ঢাকা: বারবার আচরণবিধি ভঙ্গ করায় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কুমিল্লা-৬ (সদর) আসনে নৌকার প্রার্থী ও বর্তমান সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দীন বাহারের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) সুপারিশ করেছেন অনুসন্ধান কমিটি হিসেবে কুমিল্লার যুগ্ম জেলা জজ মো. সিরাজ উদ্দিন ইকবাল।
সোমবার (২৫ ডিসেম্বর) তিনি এ সুপারিশ করেন।
এতে উল্লেখ করা হয়েছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংসদীয় আসনের কুমিল্লা-৬ এর আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার গত ১৮ ডিসেম্বর সংসদীয় আসনের এলাকায় একটি উঠান বৈঠকে যদি কোনো বিএনপি এবং জামায়াতের কর্মীকে কোনো প্রার্থীর পক্ষে পাওয়া যায় তার হাত ঠ্যাং ভেঙে দেবেন। ‘আমি আ ক ম বাহাউদ্দিন আপনাদের সঙ্গে আছি’ মর্মে উসকানিমূলক নির্দেশনা সম্বলিত বক্তব্য দেন মর্মে একাত্তর টেলিভিশনে ভিডিও ফুটেজসহ সংবাদ প্রচারিত হলে তা অত্র কমিটির দৃষ্টিগোচর হয়। পরে ওই বক্তব্য সম্বলিত ভিডিও ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। স্থানীয় সরকারের উপপরিচালক কুমিল্লা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা বক্তব্য সম্বলিত ভিডিও ফুটেজ কমিটির কাছে পাঠান। নৌকা প্রতীক প্রার্থীর অনুরূপ বক্তব্য নির্বাচনী আচরণবিধির লঙ্ঘন মর্মে অত্র কমিটির কাছে প্রতীয়মান হওয়ায় কমিটি তা অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।
তিনি আরও বলেন, অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী বাহাউদ্দিন বাহারকে অভিযোগের বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে নির্দেশ দেওয়া হলে তিনি তার সই করা ব্যাখ্যা প্রতিনিধির মাধ্যমে দাখিল করেন। লিখিত ব্যাখ্যায় নৌকা প্রতীকের প্রার্থী তার বক্তব্যকে খণ্ডিতভাবে প্রকাশ করা হয়েছে মর্মে উল্লেখ করেন এবং নির্বাচন বানচালের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে সচেতনতামূলক বক্তব্য দিয়েছেন মর্মে দাবি করেছেন।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত ও প্রচারিত ভিডিও ফুটেজ, পরে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ, অভিযোগের বিষয়ে লিখিত ব্যাখ্যা, অনুসন্ধানকালে প্রাপ্ত তথ্য উপাত্ত পর্যালোচনায় দেখা যায় যে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্বাচনী প্রচারণা শুরুর তারিখ গত ১৮ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারের সমর্থনে নির্বাচনী এলাকায় একাধিক উঠান বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
অনুসন্ধান কমিটি জানায়, নির্বাচন বানচালের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে উক্ত রূপ সচেতনতামূলক বক্তব্য দিয়েছেন মর্মে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর বক্তব্য আইনত গ্রহণযোগ্য নয়। নির্বাচন বানচালের নাশকতামূলক যে কোনো কর্মকাণ্ড দেশের প্রচলিত আইনে ফৌজদারি অপরাধ এবং এর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করার দায়িত্ব সরকার ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর।
নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী কোনো প্রার্থী তার কর্মী-সমর্থকদের আইন নিজের হাতে তুলে নিয়ে কোনো ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গের হাত-পা ভেঙে দেওয়ার নির্দেশনা দিতে পারেন না। নিবন্ধিত কিংবা অনিবন্ধিত, নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী কিংবা নির্বাচন বর্জনকারী যে কোনো রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী যে কোনো প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় শান্তিপূর্ণভাবে অংশগ্রহণ করার আইনি ও সাংবিধানিক অধিকার রয়েছে। নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর অনুরূপ নির্দেশনা সুষ্ঠু, অবাধ, উৎসবমুখর ও ভীতিমুক্ত নির্বাচনী পরিবেশ বিঘ্নিত করার সামিল। অনুরূপ নির্দেশনা নির্বাচনী আইনের পরিপন্থি এবং নির্বাচনী আচরণবিধির লঙ্ঘন মর্মে অত্র কমিটির অভিমত।
নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর বর্ণিত নির্দেশনা ‘The Representation of People Order 1972' এর আর্টিকেল ৭৩ এবং রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা, ২০০৮ এর ১১(ক) বিধি স্পষ্ট লঙ্ঘন মর্মে প্রতীয় হয়।
তিনি আরও বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংসদীয় আসন কুমিল্লা-৬ এর আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা মার্কার প্রার্থী আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার গত ১৮ ডিসেম্বর নির্বাচনী প্রচারণাকালে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের ৭৩ অনুচ্ছেদ এবং রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা, ২০০৮ এর ১১(ক) বিধি ভঙ্গ করায় তার বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে বলে সুপারিশ করেছে অনুসন্ধান কমিটি।
আ ক ম বাহাউদ্দিনকে নির্বাচনি তদন্ত কমিটি তিন দফা শোকজের পর এ সুপারিশ দিল।
গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুযায়ী, নির্বাচনি তদন্ত কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে কারও প্রার্থিতা বাতিল করতে পারে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
আগামী ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৪৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৫, ২০২৩
ইইউডি/আরআইএস