ফরিদপুর: ৭৯ বছর বয়সী শেখ আকবর হোসেন। ফরিদপুর সদরের ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের শিংপাড়া এলাকার বাসিন্দা তিনি।
বুধবার (৮ মে) দুপুর ১২টার দিকে এক আনসার সদস্যের সাহায্য নিয়ে শহরের সারদা সুন্দরী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু ভবন কেন্দ্রে ভোট দিতে আসেন তিনি।
ভোট দিয়ে বের হয়ে যাওয়ার সময় তিনি বলেন, আমি একজন দেশের নাগরিক। ভোট দেওয়া আমার নৈতিক দায়িত্ব। মনোরম পরিবেশে ভোট চলছে। আমার ভোট আমিই দিয়েছি। লাঠি ভর দিয়ে হাঁটতে হয় এজন্য কেন্দ্রে এসে একজন আনসার সদস্যের সাহায্য নিয়েছি।
বুধবার (৮ মে) দুপুর ১২টার দিকে শহরের সারদা সুন্দরী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু ভবন কেন্দ্রে ভোট দিয়ে যাওয়ার সময় তিনি এসব কথা বলেন। সারদা সুন্দরী উচ্চ বিদ্যালয়ে তিনটি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ চলে।
শেখ আকবর হোসেন বলেন, রাতে ঝড়-বৃষ্টি হয়েছে। সকালেও আকাশ মেঘলা মেঘলা দেখে একটু বেলা করে ভোট দিয়ে গেলাম। তিনি বলেন, আমার ভোট আমি দিয়েছি, পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পেরে ভালো লাগছে।
সদর উপজেলার কৃষ্ণনগর ইউনিয়নের হাটগোবিন্দপুর গ্রামের বাসিন্দা মো. এনায়েত শেখের (৫৬) সঙ্গে পৌরসদরের সারদা সুন্দরী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে কথা হয়। তিনি বলেন, হাটগোবিন্দপুর হাইস্কুলে ভোট দিয়ে এখানে এসেছি ভোট দেখতে। আমাদের গ্রামের দিকে কেন্দ্রে ভোটার লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট দিচ্ছেন। এখানে দেখছি ভোটের লাইন তো দূরের কথা একজন দুইজন করে এসে ভোট দিয়ে যাচ্ছেন।
জানা যায়, ফরিদপুরে তিনটি উপজেলায় চলছে ভোটগ্রহণ চলছে। তবে অধিকাংশ ভোটকেন্দ্রে নে ভোটারদের দীর্ঘ লাইন। ভোটার উপস্থিতিও একেবারেই কম।
দুপুরের দিকে ফরিদপুর সদর উপজেলার সারদা সুন্দরী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় গিয়ে দেখা যায়, সেখানে তিনটি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ চলছে। সেখানকার তিনটি কেন্দ্রের ২১ নম্বর কেন্দ্রের মোট ভোটার ২০২১ জন। দুপুর ১২টা পর্যন্ত কাস্টিং হয়েছে মাত্র ১৭৫টি ভোট। ২২ নম্বর কেন্দ্রের মোট ভোটার ২৫৫৩ জন। এখানে কাস্টিং হয়েছে মাত্র ১৪০ ভোট। সেখানের ২৪ নম্বর কেন্দ্রের মোট ভোটার ২৯৫৩ জন। কাস্টিং হয়েছে মাত্র ১১৮ ভোট।
সেখানে দায়িত্বরত প্রিজাইডিং অফিসার জাহাঙ্গীর আলম বলেন, প্রার্থীরা হয়তো তেমন প্রচার প্রচারণা চালিয়ে ভোটারদের কাছে পৌঁছাতে পারেনি। পারেনি ভোটারদের মন জয় করতে। এ কারণে হয়তো ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে কম আসছেন। তবে দুপুরের পর থেকে ভোটারের উপস্থিতি কিছুটা বাড়তে পারে।
এদিকে শহরের ৮ নম্বর শোভারামপুর ভোটকেন্দ্রে মোট ভোটার ২৮৮৭। কিন্তু দুপুর ১২টা পর্যন্ত কাস্টিং হয়েছে সেখানে ২০৭ ভোট। সদরের ৭৪ নম্বর চরমাধবদিয়া ইউনাইটেড উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে মোট ভোটার ২৯৩৯। দুপুর ১২টা পর্যন্ত কাস্টিং হয়েছিল ৩৮৪ ভোট। এ উপজেলার ১০৮ নম্বর ভাষাণচর উচ্চ বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রের মোট ভোটার ২৩৬৯। কাস্টিং হয়েছে ৬৩০ ভোট।
তবে জেলার মধুখালী ও চরভদ্রাসন উপজেলার কেন্দ্র গুলোতে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত ২৫ ভাগ ভোট পড়েছে বলে বিভিন্ন মাধ্যমে জানা গেছে। তিনটি উপজেলায় ৩১ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এবং ৩ জন জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করছেন। শহরের কেন্দ্রগুলোতে নেই ভোটারদের দীর্ঘ লাইন। বেশিরভাগ কেন্দ্রেই ভোটার উপস্থিতি একেবারেই কম। তবে গ্রামের কেন্দ্রগুলোতে স্বাভাবিকভাবে ভোটারদের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে।
বুধবার দুপুর দেড়টায় ফরিদপুরের সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং কর্মকর্তা তারেক আহম্মেদ বলেন, জেলার তিনটি উপজেলায় নির্বাচন সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে চলছে। জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার মহোদয়সহ আমরা মাঠে রয়েছি।
এখন পর্যন্ত কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখতে পুলিশ, র্যাব ও আনসার সদস্যদের পাশাপাশি বিজিবি সদস্যরা মোতায়েন রয়েছে। এছাড়াও ৩১ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও ৩ জন জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করছেন। দুপুর ১২টা পর্যন্ত মধুখালীতে ২১ শতাংশ সদরে ১৮ শতাংশ ও চরভদ্রাসনে ১৯.৫৭ শতাংশ কাস্টিং হয়েছে।
প্রসঙ্গত, প্রথম ধাপে ফরিদপুর সদর, মধুখালী ও চরভদ্রাসন উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে ১৬ জন এবং ভাইস চেয়ারম্যান পদে ১৩ জন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৯ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। প্রতিদ্বন্দ্বীকারী ১৬ জন চেয়ারম্যান প্রার্থীর মধ্যে ফরিদপুর সদর উপজেলার আনারস প্রতীকের প্রার্থী শামসুল আলম চৌধুরী কারাগারে থেকেই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। সদর উপজেলায় ভোটার রয়েছে ৪ লাখ ৮ হাজার ৬৮০, মধুখালীতে ১ লাখ ৭৭ হাজার ৫৩৯ ও চরভদ্রাসনে ৬৩ হাজার ১০৫ জন। তিনটি উপজেলার ২৫৫টি কেন্দ্রে ভোটাররা তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করছেন। এর মধ্যে ফরিদপুর সদর উপজেলায় দুইজন তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার রয়েছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৫৫ ঘণ্টা, মে ৮, ২০২৪
জেএইচ