বরিশাল: ভোটের দিন যত এগিয়ে আসছে ততই নির্বাচনী প্রচারণার মাঠ জমজমাট হয়ে উঠছে। তবে প্রার্থী বিশেষে কেউ প্রচারণার কাজে পুরোদমে মন দিয়েছেন আবার কেউ ঠিমে তালে চালিয়ে যাচ্ছেন।
এখানে প্রচারণার মাঠ দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন জাতীয় পার্টির লাঙল প্রতীকের গোলাম কিবরিয়া টিপু, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির হাতুড়ি প্রতীকের টিপু সুলতান, স্বতন্ত্র ট্রাক প্রতীকের প্রার্থী মো. আতিকুর রহমান, স্বতন্ত্র ঈগল প্রতীকের প্রার্থী মো. আমিনুল হকসহ ছয় প্রার্থী।
জাতীয় পার্টির জন্য আওয়ামী লীগের প্রার্থীর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেওয়ায় নৌকা প্রতীকবিহীন এ আসনের হিসাবটা জটিল। যদিও বলা হচ্ছে, এ আসনে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা যার সাথে থাকবেন, বিজয় তার নিশ্চিত হবে। তবে পরিসংখ্যান বলছে, ১৯৭৩ থেকে ২০১৪ সালের আগ পর্যন্ত ৪ বার বিএনপি, দুই বার আওয়ামী লীগ ও দুই বার জাতীয় পার্টি বিজয়ী হয়েছে। আর ২০১৪ সালে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি আর ২০১৮ সালে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এ আসন থেকে জয়লাভ করেন। সেই আসনটিতে জয়ের জন্য শুধু আওয়ামী লীগের ওপরেই নয়, বিএনপির সমর্থকদের ওপরেও নির্ভর করতে হবে।
ভোটের দিন কেন্দ্রে যদি ভোটার উপস্থিতি করানো যায়, তাহলে দলীয় ও স্বতন্ত্র কোনো প্রার্থীকেই খাটো করে দেখার সুযোগ নেই। কারণ আসনটিতে যেমন বিএনপি ও আওয়ামী লীগের ভোট রয়েছে, তেমনি রয়েছে জাতীয় পার্টি ও বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির ভোটও। আবার ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননের বাড়ি বাবুগঞ্জে হওয়ায় এ আসনে দলটির অবস্থান একটু বেশিই ভালো বলছেন নেতাকর্মীরা।
মাঠের হিসাব বলছে, বরিশাল-৩ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে জাতীয় পার্টির প্রার্থী গোলাম কিবরিয়া টিপু ও স্বতন্ত্র আওয়ামী লীগ নেতা আতিকুর রহমানের মধ্যে। তবে ওয়ার্কার্স পার্টির অ্যাডভোকেট টিপু সুলতানকে হিসাবে রাখতে হবে বলে মনে করেন আওয়ামী লীগ নেতা সামসুল ইসলাম।
তিনি বলেন, এখানে আওয়ামী লীগের প্রার্থী নেই। তাই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা তিনভাগে বিভক্ত হয়ে যাবে। ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তায় পাওয়া ভোটে তিনজনের মধ্যে একজন সংসদ সদস্য হবেন। এ আসনে প্রার্থী রয়েছেন ৬ জন। অন্য তিনজন তেমন পরিচিত নয়।
স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, এখানে প্রথমবারের মতো আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী হয়ে অনেকটা নির্বাচনী মাঠ গুছিয়ে নিয়েছিলেন নৌকার প্রার্থী সরদার মো. খালেদ হোসেন স্বপন। তবে জাতীয় পার্টির প্রার্থীর কারণে নৌকার প্রার্থী প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেন। আর তারপর থেকেই নেতাকর্মীরা অনেকটাই ঝিমিয়ে পড়েছেন।
এই দলের বৃহৎ অংশের নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন, এখনো মহাজোটের প্রার্থী তাদের কাউকে ডাকেননি। তাই বাধ্য হয়ে তারা এলাকার উন্নয়নের স্বার্থে নৌকা মার্কার প্রার্থী না থাকায় যে যাকে ভালো মনে করছেন, তাকে সমর্থন দিচ্ছেন।
বাবুগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মাসুম মাঝি বলেন, এ আসনে নৌকা প্রতীক না থাকায় নেতাকর্মীরা হতাশ। তাই এখন বলা যায়, কেন্দ্রে প্রার্থীরা যে যার মতো ভোটার উপস্থিতি করতে পারলে জয়ের পাল্লা তারই ভারী হবে।
তবে নদীর কারণে বিচ্ছিন্ন এ আসনের মুলাদী উপজেলার আওয়ামী লীগ নেতারা জানিয়েছেন, উন্নয়নের স্বার্থে দীর্ঘদিন থেকে তারা মুলাদী উপজেলার কোনো বাসিন্দাকে দলীয় এমপি বানাতে চেয়েছেন। কিন্তু বরাবরই বাবুগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দাদের প্রার্থী দেওয়ায় তারা হতাশ হয়েছেন। আর যেহেতু দলীয় প্রার্থী নেই, তাই বেশির ভাগ নেতাকর্মীরা মুলাদী উপজেলার বাসিন্দা স্বতন্ত্র প্রার্থীর দিকে ঝুঁকছেন।
তবে ভোটের মাঠে এর কোনো প্রভাব পড়বে না দাবি করে জাতীয় পার্টির বাবুগঞ্জের কেদারপুর ইউনিয়নের যুগ্ম আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম বলেন, গোলাম কিবরিয়া টিপু এর আগেও এ আসন থেকে একাধিকবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। তাই এখানে জাতীয় পার্টির একটি ভোট ব্যাংক রয়েছে। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে এখানে জাতীয় পার্টির প্রার্থীই জয়লাভ করবেন। যদিও ভোট ব্যাংকের কথা জানিয়ে জয়ের আশা দেখছেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির প্রার্থী অ্যাডভোকেট শেখ মো. টিপু সুলতান।
উল্লেখ্য, এই আসনে বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের মো. আজমুল হাসান জিহাদ ছড়ি, তৃণমূল বিএনপির শাহানাজ হোসেন সোনালী আঁশ প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৫২৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২২, ২০২৩
এমএস/এমজেএফ