জানা গেছে, ২০১১ সালে তৎকালীন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এটিএম শামসুল হুদার নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় আইডিইএ প্রকল্পটি হাতে নিয়েছিল। সে সময় ১০ বছর রেয়াতে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে ১৭০ মিলিয়ন ডলারের ঋণ সহায়তার চুক্তি করেছিল নির্বাচন কমিশন।
রোববার (২৭ আগস্ট) এক কমিশন বৈঠকে স্ক্যানার কেনার জন্য সরকারি তহবিল থেকেই অর্থের যোগান দেওয়ার সিদ্ধান্ত দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ জানিয়েছেন, স্মার্টকার্ড বিতরণের সময় নাগরিকদের দশ আঙ্গুলের ছাপ ও চোখের আইরিশ নেওয়া হয়। এতে এ সংক্রান্ত দু’টো স্ক্যানারের প্রয়োজন পড়ে। কয়েকবার কেনার উদ্যোগ নিয়েও মামলা সংক্রান্ত জটিলতায় তা কেনা যায়নি। কিন্তু স্মার্টকার্ড বিতরণ কার্যক্রম পুরোদমে চালাতে স্ক্যানার কেনা প্রয়োজন। তাই নির্বাচন কমিশন প্রতি উপজেলার জন্য এক সেট করে স্ক্যানার কেনার সিদ্ধান্ত দিয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বৈঠক সূত্র জানিয়েছে, প্রতি উপজেলায় দুই সেট করে স্ক্যানার কেনার প্রস্তাব করা হয়েছিল। এজন্য ব্যয় ধরা হয়েছিল ৫ কোটি টাকা। কিন্তু নির্বাচন কমিশন এক সেট করে কেনার অনুমোদন দিয়েছে। এতে প্রায় আড়াই কোটি টাকা লাগবে। অথচ এই স্ক্যানার কেনার বিষয়টি মূল প্রকল্পেই ছিল। এক্ষেত্রে বিশ্বব্যাংকের দেওয়া টাকা থেকেই কেনা যেত। কিন্তু দুইবার টেন্ডার দিয়েও তা কিনতে না পারায় বিশ্বব্যাংক এখন আর সায় দিচ্ছে না। ফলে রাষ্ট্রীয় অর্থ ব্যয় করেই কিনতে হচ্ছে এই যন্ত্র।
এটিএম শামসুল হুদা সম্প্রতি একটি অনুষ্ঠানে গণমাধ্যমকে এ বিষয়ে বলেন, বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় আমরা খুব ভাল একটি কার্যক্রম হাতে নিয়েছিলাম। কিন্তু এই টাকাটা ফেরত গেলে খুবই কষ্টকর হবে। কেননা, টাকা ফেরত গেলে সরকারের তহবিল থেকে তা ব্যয় করতে হবে। যা সরকার অন্য কোনো জনকল্যাণে কাজে লাগাতে পারতো। কাজেই এটা রাষ্ট্রের ক্ষতি।
তবে ইসির ভারপ্রাপ্ত সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ এ বিষয়ে বলেন, বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে আমরা ফান্ডের বিষয়ে শিগগিরই বসবো। আশা করি, তারা প্রকল্পটিতে কন্টিনিউ করবে। বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন এখনো অব্যাহত আছে এবং পরবর্তী অর্থায়নের জন্য আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাবো।
এদিকে সূত্র জানিয়েছে, এবার আর টেন্ডার দিয়ে স্ক্যানার কেনা হবে না। এক্ষেত্রে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের টাকা দিয়ে দেওয়া হবে। তারাই চোখের আইরিশ ও দশ আঙ্গুলের ছাপ নেওয়ার মেশিন কিনে নেবেন। এতেও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করছেন খোদ ইসি কর্মকর্তারা। তাদের মতে, স্থানীয় পর্যায় থেকে কোন প্রক্রিয়ায়, কোথা থেকে, কে কত টাকা দিয়ে এই যন্ত্র কিনবেন; এ নিয়ে যথেষ্ট প্রশ্ন থেকে যায়।
কর্মকর্তারা বলছেন, সরকারি কেনাকাটা দেশে নতুন নয়। কিন্তু নির্বাচন কমিশন টেন্ডার দিলেই মামলা হয়। ঝুলে যায় ক্রয় প্রক্রিয়া। ফলে সরকারি অর্থের অপচয় ছাড়াও ভোগান্তিতে পড়েন সেবাগ্রহিতারা। এ বিষয়গুলোও খতিয়ে দেখা প্রয়োজন।
স্ক্যানার না থাকায় স্মার্টকার্ড বিতরণ কার্যক্রম পুরোদমে শুরু করতে পারছে না নির্বাচন কমিশন। বর্তমানে সারাদেশে সীমিত আকারে উন্নতমানের এ কার্ড বিতরণ চলছে।
বাংলাদেশ সময়: ২১৩০ ঘণ্টা, আগস্ট ২৭, ২০১৭
ইইউডি/জেডএম