ইসি সূত্র জানিয়েছে, প্রস্তুতকারী ফরাসি প্রতিষ্ঠান অবার্থার টেকনোলজিস চুক্তি ভঙ্গ করায় এবার নিজেরাই সব নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে।
২০১৫ সালের ১৪ জানুয়ারি অবার্থারের সঙ্গে ৭৯৬ কোটি ২৬ টাকার চুক্তি করে কমিশন।
এদিকে চুক্তির মেয়াদ এক বছর বাড়িয়ে জাতীয় পরিচয়পত্রের মূল সার্ভারের (ফায়ার ওয়াল) পাসওয়ার্ড ইত্যাদি দাবি করে প্রতিষ্ঠানটি। তবে নির্বাচন কমিশন অবার্থারের সে দাবি মানতে নারাজ। সময় মতো কার্ড সরবরাহ করতে না পারায় ক্ষতিপূরণসহ বিষয়টি মীমাংসার জন্য চিঠি পাঠায় ইসি। সেটাও প্রায় চার মাস আগের ঘটনা।
চুক্তি অনুযায়ী, ব্ল্যাংক কার্ড প্রস্তুত ও তাতে নাগরিকের তথ্য ইনপুট দিয়ে ইসির কাছে হস্তান্তর করার কথা। অবার্থার প্রথমে কিছু কার্ড ফ্রান্সে ও কিছু কার্ড চীনের সেনজেন প্রদেশে স্থাপিত তাদের কারখানা থেকে তৈরি করে দেয়। যেগুলোর ভেতরে দেশের নাগরিকদের তথ্য ইনপুট করার জন্য টাইগার আইটি নামের বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠানকে সাবকন্ট্রাক দেয়। এই প্রতিষ্ঠানের কাছে ইসির এনআইডি সার্ভারের পাসওয়ার্ড রয়েছে। যে পাসওয়ার্ড দিয়ে তারা সার্ভারের একটি অংশে প্রবেশ করে তথ্য নিয়ে তা স্মার্টকার্ডে কাস্টমাইজেশন করতে পারে। এ পর্যন্ত ১৩ শতাংশ কার্ড কাস্টমাইজেশন করেছে প্রতিষ্ঠানটি, যেখানে অবার্থার কার্ড প্রস্তুত করে দিয়েছে ৬ কোটির মতো। ওই ১৩ শতাংশ কার্ডগুলোই বিতরণ করছে ইসি।
অবার্থার কোনো সাড়া না দেওয়ায় টাইগার আইটি’র কাছ থেকে কার্ড কাস্টমাইজেশনের প্রক্রিয়া বর্তমানে নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে ইসি। একইসঙ্গে ফরাসি কোম্পানিটি চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, ক্ষতিপূরণ, পাসওয়ার্ডসহ সবকিছু বুঝিয়ে না দিলে মামলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
অন্যদিকে প্রস্তুত ১৩ শতাংশ কার্ড বিতরণে শেষের দিকে হওয়ায় এবার নির্বাচন কমিশন নিজেরাই এনআইডি কাস্টমাইজেশন করছে। এক্ষেত্রে ৯টি মেশিনে ইসির লোকবল দিয়েই কাজ শুরু করা হয়েছে। রোববার (২৭ আগস্ট) উৎপাদন হয়েছে মোট ৫০ হাজার কার্ড। তবে এটা এক শিফটটের কাজ। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যেই দুই শিফটে কাজ (দিন-রাত) কাজ করা হবে।
এ বিষয়ে এনআইডি শাখার মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, ২৫ বার তাগাদা দিলেও অবার্থার সাড়া দেয়নি। তারা যা ইচ্ছা তাই করতে পারে না। স্মার্টকার্ডের জন্য আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম ফর অ্যানহেন্সিং অ্যাকসেস টু সার্ভিস (আইডিইএ) প্রকল্পের মাধ্যমে আমরা বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে ঋণ নিয়েছি। এই টাকা জনগণের টাকা। কাজেই আমরা এখন হার্ডলাইনে আছি। চুক্তি অনুযায়ী, সবকিছু বুঝিয়ে না দিলে প্রয়োজনে আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা করা হবে।
বর্তমানে কাস্টমাইজেশনের কাজ শুরু হয়েছে। যেসব ব্ল্যাংক কার্ড রয়েছে তাতে আমরাই তথ্য ইনপুট দেওয়ার কাজ করছি। এছাড়া সব নাগরিকের হাতে কার্ড পৌঁছে দেওয়ার জন্য দেশীয় কোনো প্রতিষ্ঠানের কাজ থেকেই ব্ল্যাংক কার্ড তৈরি করে নেওয়ার পরিকল্পনাও নেওয়া হয়েছে।
২০১১ সালে তৎকালীন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এটিএম শামসুল হুদার নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন বিশ্ব ব্যাংকের সহায়তায় আইডিইএ প্রকল্পটি হাতে নিয়েছিল। সেসময় বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে ১৭০ মিলিয়ন ডলারের ঋণ সহায়তার চুক্তি করেছিল কমিশন। যেখানে নয় কোটি ভোটারের স্মার্টকার্ড সরবরাহ করার কথা ছিল ২০১৫ সালের মধ্যে। কিন্তু প্রকল্পের মেয়াদ কয়েক দফা বাড়িয়ে করা হয়েছে ২০১৭ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। আর সময়ের মধ্যে এ কার্যক্রম শেষ না করতে পারলে চুক্তি অনুযায়ী, একটি বিরাট অংকের টাকা ফেরত যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। তখন সরকারের তহবিল থেকেই স্মার্টকার্ড সরবরাহ করতে হবে।
বাংলাদেশ সময়: ০১১৫ ঘণ্টা, আগস্ট ২৮, ২০১৭
ইইউডি/আইএ