ঢাকা: নির্বাচন নিয়ে কোনো সিদ্ধান্তে অন্তর্বর্তী সরকার না পৌঁছালেও সেনা প্রধানের ১৮ মাসের মধ্যে ভোটের ইঙ্গিত আলোচনায় গতি এনেছে। নির্বাচন কমিশন (ইসি) তাদের প্রাথমিক প্রস্তুতি নিয়ে ভাবছে।
সম্প্রতি সেনা প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ১৮ মাসের মধ্যে যাতে নির্বাচন হয়, সে জন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে সমর্থনের কথা জানিয়েছেন। এরপর প্রধান উপেদষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস নিউইয়র্কে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভার সঙ্গে বৈঠকে সংস্কারের বিষয়ে ঐকমত্যে উপনীত ও ভোটার তালিকা তৈরি হলে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা জানিয়েছেন।
ইসি কর্মকর্তারা বলছেন, সরকার এরই মধ্যে নির্বাচনী সংস্কার বিষয়ক একটি কমিশন গঠন করেছে। সেই কমিটি আগামী ১ অক্টোবর থেকে কাজ করার কথা জানিয়েছে। এতে কমিশনের প্রতিবেদন দাখিলের পর কী নির্দশনা সরকারের পক্ষ থেকে আসে তার ওপর কর্মপন্থা নির্ধারণ করবে সংস্থাটি। তবে প্রাথমিক প্রস্তুতি হিসেবে আগামী জানুয়ারি থেকে ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রেম কথা ভাবা হচ্ছে। এছাড়া ভোটার তালিকায় বিদ্যমান ত্রুটি দূর কাজে হাত দিয়েছে ইসি।
জানা গেছে, বর্তমানে দ্বৈত ভোটার রয়েছে কয়েক লাখ। এগুলো নিষ্পত্তি করাসহ কেউ যেন নতুন করে দুইবার ভোটার হতে না পারে সে উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে। এজন্য ভোটাররা যেখানে আঙ্গুলের ছাপ ও চোখের আইরিশ দেবে সে স্থানটি ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার আওতায় আনা হবে। এতে দ্বিতীয়বার কেউ ভোটার হতে এলে সহজেই ধরা পড়বে।
কর্মকর্তারা বলেছেন, আনআইডেন্টিফাইড কেসগুলোই চ্যালেঞ্জের। কেননা, আঙ্গুলের ছাপ না দিয়েও যদি কেউ ভোটার হয়, সেক্ষেত্রে কেউ অভিযোগ না তাকে খুঁজে পাওয়া দুরুহ। এক্ষেত্রে তারা উদাহরণ টানছেন সাবেক সেনা প্রধান আজিজ আহমেদের দুই ভাইয়ের জালিয়াতির বিষয়টি।
দ্বৈত ভোটার ৫ লাখ ৩০ হাজার
জানা গেছে, বর্তমানে ইসির সার্ভারে ৫ লাখ ৩০ হাজার দ্বৈত ভোটার আছে। এছাড়া সাড়ে চার লাখের মতো ভোটারের আঙ্গুলের ছাপ অন্যের সঙ্গে মিলে (ক্রস ম্যাচ) যাচ্ছে। ডাটা এন্ট্রি অপারেটরদের অবহেলার কারণে ক্রস ম্যাচের বিড়ম্বনা দেখা দিয়েছে। কেননা, কেউ ভোটার হওয়ার জন্য এলে আঙ্গুলের ছাপ ৬০ শতাংশ না পেলে তা সার্ভারে আপলোড করার নিষেধাজ্ঞা সত্বেও তাড়াহুড়োর কারণে সেই নির্দেশনা মানা হচ্ছে না। ফলে অনেকের আঙ্গুলের অসম্পূর্ণ ছাপ অন্যের সঙ্গে মিলে যাচ্ছে। আবার দ্বৈত ভোটার হওয়ার সুযোগও থেকেই যাচ্ছে। একদিকে কেউ সংশিষ্ট কর্মকর্তার সঙ্গে যোগসাজশের মাধ্যমে প্রথমবার আঙ্গুল না দিয়ে কেউ যদি ভোটার হন, তাহলে দ্বিতীয়বার আঙ্গুলের ছাপ দিয়ে ভোটার হতে পারবেন। আবার কেউ প্রথমবার আঙ্গুলের ছাপ দিলেও দ্বিতীয়বার পায়ের আঙ্গুলের ছাপ দিয়ে ভোটার হওয়ার সুযোগ থেকে যায়। বিদ্যমান ভোটার তালিকাকে শতভাগ নির্ভুল করতে এই চ্যালেঞ্জটিকেই বড় করে দেখেছ ইসি।
চিহ্নিত দ্বৈত ভোটার সমস্যা সমাধান হচ্ছে
কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, যাদের আঙ্গুলের ছাপ প্রথমবারের সঙ্গে দ্বিতীয়বার মিলে যাচ্ছে তাদের চিহ্নিত করা যাচ্ছে। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ভোটারের প্রথম আবেদনটি ঠিক রেখে দ্বিতীয়বারের আবেদনটি ব্লক করে দেওয়া হচ্ছে।
আনআইডেন্টিফাইড দ্বৈত ভোটার ধরা চ্যালেঞ্জ
সাবেক সেনা প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল আজিজ আহমেদের দুই হারিছ আহমেদ ও তোফায়েল আহমেদ (জোসেফ) জালিয়াতি করে চারবার ভোটার হওয়ায় বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন ইসি কর্মকর্তারা। ওই দুই দুস্কৃতিকারী প্রথমে আঙ্গুলের ছাপ না দিয়েই ভোটার হন। পরবর্তীতে অন্য নামে ভোটার হন আঙ্গুলের ছাপ দিয়ে। আর এই সুযোগটি অন্য কেউ নিয়ে থাকলে তা ১২ কোটি ভোটারের মধ্যে খুঁজে পাওয়া দুরুহ। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আসলেই তা বের করা সম্ভব বলে মনে করছেন কর্মকর্তারা।
এ বিষয়ে ইসির এনআইডি অনুবিভাগের সিস্টেম ম্যানেজার রফিকুল হক বলেন, আনআইডেন্টিফাইড দ্বৈত ভোটার খুঁজে পাওয়া যায় না। এজন্য কেবল অভিযোগ আসলেই ব্যবস্থা নেওয়া যায়। অন্যদিকে আইেডন্টিফাইড দ্বৈত ভোটার চিহ্নিত হওয়ার পর আইডি ব্লক করে দিয়ে সমস্যার সমাধান করা হচ্ছে। তবে এই সংখ্যাও খুবই নগন্য। সাড়ে পাঁচ লাখ যে সংখ্যার কথা বলা হচ্ছে, সেটা আসলে প্রকৃত সংখ্যা নয়। যতিদন যাবে তত এ সংখ্যা বাড়বে। কেননা, সমস্যার সমাধান করার পরও আমরা সিস্টেমে সংশ্লিষ্ট তথ্য রেখে দিই, যেন ভবিষ্যতে পুনরায় আবেদন করলে ম্যাচ করে। এছাড়া নতুন করে যারা দ্বৈত ভোটার হচ্ছেন, বা হওয়ার চেষ্টা করছেন তাদের সংখ্যাও আগের সংখ্যার সঙ্গে যোগ হচ্ছে।
এনআইডি অনুবিভাগের মহাপরিচালক মো. মাহবুব আলম তালুকদার এ বিষয়ে বলেন, আমরা সরকার থেকে নির্বাচনের সিদ্ধান্ত হলে সে মোতাবেক অগ্রসর হবো। ভোটার তালিকা হালনাগাদের জন্য আইন আছে। এক্ষেত্রে জানুয়ারি থেকে মার্চের মধ্যে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করতে হবে। এবার ও তেমন করা হবে। এছাড়া ভোটার তালিকা নির্ভুল করার জন্য আমরা দ্বৈত ভোটার চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়ার কাজ চলমান রেখেছি।
সংবিধান অনযায়ী, কোনো সংসদ ভেঙে গেল তার পরবর্তী নব্বই দিনের মধ্যে নির্বাচন করার বিধান রয়েছে। আর নির্বাচনের আগে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করে নির্বাচন কমিশন। তবে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে ভারতে চলে গেলে রাষ্ট্রপতি অন্তর্বর্তী সরকার নিয়োগ দেয়। আর এ সরকার সংস্কারের পর নির্বাচন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
সর্বশেষ হালনাগাদ অনুযায়ী, দেশে ভোটার র ১২ কোটি ১৮ লাখ ৫০ হাজার ১৬০ জন। তবে হালনাগাদ কার্যক্রমের বাইরেও অনেকে ভোটার হয়েছেন। এক্ষেত্রে বর্তমানে প্রকৃত ভোটার সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
বাংলাদেশ সময়: ২০৪৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৬, ২০২৪
ইইউডি/জেএইচ