বরিশাল: নির্বাচনী প্রচারণায় বাধা, কর্মীদের মারধর, নারী কর্মীদের শ্লীলতাহানি ও জীবননাশসহ বিভিন্ন ধরনের হুমকি দেওয়ার অভিযোগে এবার নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করেছে ট্রাক প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. সালাহউদ্দিন রিপন।
বুধবার (২৭ ডিসেম্বর) সকালে শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত বরিশাল প্রেসক্লাবের তৃতীয় তলার হলরুমে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনের সালাহউদ্দিন রিপন বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রার্থী হয়ে প্রতীক পেয়ে গত ১৮ ডিসেম্বর প্রচারণা শুরু করেছি, এ কাজে গণমাধ্যমকর্মীসহ প্রশাসনের সহযোগিতা পেয়ে যাচ্ছি। দিন যত যাচ্ছে মানুষ তত সাড়া দিচ্ছে আমার প্রতি।
কিন্তু গত ২১ ডিসেম্বর বরিশাল শায়েস্তাবাদ এলাকা থেকে টানা এ কয়েকদিন ধরে প্রায় প্রতিটি উঠান বৈঠক ও সভায় বাধার সৃষ্টি হচ্ছি নৌকার প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকরা। আমার বৈঠক ও সভায় সাধারণ মানুষকে আসতে বাধা দেওয়া হচ্ছে প্রতিনিয়ত। যেখানে সরকারি সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত করার পাশাপাশি মুক্তিযোদ্ধা তালিকা থেকে নাম বাদ দেওয়ার হুমকিও দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, এছাড়া নগরের ২১ নম্বর ওয়ার্ড ও ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে আমাদের নারী কর্মীদের হুমকি, শ্লীলতাহানি করা হয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় পুরুষ কর্মীদের মারধর, প্রাণনাশের হুমকি, প্রচার মাইকের ওপর হামলা, নির্বাচনী প্রচার অফিস বসাতে না দেওয়া, পোস্টার সরিয়ে ফেলার মতো ঘটনাও ঘটছে।
সর্বশেষ ২৬ ডিসেম্বর বরিশাল সদর উপজেলার বুখাইনগরের সভায় আসতে-যেতে স্থানীয় আওয়ামী লীগের সভাপতি নুরুল ইসলামের নেতৃত্বে নৌকা প্রতীকের সমর্থকরা আমাদের লোকদের বিভিন্নভাবে বাধা দিচ্ছিল। বিষয়টি দেখার জন্য ঘটনাস্থলে যাওয়ার পর নুরুল ইসলামের নেতৃত্বে কিছু লোক নিয়ে এসে আমাকে বলেন ‘কার অনুমতিতে তুই এখানে সভা করতেছিস, তুই সাহস পেলি কোথায়?’ আমি হতভম্ব হয়ে শুধু নুরুল ইসলামকে বললাম আপনি কি বলছেন? তখন সে প্রাণ নাশের হুমকি দেয় এবং পরবর্তীতে আমাদের কর্মীদের ওপর হামলা করে। পাশাপাশি ওই দিন মিডিয়ার ভাইদের ক্যামেরা ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করা হয়।
এ ধরনের প্রতিটি বিষয় কখনও লিখিতিভাবে এবং কখনও মৌখিকভাবেও আমি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী, রিটার্নিং কর্মকর্তাসহ নির্বাচন সংশ্লিষ্টদের জানিয়ে আসছি। পাশাপাশি সর্বশেষ বুখাইনগরের ঘটনায় কোতোয়ালি মডেল থানায় লিখিত অভিযোগও দিয়েছি।
তিনি বলেন, আমি সহঅবস্থানে বিশ্বাসী। আমিও আওয়ামী লীগের একজন কর্মী, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ উপ-কমিটির একজন সদস্য আমি। নেত্রী সুযোগ দেওয়ায় বিধায় আমি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে এসেছি।
তিনি বলেন, ২৯ তারিখের জননেত্রী শেখ হাসিনার জনসভায় আমাকে দলের কর্মী হিসেবে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে এবং দলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে সভায় কমপক্ষে ৫০ হাজার নারী কর্মী উপস্থিত নিশ্চিত করতে। আমি সেই চেষ্টায় প্রতিটি নির্বাচনী সভায় সব কর্মী-সমর্থকদের থাকার আহ্বান জানিয়ে আসছি। পাশাপাশি নগরে মাইকিং করে জনসভা সফল করতে প্রচারণাও চালাচ্ছি। কিন্তু নগরের রুপাতলীতে সেই প্রচার মাইকও ভেঙে ফেলা হয়েছে।
তিনি বলেন, আমি মানুষের কাছে প্রতিশ্রুতি দিয়েছি, তাই মৃত্যুই পারে আমাকে নির্বাচন থেকে সরিয়ে দিতে অন্য কোনো শক্তি নেই নির্বাচন থেকে সরে যেতে বাধ্য করতে পারে। আর দল বললে প্রত্যাহারের আগেই বলতো, সুতরাং এখন আর সেই সুযোগও নেই।
বক্তব্য প্রদান শেষে বিএনপি নেতাদের সঙ্গে নিয়ে প্রচারণায় নেমেছেন কিনা সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, অরাজনৈতিক সামাজিক সংগঠন এসআর সমাজকল্যাণ সংস্থার মাধ্যমে বরিশাল সদর উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন ও সিটি করপোরেশন এলাকায় বিগত ৭ বছর ধরে লক্ষাধিক সাধারণ অসহায় পরিবারকে কোনো না কোনোভাবে সাহায্য সহযোগিতা করেছি। যেটা সম্পূর্ণ আমার নিজস্ব অর্থায়নে, এখানে কারও কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। এ সদরে ৪০ হাজার লোকের চোখের চিকিৎসা করিয়েছি বিনামূল্যে, সেখানে কে বিএনপি, কে আওয়ামী লীগ তা দেখার বিষয় ছিল না। যে কেউ আমার সঙ্গে থাকতে পারে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৪৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৭, ২০২৩
এমএস/জেএইচ