ঢাকা: প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল ভোট বর্জনকারী দলগুলোকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, তারা শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচনের বিরুদ্ধে, নির্বাচনের বিপক্ষে বক্তব্য রাখছেন। তাতে অসুবিধা নেই, তারা জনমত সৃষ্টি করতে পারেন।
সোমবার (০১ জানুয়ারি) বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেটদের প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিব মো. জাহাংগীর আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত প্রশিক্ষণ কর্মসূচির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অন্য নির্বাচন কমিশনার, আইন ও বিচার বিভাগের সচিব, নির্বাচনী প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালকসহ ইসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, দেশের রাজনৈতিক নেতৃত্বের একটা অংশ নির্বাচন বর্জন করেছে। তারা শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচনের বিরুদ্ধে, নির্বাচনের বিপক্ষে বক্তব্য রাখছেন। তাতে অসুবিধা নেই, তারা জনমত সৃষ্টি করতে পারেন। কিন্তু সহিংস পন্থায় যদি এর বিরোধিতা করা হয় বা ভোটারদের ভোট দিতে যদি বাধা দেওয়া হয়, তাহলে অবশ্যই সংকট দেখা দেবে। সেই সংকট মোকাবিলা আমাদের করতে হবে।
যখনই নির্বাচনের প্রশ্নটা আসে, অনেকেই এটিকে হালকা করে নেয়৷ এটি হালকা করে নেওয়ার বিষয় না। আমাদের কাজ কিন্তু সরকার গঠন করা নয়। আমাদের কাজটা খুব সীমিত, নির্বাচনটা আয়োজন করে দিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত করার ব্যবস্থা করা। নির্বাচনের মাধ্যমে যদি সরকার নির্বাচিত না হয়, তাহলে অগণতান্ত্রিক সরকার গঠিত হওয়ার অবকাশ থাকে, যোগ করেন সিইসি।
তিনি বলেন, অনেকে মনে করেন, নির্বাচন কমিশন অসীম ক্ষমতার অধিকারী। প্রয়োজনে তিন মাস, তিন বছর বা ৩০ বছর পিছিয়ে দিতে পারে। এগুলো সত্য নয়। যারা রাজনীতিবিদ, তারা অবশ্য জানেন যে ইসি একটা নির্ধারিত সময়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত করতে পারে৷
সর্বোচ্চ দায়িত্বটা কমিশনকে দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন কখনোই তার একক শক্তিতে নির্বাচন আয়োজন করতে পারে না। এ কারণেই সংবিধানে, আরপিওতে ( গণপ্রতিনিধিত্ব আইন) সুস্পষ্ট করে বলা আছে, নির্বাচন পরিচালনা করতে কমিশন যেভাবে চাইবে রাষ্ট্র বা সরকার তা দিতে বাধ্য।
তিনি বলেন, কিছুটা উত্তাপ নির্বাচনে হবে, কিছুটা গণ্ডগোল হতে পারে। সহিংসতা হতে পারে। এগুলো খুব বেশি ধর্তব্যের মধ্যে পড়ে না। যেটা অসহনীয় সহিংসতা সেটা প্রতিরোধ করতে হবে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, ২০১৪ সালের নির্বাচন সর্বজনীন হয়ে ওঠেনি। ২০১৮ সালের নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হয়েছে। পরে সেই নির্বাচন নিয়ে বিতর্ক হয়েছে। পাবলিক পারসেপশনটা ইতিবাচক হয়নি। নির্বাচন শুধু সুষ্ঠু হলে হবে না। নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে। অবাধ হয়েছে। ভোটাররা ভোট দিতে পেরেছেন, সেটা বিশ্বাসযোগ্য করতে হবে। এ বিশ্বাসযোগ্যতা থাকলে পাবলিক পারসেপশন নষ্ট হয়ে যেতে পারে। যদি রং পারসেপশন গড়ে ওঠে, সেটাই সত্য পারসেপশন।
কাজী হাবিবুল আউয়াল আরও বলেন, আমাদের চেষ্টা করতে হবে যতদূর সম্ভব নির্বাচনটাকে দৃশ্যমানভাবে স্বচ্ছ করে তুলতে। দৃশ্যমানতার মাধ্যমে জনগণের কাছে বিশ্বাসযোগ্য করে তুলতে হবে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইন্টারন্যাশনাল ডাইমেনশন আছে। সেটাকে খাটো করে দেখার কোনো সুযোগ নেই৷ কারণ ইন্টারন্যাশনাল কমিউনিটির কাছে দেখাতে হবে, নির্বাচনটা অবাধ ও সুষ্ঠু হয়েছে। সহিংসতাকে কোনোভাবেই বরদাস্ত করা উচিত না, এটা জনমনে ভীতির সৃষ্টি করে।
নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. আহসান হাবিব খান বলেন, নির্বাচনটা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য, ভবিষ্যতে যারা নির্বাচন কন্ডাক্ট করবেন, তাদের জন্য অনুসরণীয়, অনুকরণীয় এবং মনে রাখার মতো যেন বিষয়বস্তু হয়।
প্রার্থীরা উচ্চ বংশের ও মেধাবী। তবুও কিন্তু পথে ঘাটে, নির্বাচনের মাঠে অনেক ঘটনা ঘটে, যা মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়। এসব ঘটে কিছু অতি উৎসাহী কর্মী, পথভ্রষ্ট কর্মী এবং সন্ত্রাসীদের কারণে। আমরা জানি অনেক সময় বাঁশের চেয়ে কঞ্চি শক্ত হয়। অথবা সূর্যের চেয়ে বালু গরম হয়। ঠিক তেমনি ঘটনা ঘটে। এ অপরাধ দমন করার জন্য আপনারা মাঠে থাকবেন, যোগ করেন সিইসি।
নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলতানা বলেন, আমরা চাচ্ছি, এবার ভোটটা অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠিত হবে। যেখানে ভোটাররা আসবেন, তাদের অত্যন্ত মূল্যবান অধিকার, এ অধিকার প্রয়োগ করে তাদের যোগ্য প্রার্থীকে ভোট দেবেন। এ জায়গায় আপনাদের সহযোগিতা চাই। কেউ সামান্যতম অপরাধ করলেও কখনোই ক্ষমার যোগ্য হবেন না।
আগামী ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৩০৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০১, ২০২৪
ইইউডি/এসআইএস