ঢাকা: ২৫ বছরের পুরোনো নথি জাতীয় আর্কাভাইসে সংরক্ষণ করবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ভোট নিয়ে গবেষণাসহ নানা কার্যক্রমকে সহজ করতেই এ উদ্যোগ নিচ্ছে সংস্থাটি।
ইসি সূত্রগুলো জানিয়েছে, ইতোমধ্যে সকল অনুবিভাগ, শাখা, আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা, জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের এ সংক্রান্ত তথ্য পাঠাতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে আগামী ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছে সংস্থাটি।
জানা গেছে, সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব খলিল আহমদ সম্প্রতি ইসি সচিব মো. জাহাংগীর আলমের কাছে এ সংক্রান্ত অনুরোধ জানান।
আধা সরকারিপত্রে (ডিও লেটার) তিনি বলেন, দেশের ইতিহাস-ঐতিহ্য সংরক্ষণের স্বার্থে ২৫ বছর বা তদূর্ধ্ব বছরের পুরাতন নথিপত্র ও দুষ্প্রাপ্য প্রকাশনা ঢাকার আগারগাঁওস্থ জাতীয় আরকাইভসে নিয়মিতভাবে পাঠানোর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বিশেষভাবে অনুরোধ করছি।
সেই পত্রের প্রেক্ষিতে ইসি এই উদ্যোগটি নিয়েছে। এক্ষেত্রে কর্মকর্তাদের দেওয়া নির্দেশনায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশ আরকাইভস দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির মূল্যবান উপকরণ ও তথ্য-উপাত্তের কেন্দ্রীয় সংরক্ষণাগার। বাংলাদেশ জাতীয় আরকাইভস আইন, ২০২১ এর ১০ ধারা অনুযায়ী বাংলাদেশ জাতীয় আরকাইভস দেশের সরকারি, আধাসরকারি এবং স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানসমূহের ২৫ বছরের ঊর্ধ্বের স্থায়ী সংরক্ষণযোগ্য গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র/রেকর্ড, দুষ্প্রাপ্য প্রকাশনা, দলিলপত্র, পাণ্ডুলিপি, চুক্তি, সমঝোতা স্মারক, কমিশন রিপোর্ট, ছবি, ভিডিও, ম্যাপ, পোস্টার ইত্যাদি সংগ্রহ করে থাকে। শুধু তাই নয়, সংগৃহীত রেকর্ডপত্র বৈজ্ঞানিক উপায়ে নিরাপদ সংরক্ষণ, ব্যবস্থাপনা এবং পরিচর্যা করাও এ অধিদপ্তরের
গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব।
বাংলাদেশ জাতীয় আরকাইভস সংগৃহীত রেকর্ডস থেকে সরকারি প্রয়োজনে তথ্যসেবা প্রদান, দেশি-বিদেশি গবেষক, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, এম.ফিল শিক্ষার্থী ও পিএইচডি গবেষক, বুদ্ধিজীবীসহ বিভিন্ন পর্যায়ের অংশীজনদের তথ্যসেবা দিয়ে থাকে।
এজন্য বাংলাদেশ জাতীয় আরকাইভস আইন ২০২১ এবং সচিবালয় নির্দেশমালা, ২০১৪ এর ৯৬ নং নির্দেশনা অনুযায়ী ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে ‘ক’ শ্রেণির নথি স্থায়ীভাবে সংরক্ষণ করতে হবে। মূললিপিসহ ‘ক’ শ্রেণির নথির তিনটি পাণ্ডুলিপি ও ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে সংরক্ষণের জন্য আরকাইভস ও গ্রন্থাগার অধিদপ্তরে প্রতি পঞ্জিকা বছরের শুরুতেই অর্থাৎ জানুয়ারি মাসের মধ্যে পাঠাতে হবে।
এই অবস্থায়, নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সকল শাখা এবং মাঠ পর্যায়ের কার্যালয়ের ‘ক’ শ্রেণিভুক্ত ২৫ বছরের ঊর্ধ্বের স্থায়ী সংরক্ষণযোগ্য গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র/রেকর্ড, দুষ্প্রাপ্য প্রকাশনা, দলিলপত্র, পাণ্ডুলিপি, চুক্তি, সমঝোতা স্মারক, কমিশন রিপোর্ট, ছবি, ভিডিও, ম্যাপ, পোস্টার ইত্যাদি (যদি থাকে) জাতীয় আরকাইভসে নিয়মিতভাবে পাঠানোর নিমিত্ত আগামী ২৪ ডিসেম্বর বুধবারের মধ্যে মূল নথিসহ ০৪ (চার) কপি সংস্থাপন-১ শাখায় পাঠাতে হবে।
ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ২০০৮ সাল পূর্ববর্তী নির্বাচনের ভোটার তালিকা সংরক্ষিত নেই।
এছাড়া দেশের ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন ১৯৭০ সালের নির্বাচন বা তার আগের তথ্য নেই। একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার কাজের স্বার্থে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (আইসিটি) তদন্ত সংস্থা ’৭০ সালের নির্বাচনী তথ্য চাইলে দিতে পারেনি ইসি।
সে সময় একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়েছিল। পরবর্তীতে ইসি থেকে বিভিন্ন রেফারেন্স ওই তদন্ত সংস্থাকে পাঠানো হয়েছিল বলে জানিয়েছিলেন ইসির তৎকালীন জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব ফরহাদ হোসেন।
ইসির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ওই নির্বাচনের পরেই দেশের পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নেয়। যে কারণে তথ্যগুলো ভালোভাবে সংরক্ষিত করে রাখা হয়নি। অথবা সংরক্ষণ করা হয়েছিলো কিন্তু যুদ্ধের সময় সব নষ্ট হয়েছে। সে সময় মালিবাগে যে ভবনে নির্বাচন কমিশনের অফিস ছিল, তা পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিলো।
জানা গেছে, ১৯৫৬ সালে ঢাকায় একটি শাখাসহ প্রতিষ্ঠা লাভ করে পাকিস্তান নির্বাচন কমিশন। ৫৬-৭১ সাল পর্যন্ত চারটি কমিশন দায়িত্ব পায়। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ৭২ সালে শেরেবাংলা নগরে নির্বাচন কমিশন, বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হয়।
স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে নির্বাচন কমিশন ২২টি রাষ্ট্রপতি নির্বাচন, এগারোটি জাতীয় সংসদ নির্বাচন, দশটি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন, পাঁচটি উপজেলা পরিষদসহ বেশ কিছু সিটি নির্বাচন ও জেলা পরিষদ নির্বাচন সম্পন্ন করেছে।
এই অর্ধশত বছরে দেশের নির্বাচনি ইতিহাসে বেশ পরিবর্তন এসেছে। পেয়েছে প্রযুক্তির ছোঁয়াও। এখন থেকে নির্বাচনী ইতিহাসের এসবই ধারাবাহিকভাবে সংরক্ষিত থাকবে জাতীয় আর্কাইভসে।
আগের নিউজের লিংক:
’৭১ পরবর্তী নির্বাচনের ভোটার তালিকা চেয়েছে আইসিটি
২০০৮ পূর্ববর্তী নির্বাচনের ভোটার তালিকা নেই ইসিতে
সত্তরের প্রার্থীদের তথ্য চায় ট্রাইব্যুনাল
ট্রাইব্যুনালকে সত্তরের প্রার্থীদের তথ্য দিলো ইসি
বাংলাদেশ সময়: ২০০২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২০, ২০২৩
ইইউডি/এসএএইচ