ঢাকা: উন্নতমানের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) বা স্মার্টকার্ড মুদ্রণে তথ্য ঘাটতিজনিত জটিলতা নিরসনে সাত সদস্যের কমিটি গঠন করল নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সংস্থাটির এনআইডি শাখার উপ-পরিচালক মাহবুবা মমতা হেনা বিষয়টি জানান।
ইসির মানবসম্পদ উন্নয়ন ও কল্যাণ শাখার উপ-সচিব এম মাজহারুল ইসলামকে আহ্বায়ক ও এনআইডি শাখার সহকারী পরিচালক এএসএম ইকবাল হাসানকে সদস্য সচিব করে ওই কমিটি গঠন করা হয়েছে।
ইসি কর্মকর্তারা জানান, ভোটার এলাকা পরিবর্তন বা তথ্যের ঘাটতি থাকার কারণে অনেকে স্মার্টকার্ড সিস্টেম খুঁজে পান না। ফলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির স্মার্টকার্ড মুদ্রণ হয় না। মূলত এ সমস্যার সমাধান করতেই ওই কমিটি গঠন করা হয়েছে।
২০১৬ সালে স্মার্টকার্ডের বিতরণ কার্যক্রম শুরু হয়। এ পর্যন্ত দেশের আট কোটি নয় লাখ ২১ হাজার ১৩০ জন এ স্মার্টকার্ড পেয়েছেন। এখনো বিতরণের অপেক্ষায় রয়েছে এক কোটি ৫১ লাখ ৭৬ হাজার ১৪৭ জনের কার্ড।
সবচেয়ে বেশি স্মার্টকার্ড বিতরণ হয়েছে ঢাকায়, এক কোটি ৫০ লাখ ৩ হাজার ৮৬টি। সবচেয়ে কম বিতরণ হয়েছে সিলেটে ৩৭ লাখ ২১ হাজার ৮৬৬টি।
উদ্বোধনের পর আট বছর কেটে গেলেও এখনো ১৪৩টি উপজেলার লাখ লাখ ভোটারের উন্নতমানের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) বা স্মার্টকার্ড ছাপাতে পারেনি নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ছাপানো হলেও ৪৭টি উপজেলার ৭২ লাখের মতো কার্ড বিতরণ হয়নি।
ইসির কয়েকটি সূত্র জানায়, দেশে মোট উপজেলার (ইসির প্রশাসনিক এলাকা) সংখ্যা ৫১৯টি। এর মধ্যে বিতরণ শেষ হয়েছে ৩৫০টি উপজেলার স্মার্টকার্ড। বর্তমানে স্মার্টকার্ড বিতরণ চলমান আছে এমন উপজেলার সংখ্যা ১১টি।
স্মার্টকার্ড মুদ্রিত হয়েছে, কিন্তু বিতরণ শুরু হয়নি এমন উপজেলার সংখ্যা ১৫টি। পারসোনালাইজেশন সেন্টারে ডেলিভারির অপেক্ষা রয়েছে এমন উপজেলার সংখ্যা ২১টি। আর স্মার্ট কার্ড মুদ্রণ করা হয়নি এমন উপজেলার সংখ্যা ১৪৩টি।
ভোটার তালিকার ভিত্তিতে নাগরিকদের উন্নতমানের জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়ার লক্ষ্যে বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় ২০১১ সালে আইডিইএ (স্মার্টকার্ড) প্রকল্পটি হাতে নেয় কমিশন।
তারপর দীর্ঘ চার বছর নানা চড়াই-উতড়াই পেরিয়ে স্মার্টকার্ড তৈরির দিকে এগোয় সংস্থাটি। এক্ষেত্রে ফ্রান্সের প্রতিষ্ঠান অবার্থার টেকনোলজিসের সঙ্গে ওই সময়ের ৯ কোটি ভোটারের জন্য নয় কোটি ব্ল্যাংক স্মার্টকার্ড তৈরি করে দিতে ২০১৫ সালের ১৪ জানুয়ারি চুক্তি করে ইসি। যার মেয়াদ ছিল ১৮ মাস।
কিন্তু মেয়াদ বাড়ানোর পরও ২০১৭ সালের জুন পর্যন্ত চুক্তিতে উল্লেখিত কার্ড সরবরাহ করতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটি। ফলে সে বছরের শেষের দিকে অবার্থারের কাছ থেকে জরিমানা আদায় করা হয়।
ইসি কর্মকর্তারা জানান, অবার্থার এক দশমিক ৫১ ডলার দরে সাত কোটি ৭৩ লাখ কার্ড সরবরাহ করতে পেরেছিল। সে অনুযায়ী আগের এক কোটি ২৭ লাখ নাগরিকের কার্ড ঘাটতি ছিল। এই কয়েক বছরে ভোটার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২ কোটি ১৮ লাখ ৫০ হাজার ১৬০ জনে।
সব মিলিয়ে আরো প্রায় সাড়ে চার কোটির মতো ব্ল্যাংক কার্ড তৈরি এবং তাতে নাগরিকের তথ্য ইনপুট করে বিতরণে যেতে হবে। সেজন্য আইডিইএর দ্বিতীয় প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে।
আর এক হাজার ৮০৫ কোটি টাকার এ প্রকল্প থেকে তিন কোটি কার্ড দেওয়ার কথা থাকলেও ডলারের দাম বাড়ায় দুই কোটি ৩৬ লাখ ৩৩ হাজার ৭২০টি কার্ড দেবে বিএমটিএফ। অবশিষ্ট কার্ডগুলো প্রকল্পের মেয়াদ শেষে রাজস্ব খাত থেকে কেনার ব্যবস্থা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসি।
বাংলাদেশ সময়: ১৩১৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৭, ২০২৪
ইইউডি/আরএইচ