হবিগঞ্জ: হবিগঞ্জে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রচারণা শেষ করে বিশ্রামে ফিরলেন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা; তবে ভোটারদের বিবেচনায় জেলার চার আসনে শেষ পর্যন্ত জয়ের দাবিদার মাত্র সাতজন। তাদের মধ্য থেকেই চারজন পাচ্ছেন দ্বাদশ জাতীয় সংসদের প্রবেশ টিকিট।
এদিকে চার আসনের মধ্যে দুটিতে সংসদ সদস্যে (এমপি) প্রার্থীদের ভাগ্য নির্ণয়ের নেপথ্যে আছে দুটি গোষ্ঠী— চা শ্রমিক ও সনাতন ধর্মাবলম্বী ভোটার। বাকি দুটিতে নির্দিষ্ট কোনো জনগোষ্ঠীর আওতায় এত শক্তি প্রতীয়মান না।
অন্যদিকে— একটি আসনে কার্যত বিনা-প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চতুর্থবার সংসদ সদস্য হওয়ার পথে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থী। তিন সপ্তাহ প্রচার-প্রচারণার পর আগামী রোববার (৭ জানুয়ারি) সারাদিন ভোটগ্রহণ।
চারটি আসনে নারী-পুরুষ ভোটার সংখ্যা ১৭ লাখ ১ হাজার ৭৪৫। এজন্য নির্বাচন কমিশন ৬৩৫টি ভোটকেন্দ্রের ভেতরে ৩ হাজার ৪৭১টি স্থায়ী এবং ১৮৬টি অস্থায়ী ভোটকক্ষ প্রস্তুত করেছে।
এবারের নির্বাচনে হবিগঞ্জে আলোচনার আরেক বিষয় হচ্ছে, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে কত শতাংশ ভোট প্রয়োগ হবে। কোনো এলাকায় বেশি ভোট প্রয়োগ হলে কার পাল্লা ভারী হবে? এ নিয়ে সর্বত্র আলোচনা।
হবিগঞ্জ-১ আসনে দুই প্রার্থী নিয়ে যত অঙ্ক নবীগঞ্জ-বাহুবল উপজেলা নিয়ে গঠিত এ আসনে চার লাখ ৩১ হাজার ৪২২ জন ভোটার আছেন। এখানে পাঁচজন প্রার্থী ভোটের মাঠে থাকলেও আগে থেকেই মাঠ ছেড়ে দেওয়া বর্তমান সংসদ সদস্যের ভাই গাজী মোহাম্মদ সাহেদ নিজের ইচ্ছায় ছিটকে গেছেন। বাকিদের মধ্যে তিন সপ্তাহ ধরেই দিনরাত মাঠে খেটেছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী অপসারণ করে আসন ভাগে পাওয়া জাপা সমর্থিত প্রার্থী এমএ মুনিম চৌধুরী বাবু এবং আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরী। তারা দুইজনই এক মেয়াদে সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্বপালন করেছেন। কেয়া চৌধুরী সংরক্ষিত আসনের সাবেক সংসদ সদস্য হিসেবে এলাকায় অবস্থান গড়েছেন।
ভোটারদের সঙ্গে তার ভালো সম্পর্ক বলে ভোটের মাঠে প্রতীয়মান। লোকজন বলছেন জাপার প্রার্থী আওয়ামী লীগ থেকে বাড়তি সুবিধা না পেলে এগিয়ে কেয়া চৌধুরী। অন্যদিকে মুনিম চৌধুরী বাবুকে বিজয়ী করতে ভোটের মাঠে নেমেছেন আওয়ামী লীগের নানা পর্যায়ের নেতারা। এতে তারা জয়ের জন্য আশাবাদী। তবে জাতীয়পার্টির একটি অংশকে প্রচারণ করতে দেখা গেছে কেয়া চৌধুরীর পক্ষে।
হবিগঞ্জ-২ আসনে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নবীন-প্রবীণ দুইজন বানিয়াচং-আজমিরীগঞ্জ উপজেলা নিয়ে গঠিত এ আসনে তিন লাখ ৬৮ হাজার ৩৩৪ নারী-পুরুষ ভোটার রয়েছেন। সবচেয়ে ২০ ইউনিয়ন ও এক পৌরসভার আসনটিতে নয় প্রার্থীর মিছিল থাকলেও জাপা প্রার্থী শংকর পাল প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সরে দাঁড়ানোয় মূল আলোচনায় আছেন দুইজন।
তারা হলেন, তিনবারের এমপি ও এবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. আব্দুল মজিদ খান এবং নৌকার প্রার্থী ময়েজ উদ্দিন শরীফ। মজিদ খান নিজের উন্নয়ন কাজকে পুঁজি করে দিনরাত প্রচারণা করেছেন। আর রুয়েল শক্তিশালী পুরো আওয়ামী পরিবারকে সঙ্গে নিয়ে। ধারণা করা হচ্ছে, তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে এ দুই প্রার্থীর মধ্যে। আজমিরীগঞ্জ এবং বানিয়াচং উপজেলার সনাতন ধর্মাবলম্বী ভোটাররা ইচ্ছে করলে নির্ধারণ করতে পারেন তাদের পছন্দের প্রার্থী। সনাতন ধর্মাবলম্বী নেতাদের নিয়ে তারা ময়েজ উদ্দিন শরীফের পক্ষে একটি সভা করেছেন।
হবিগঞ্জ-৩ আসনে জনপ্রিয়তায় নৌকার আধিপত্য হবিগঞ্জ সদর, লাখাই ও শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলাসহ দুটি পৌরসভা নিয়ে এ আসে ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৮৯ হাজার ৬৮১ জন। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সংখ্যা নয়জন থাকলেও আসনটিতে জনপ্রিয়তার দিক থেকে একক আধিপত্য নিয়ে আছেন তিনবারের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট মো. আবু জাহির। এলাকাবাসী বলছেন, তার চতুর্থবার সংসদে যাওয়া সময়ের ব্যাপার মাত্র।
দেশজুড়ে আলোচিত হবিগঞ্জ-৪ আসন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচিত ব্যক্তি সৈয়দ সায়েদুল হক সুমনের প্রতিদ্বন্দ্বিতার চিত্র এখন দেশজুড়ে। এ আসনে নারী-পুরুষ মিলিয়ে ভোটার সংখ্যা ৫ লাখ ১২ হাজার ৩০৮ জন। এখানে ভোটারের একটা বড় অংশ চা-শ্রমিক। ফলে এ আসনের প্রার্থীদের প্রচারের মূল কেন্দ্রে থাকে চা-বাগান। এবারও ব্যতিক্রম নেই। প্রার্থীরা চা-বাগান চষে বেড়াচ্ছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৪৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৬, ২০২৪
এএটি