়েছেন, ৩০০ আসনে মনোনয়নপত্র দাখিল হয়েছিল দুই হাজার ৭১৬টি। এর মধ্যে বাছাইয়ের সময় রিটার্নিং কর্মকর্তারা বাতিল করেছেন ৭৩১টি, যা মোট দাখিলকৃত মনোনয়নপত্রের ২৬ দশমিক ৯২ শতাংশ বা ২৭ শতাংশ। আর বৈধ হয়েছে এক হাজার ৯৮৫টি মনোনয়নপত্র, যা দাখিলকৃত মনোনয়নপত্রের ৭৩ দশমিক ০৮ শতাংশ বা ৭৩ শতাংশ।
আগামী ৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রার্থীরা রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল করতে পারবেন। আর ১০ থেকে ১৫ ডিসেম্বর আপিল নিষ্পত্তি করবে নির্বাচন কমিশন।
প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ১৭ ডিসেম্বর। রিটার্নিং কর্মকর্তারা প্রতীক বরাদ্দ করবেন ১৮ ডিসেম্বর। নির্বাচনী প্রচার চলবে আগামী ৫ জানুয়ারি সকাল ৮টা পর্যন্ত। আর ভোটগ্রহণ হবে ৭ জানুয়ারি।
বাংলাদেশ সময়: ১৮২৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৮, ২০২৩
ইইউডি/আরবি