এক্ষেত্রে এমন অভিযোগের প্রমাণ মিললেই তাদের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংস্থাটি। ইতিমধ্যে সজাগ থেকে বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করতে মাঠ কর্মকর্তাদের নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে।
ইসি সূত্র জানিয়েছে, নিবন্ধিত, অনিবন্ধিত মিলিয়ে পাঁচ লাখের বেশি রোহিঙ্গা কক্সবাজার, টেকনাফে অবস্থান করছে। এছাড়া প্রতিমাসেই তারা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করছে। এরাই আবার বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে গিয়ে স্থানীয়দের সঙ্গে মিশে যাচ্ছেন। এমনকি টাকার বিনিময়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কাছ থেকে প্রত্যয়নপত্র নিচ্ছেন। যা দিয়ে পরবর্তীতে তারা ভোটার হচ্ছেন।
রোহিঙ্গাদের এমন কর্মকাণ্ডের পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাচন কমিশন বৃহত্তর চট্টগ্রামের ৩০টি এলাকাকে বিশেষ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করেছে। যেখানে ভোটার হওয়ার জন্যও প্রণয়ন করেছে বিশেষ ফরম। যে ফরমে পিতা-মাতা, ভাই-বোন, ফুফুসহ অন্য আত্মীয়দের তথ্যও দিতে হয়। যে কারণে শুধু প্রত্যয়নপত্রে তারা ভোটার হতে পারেন না। এই অবস্থায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং অসাধু ব্যক্তিরা অন্যের জাতীয় পরিচয়পত্র, জমির দলিল কিংবা ওয়ারিশনামা ইত্যাদিও সরবরাহ করেন টাকার বিনিময়ে। যেখানে সংশ্লিষ্ট রোহিঙ্গাকে আত্মীয় বা উত্তরাধিকার হিসেবেও দেখানো হয়। এভাবেই রোহিঙ্গারা তাদের সহযোগিতা নিয়ে সহজেই ভোটার হয়ে যায়।
ইতিমধ্যে ইসির কাছে গোয়েন্দা প্রতিবেদন এসেছে যে, রোহিঙ্গারা ভোটার হয়ে জাতীয় পরিচয়পত্র সংগ্রহ করেন। পরবর্তীতে সেই জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে পাসপোর্টও করে নেন। এরপর বিভিন্ন দেশে গিয়ে নানা অপকর্মের সঙ্গে জড়িত হন।
এই অবস্থায় নির্বাচন কমিশন রোহিঙ্গাদের ভোটার হওয়ার ঠেকাতে আইনের কঠোর প্রয়োগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ভোটার তালিকা আইনেও কেউ মিথ্যা তথ্য দিয়ে ভোটার হলে এবং কেউ তাকে সহায়তা দিলে তার বিরুদ্ধেও মামলা করার নির্দেশনা রয়েছে।
এক্ষেত্রে ভোটার আইন-২০০৯ এর ১৮ (খ) উপধারা অনুযায়ী, কোনো ভোটার তালিকায় কোনো অন্তর্ভূক্তি বা কোনো অন্তর্ভূক্তি কর্তন সম্পর্কে লিখিত মিথ্যা তথ্য দিলে এবং যা তিনি মিথ্যা বলে জানেন, মানেন বা বিশ্বাস করেন বা সত্য বলে বিশ্বাস করেন না; এমন হলে তিনি অনধিক ছয় মাস কারাদণ্ড বা অনধিক দুই হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দন্ডিত হবেন।
এদিকে শুধু সহায়তাকারী নয়, কেউ মিথ্যা তথ্য দিয়ে বা বাংলাদেশের নাগরিক না হয়েও জাতীয় পরিচয়পত্র পাওয়ার চেষ্টা করলে তার বিরুদ্ধে ক্রিমিনাল প্রসিডিউর ১৮৯৮ এর পাঁচ নম্বর আইন অনুযায়ী মামলা করা যাবে। এক্ষেত্রে ২০১৩ সালের জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইনে অনধিক এক বছরের কারাদণ্ড অথবা বিশ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দিণ্ডে দণ্ডিত করার বিধান রয়েছে।
এ বিষয়ে ইসির অতিরিক্ত সচিব মোখলেছুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, আমাদের কাছে তথ্য রয়েছে, রোহিঙ্গা বা বিদেশিদের ভোটার হওয়া এবং জাতীয় পরিচয়পত্র পেতে মিথ্যা প্রত্যয়ন দেন স্থানীয় জনপ্রনিধিরা। স্থানীয় অসাধু ব্যক্তিরাও তাদের সহায়তা করে থাকেন। তাই আমরা হার্ড লাইনে রয়েছি। মাঠ কর্মকর্তাদের বিষয়টি সম্পর্কে সজাগ দৃষ্টি রাখতে কঠোরভাবে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এখন থেকে কোনো জনপ্রতিনিধি বা অসাধু কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে সহায়তার বিষয়টি প্রমাণ পেলেই মামলা করা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৪১ ঘণ্টা, আগস্ট ৩০, ২০১৭
ইইউডি/এসএইচ