সূত্র জানিয়েছে, ২০১১ সালে ২৪ সেপ্টেম্বর ১০টি আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তার পদ সৃষ্টি করেছিল নির্বাচন কমিশন। কিন্তু পদ সৃষ্টির পর প্রায় ছয় বছরেও সেসব পদে পদোন্নতি দিতে পারেনি নির্বাচন আয়োজনকারী সংস্থাটি।
জানা গেছে, নির্বাচন কর্মকর্তা নিয়োগ বিধিমালা ২০০৮ অনুযায়ী, ২০১১ সালের ৪ অক্টোবর তৎকালীন উপ-সচিব জেসমিন টুলী ও বিশ্বাস লুৎফর রহমানকে যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি দেয় এটিএম শামসুল হুদার নেতৃত্বাধীন সে সময়ের কমিশন। সে সময় পাঁচ বছর উপ-সচিব পদে চাকরি করলে যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতির বিধান ছিল।
কিন্তু একই বছর ২৪ অক্টোবর ১০ আঞ্চলিক কর্মকর্তার পদ সৃষ্টি করা হয়। এক্ষেত্রে উপ-সচিব থেকে আরইও এবং আরইও থেকে যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতির বিধান করা হয়। কিন্তু এখনো আরইও পদে কোনো পদোন্নতি দিতে পারেনি কমিশন। ফলে প্রায় তিন বছরের বেশি সময় ধরে যুগ্ম সচিব-২ এবং দেড় বছর থেকে যুগ্ম সচিব-১ এর পদ শূণ্য রয়েছে।
এদিকে ২০১৬ সালের কর্মকর্তা নিয়োগ বিধিমালা সংশোধন করে বলা হয়েছে, যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতির জন্য আরইও পদে অন্তত দুই বছর চাকরি করতে হবে। কিন্তু ইসিতে নেই কোনো আরইও, সবই চলতি দায়িত্ব প্রাপ্ত। যে কারণে সংকট দেখা দিয়েছে পুরো পদোন্নতির প্রক্রিয়ায়। এ অবস্থায় আরইও পদে পদোন্নতি দেওয়া জরুরি বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। কেননা সামনে একাদশ সংসদ নির্বাচন।
বর্তমানে ১৬টি উপ-সচিবের পদ ও ১২টি জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার পদ শূন্য আছে। এখন ১০ উপ-সচিবকে আরইও পদে পদোন্নতি দিলে উপ-সচিব পদ খালি হবে ২৬টি। আর ২৬টি উপ-সচিব পূরণ করলে খালি হবে ৩৮টি জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার পদ। তাই ১০টি আরইও পদ খালি থাকায় আটকে আছে ২৬টি উপ-সচিব এবং ৩৮টি জেলা কর্মকর্তার পদে পদোন্নতি।
তবে বিধিমালা সংশোধন হওয়ায় সহসাই কাটছে না চলতি দায়িত্বে পদায়নও। কেননা এখন আরইও পদে পদোন্নতি দিলেও যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতির জন্য লেগে যাবে আরো দুই বছর। এক্ষেত্রে একাদশ সংসদ নির্বাচন যুগ্ম সচিব ছাড়াই সম্পন্ন করতে হবে ইসিকে। কারণ প্রশাসন থেকেও কর্মকর্তা প্রেষণের আনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন ইসি কর্মকর্তারা।
এ অবস্থায় তারা দাবি করছেন, দ্রুত যুগ্ম সচিব পদে চলতি দায়িত্বে পদায়ন এবং আরইও পদে পদোন্নতির।
ইসি কর্মকর্তারা এ বিষয়ে সাংগঠনিক কাঠামোর সর্বোচ্চ কমিটির সদস্য সচিবকে একটি প্রতিবেদন দাখিল করেছেন। প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সভাপতিত্বে ওই কমিটিতে আছেন চার নির্বাচন কমিশনার, ইসির অতিরিক্ত সচিব ও অর্থমন্ত্রণালয় এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি।
ইসির উপ-সচিব এবং প্রতিবেদন দাখিলকারী কমিটির আহ্বায়ক নুরুজ্জামান তালুকদার ইসি সচিবের কাছে প্রতিবেদন দাখিল করেছেন। গত ২৪ জুলাই সাংগঠনিক কমিটির মিটিং হওয়ার কথাও ছিল। কিন্তু ইসি সচিব পরিবর্তন হওয়ায় থমকে আছে সে প্রক্রিয়া।
ইসির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপ-সচিব পর্যায়ের কর্মকর্তারা বাংলানিউজকে বলেন, কমিশন এটা নিয়ে গড়িমসি করছে। তবে এ সংকটের সমাধান দ্রুত না করা হলে তারা আন্দোলনে যাবেন।
এরইমধ্যে তারা প্রেষণে যুগ্ম সচিব পদায়নের ঘটনায় এক ঘণ্টার কর্মবিরতিও পালন করেছেন। ইসির সঙ্গে কর্মকর্তাদের দরকষাকষিতে অবশেষে প্রেষণে যুগ্ম সচিব না আনার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এক্ষেত্রে যুগ্ম সচিব পদে ইসি কর্মকর্তাদের ভেতর থেকেই চলতি দায়িত্ব দেওয়া হবে। তবে পদোন্নতি দাবি করবেন না বলে কর্মকর্তাদের লিখিত দিতে হবে। কর্মকর্তারাও এটা মেনে নিয়েছেন।
ইসি কর্মকর্তারা বলছেন, কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন কমিশনের কারণেই সৃষ্টি হয়েছে পদোন্নতি সংকট। কারণ চাকরি নিয়োগ বিধিমালা অনুযায়ী পদোন্নতির জন্য সিলেবাস প্রণয়ন ও পরীক্ষাগ্রহণের মাধ্যমে পদায়ন করার আগ পর্যন্ত পদোন্নতি দিতে কোনো বাধা নেই। তবে বিগত কমিশন সিলেবাস প্রণয়নে বিলম্ব করায় এমন সংকটের সৃষ্টি হয়েছে।
সংকট নিরসনে তাই আরইও, উপ-সচিব ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার শূণ্য পদে পদোন্নতি পরীক্ষা ছাড়াই দ্রুত দেওয়ার দাবি তুলেছেন নির্বাচন কর্মকর্তারা।
এ বিষয়ে ইসির অতিরিক্ত সচিব মোখলেসুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, পদোন্নতির বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। সংশ্লিষ্ট কমিটি এ নিয়ে কাজ করছে।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৪৫ ঘণ্টা, আগস্ট ০৮, ২০১৭
ইইউডি/জেডএস