ঢাকা: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন রাজধানীর পুরান ঢাকার রাস্তা-ঘাট ফাঁকা। যাত্রী সংকটে বসে আছে বিভিন্ন পরিবহণ শ্রমিকরা।
রোববার (০৭ জানুয়ারি) পুরান ঢাকার সদরঘাট, লহ্মীবাজার, রায়সাহেব বাজারসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এমন চিত্র পাওয়া গেছে।
সরজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন ভোর থেকে রাস্তায় কোনো সাধারণ মানুষের আনাগোনা ছিল না। দোকান পাট, চায়ের স্টল বন্ধ থাকলেও কিছু ভ্রমমাণ চা বিক্রেতাদের দেখা গেছে। ফুটপাত একেবারেই ফাঁকা। তবে ভোট কেন্দ্রগুলোতে উৎসবের আমেজ ছিল। বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে আইন- শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ডিউটি দিচ্ছে। একই সঙ্গে কিছুক্ষণ পর পর বিজিবির গাড়ি টহল দিতে দেখা গেছে। এছাড়া সাকালে ভোট কেন্দ্রে ভোটারদের উপস্থিতি কম থাকলেও বেলা বাড়ার সাথে সাথে উপস্থিতি বাড়ে। এদিন সড়কে কিছু রিকশা, সিএনজি ও বাস চলাচল করতে দেখা যায়।
রিকশাচালক মো: মমিন বলেন, এক বছর ধরে রিকশা চালাই। নির্বাচনের জন্য রাস্তা- ঘাট ফাঁকা, যাত্রী নেই। কেউ এখন পর্যন্ত রাস্তায় বের হয়নি। সকাল ৬ টায় বের হয়ে এখন পর্যন্ত ৭০ টাকা পেয়েছি। ভোট দিতে যাইনি অনেক খরচ হয়। তার থেকে রিকশা চালালে কিছু টাকা আয় হবে। গরিবের আবার ভোট।
সাভার পরিবহনের চালক মো. রহিম বাংলানিউজকে বলেন, চন্দ্র থেকে গাড়ি নিয়ে আসছে মাত্র দুই হাজার টাকা পেয়েছি। এরমধ্যে খরচ আছে যেতে আসতে প্রায় ৪ হাজার টাকা। একটা ট্রিপ মারলে আজকে মনে হয়না কিছু থাকবে না। তারপরও বের হয়েছি যদি কিছু আয় হয়। রাস্তায় কোনো যাত্রী নেই।
বিহঙ্গ বাসের কন্ট্রাকটর মো: সম্রাট বলেন, মিরপুর থেকে আসলাম যাত্রী নাই। একেবারেই খালি গাড়ি নিয়ে এসেছি। গরিব মানুষ ভাই বসে থাকলে, না খেয়ে থাকতে হবে। তাই গাড়ি নিয়ে বের হয়েছি।
সিএনজি চালক মো: রফিক বাংলানিউজকে বলেন, অন্যান্য ছুটির সময় রাস্তায় যাত্রী থাকে। আজকে রাস্তা ঘাট একেবারেই ফাঁকা। সকালে সদরঘাটের একটা ট্রিপ ছিলো। এরপর থেকে বসে আছি। অন্য দিন হলে এসময়ে দুই থেকে তিনটা ট্রিপ পেয়ে যাই। আজকে সারা দিন কেমন যাবে জানি না। তবে রাস্তায় কোনো রকমের সমস্যা নেই। কেউ গাড়ি চালাতে বাঁধা দিচ্ছে না। শুধু ভয় হয়, গতকাল যেভাবে ট্রেনে আগুন দিয়েছে।
শ্যামবাজারে মেন্তির কাজ করেন আব্দুল মান্নান। তিনি বলেন, নির্বাচনের জন্য সব কিছু বন্ধ। লোকজন বাজার ঘাটে যায়নি। দোকানপাটও বন্ধ। তাই আমাদের কাজও নেই। বেকার বসে গল্প করে কাটাচ্ছি। ভোট দিতে দেশে যাবো ভাবছিলাম। কিন্তু হিসেব করে দেখি গ্রামে যেতে আসতে যে খরচ তাতে ভোট দিতে গেলে কোনো লাভ হবে না। তার থেকে বরং সেই ভাড়ার টাকাটা পরিবারকে পাঠিয়ে দিয়েছি।
সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালের কুলি বাদশা মিয়া বলেন, গত কয়েকদিন ধরে যাত্রী নেই। ফলে আমাদেরও কাজ নেই। যাত্রী থাকলে আমাদের কিছু কাজ থাকে। কাল পরশু ধেকে আবার সব ঠিক হয়ে যাবে।
এদিকে নির্বাচন উপলক্ষে রোববার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। এরই মধ্যে নির্বাচনের সবধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে নির্বাচন কমিশন। সার্বিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। নির্বাচনী সব সরঞ্জাম ভোটকেন্দ্রে এর আগে পৌঁছে গেছে। আজ সকাল ৮টা থেকে শুরু হবে ভোটগ্রহণ, চলবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত।
ইসির তথ্যানুযায়ী, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০০ সংসদীয় আসনের মধ্যে ২৯৯ আসনে ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন এক হাজার ৯৭০ জন প্রার্থী। ২৮টি রাজনৈতিক দলের হয়ে লড়াই করছেন ১৫৩৪ জন প্রার্থী। আর স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়াই করছেন ৪৩৬ জন। এছাড়া নওগাঁ-২ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী আমিনুল ইসলামের মৃত্যুবরণ করায় ওই আসনের নির্বাচন স্থগিত করেছে ইসি। ফলে এবার ২৯৯ আসনে হবে নির্বাচন। এবার ২৯৯ সংসদীয় আসনে সারাদেশে মোট ভোটার ১১ কোটি ৯৬ লাখ ৯১ হাজার ৬৩৩ জন। মোট ভোটারের মধ্যে পুরুষ ৬ কোটি ৭ লাখ ৭১ হাজার ৫৭৯ জন, নারী ৫ কোটি ৮৯ লাখ ১৯ হাজার ২০২ জন। আর তৃতীয় লিঙ্গের ভোটারের সংখ্যা ৮৫২৷ মোট ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ৪২ হাজার ১০৩টি। এসব কেন্দ্রে ভোটকক্ষ থাকবে ২ লাখ ৬১ হাজার ৯১২টি।
বাংলাদেশ সময় : ০৯৫৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৭,২০২৪
জিসিজি/এমএম