রাজশাহী: একের পর এক নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের কারণে রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থী আবুল কালাম আজাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে নির্বাচন কমিশনে (ইসি) সুপারিশ করা হয়েছে।
ওই আসনের নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটির কর্মকর্তা রুবিনা পারভীন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও কমিশনের সচিবের কাছে পাঠানো আলাদা দুইটি প্রতিবেদনে এই সুপারিশ করেছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত সোমবার (১ জানুয়ারি) নির্বাচন কমিশনের সচিবের কাছে লেখা প্রতিবেদনে রুবিনা পারভীন উল্লেখ করেছেন, রাজশাহী-৪ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থী আবুল কালাম আজাদ ও তার সমর্থকরা অপর প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী এনামুল হককে প্রাণনাশের হুমকিসহ প্রতিনিয়ত পোস্টার ছেঁড়া, প্রচার মাইক ও অফিস ভাঙচুরসহ হামলা করে যাচ্ছেন।
নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গ করে গোয়ালকান্দি ইউপি চেয়ারম্যান আলমগীর হোসেন গ্রাম পুলিশদের নিয়ে নৌকার প্রার্থী আবুল কালাম আজাদের পক্ষে প্রচারণা করেন এবং এনামুল হকের পোস্টার, ব্যানার ও অফিস ভাঙচুর করেন। কাঁচি প্রতীকের সমর্থকদের হুমকিও দিয়েছেন। এনামুলের পক্ষে এই অভিযোগ দায়েরের পর নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটি সরেজমিন তদন্ত করে সত্যতা পেয়েছে। তাই নির্বাচন পূর্ব অনিয়ম ও আচরণবিধি ভঙ্গের দায়ে আবুল কালাম আজাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয় প্রতিবেদনে।
আরেক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, রাজশাহী-৪ (বাগামরা) আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থী আবুল কালাম আজাদ বিভিন্ন সময়ে অপর প্রতিদ্বন্দ্বী কাঁচি প্রতীকের প্রার্থী তিনবারের সংসদ সদস্য এনামুল হককে প্রাণনাশের হুমকি, অশ্লীল ভাষায় আক্রমণাত্মক বক্তব্য দিয়েছেন।
গত ১২ ডিসেম্বর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া দেড় মিনিটের একটি ভিডিওতে আবুল কালাম আজাদকে বলতে শোনা যায়, ‘আমার সঙ্গে যারা ভাল ব্যবহার করবেন, তাদের কাছে আমি ফেরেশতা। যারা খারাপ করবেন তারা পৃথিবী থেকে নাই হয়ে যাবেন। একটা কথা বললাম। আজাহার-মাজাহার (এনামুলের সমর্থক) এলাকায় থাকবে না’।
নৌকার প্রার্থী আবুল কালাম আজাদ অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করে আরও বলেন, নৌকার বাইরে কথা বললে আজাহারের চেহারা চেঞ্জ হয়ে যাবে। নৌকার বাইরে কোনো মাস্তানি চলবে না। এনামুলের মতো লোককে ভুলি দিয়ে নৌকা নিয়ে এসেছি।
এছাড়া এনামুল হকের সমর্থক গোবিন্দপাড়া ইউপি আওয়ামী লীগের সভাপতি সাহেব আলীকে গত ১৪ ডিসেম্বর রুহিয়া মামুদপুর মোড়ে মারধর করেন। এ ঘটনায় বাগমারা থানায় মামলা হয়, যা নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটির তদন্তেও ধরা পড়েছে।
এদিকে, এসব অভিযোগ পাওয়ার পর নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটি আবুল কালাম আজাদের কাছে লিখিত ব্যাখ্যা তলব করে। ব্যাখ্যায় বেশিরভাগ অভিযোগের কথা অস্বীকার করেন তিনি। তবে আচরণবিধি ভঙ্গ হয়ে থাকলে তার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন কালাম। তখন তাকে সতর্ক করা হয়। কিন্তু এরপরও বার বার একই ধরনের ঘটনা ঘটেছে।
অনুসন্ধান কমিটির তদন্তে ধরা পড়েছে, কালামের উস্কানিমূলক বক্তব্য বা বিবৃতি এবং উচ্ছৃঙ্খল আচরণ সাধারণ ভোটারদের মধ্যে ভীতির সঞ্চার করেছে, যা সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের অন্তরায়। তাই আবুল কালাম আজাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, আসনটিতে ২০০৮ সাল থেকে তিনবারের এমপি ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হক। তবে এবার দলীয় মনোনয়ন হারিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন বাগমারা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এনামুল হক। আর তার বিপরীতে দলীয় মনোনয়ন পেয়ে নৌকা প্রতীকে লড়ছেন তাহেরপুর পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ।
বাংলাদেশ সময়: ০২৪২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৩, ২০২৪
এসএস/এসআইএ