বুধবার (২০ সেপ্টেম্বর) প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নুরুল হুদার সভাপতিত্বে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত সংলাপে অংশ নিয়ে দলটি এ সুপারিশ করে।
সংলাপ শেষে ড. কামাল হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, সংবিধানে এক রায়ের ভিত্তিতে সংশোধনী এনে নির্বাচনকালীন সরকারের কথা বলা হয়েছে।
তিনি বলেন, দুই এমপি অর্থাৎ মানি পাওয়ার এবং মাসল পাওয়ারের পার্লামেন্টারি ডেমোক্রেসি ধ্বংস হচ্ছে। এটাকে নির্বাচনে নিয়ন্ত্রণ করার কথা বলেছি। একইসঙ্গে জনগণ কিভাবে এই দুই পাওয়ার থেকে ভোটাধিকার রক্ষা করবে তাও বলেছি। এছাড়া আইনের শাসন, সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে। সরকারি দল হলে মাফ আর বিরোধী দল হলে শাস্তি তা হবে না।
সংবিধান প্রণেতা ড. কামাল আরও বলেন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংজ্ঞা আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নিতে বলেছি। এতে প্রয়োজনে নির্বাচন কমিশন তাদের ব্যবহার করতে হবে।
সংলাপে গণফোরাম ২২ দফা সুপারিশ করে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে- স্বচ্ছ ভোটার তালিকা প্রণয়ন, প্রবাসীদের ভোটদানের ব্যবস্থা, সর্বদলীয় পর্যবেক্ষক দল গঠন, নির্বাচনী অপরাধের শাস্তি দিতে ইসিকে বিচারিক ক্ষমতা প্রদান, নির্বাচনী বিরোধের মামলা ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক ছয় মাসের মধ্যে নিষ্পত্তি এবং সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ কর্তৃক তিন মাসের মধ্যে নিষ্পত্তিকরণ উল্লেখযোগ্য। সংলাপে কামাল হোসেনের নেতৃত্বে ১০ সদস্যের প্রতিনিধি দল অংশ নেয়।
এর আগে গণফ্রন্টের চেয়ারম্যান জাকির হোসেনের নেতৃত্বের ১২ সদস্যের প্রতিনিধি দল সংলাপে অংশ নেয়।
দলটির একগুচ্ছ লিখিত সুপারিশে বলা হয়েছে, বর্তমান সরকারকে সংবিধান সংশোধন করে হলেও (তত্ত্বাবধায়ক নয়, অরাজনৈতিক সরকার নয়) একটি নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করতে হবে। স্বাধীনতার পরে যে সকল নিবন্ধিত দলের সংসদে প্রতিনিধিত্ব ছিল (বিতর্কিত নির্বাচন যেমন ৮৮, ৯৬ এবং ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি ব্যতীত) তাদের সমন্বয়ে একটি সরকার গঠন করা যেতে পারে। প্রয়োজনে সমঝোতার মাধ্যমে সে সরকারের প্রধান বর্তমান প্রধানমন্ত্রী হতে পারেন। তবে নির্বাচনকালীন সরকারের কেউ জাতীয় নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন না।
নির্বাচনে ভয়ভীতিমুক্ত পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশনের কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বিভিন্ন বাহিনীর পাশাপাশি প্রয়োজনবোধে সেনা সদস্য মোতায়েন করার সুপারিশ করেছে গণফ্রন্ট।
অন্যান্য সুপারিশগুলোর মধ্যে রয়েছে- দলের সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য নাম সর্বস্ব, প্যাড সর্বস্ব ও অফিসবিহীন রাতারাতি গড়ে ওঠা অনিবন্ধিত দলগুলো যাতে নিবন্ধিত দলের সাথে জোট করতে না পারে এ জন্য একটি নীতিমালা প্রণয়ন করা, নির্বাচনের অন্তত ছয়মাস পূর্বে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের দলীয় প্রধানের নিরাপত্তার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা, জাতীয় সংসদের সীমানা পুনর্বিন্যাস করার জন্য আইনি কাঠামো সংস্কার করা, পাশাপাশি বাস্তবতার নিরিখে আসন সংখ্যারও বৃদ্ধি করা। সংসদের আসন ন্যূনতম সংখ্যা ৩৫০/৪৫০ টি করা, প্রবাসীদের নাম ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা এবং তাদের সহজে ভোটাধিকার প্রয়োগের ব্যবস্থা করা প্রভৃতি।
গত ৩১ জুলাই সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে এবং ১৬ ও ১৭ আগস্ট গণমাধ্যমের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সংলাপে বসেছিল ইসি। এরপর গত ২৪ আগস্ট থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ শুরু করে নির্বাচন কমিশন।
সংলাপে আসা সুপারিশগুলোর মধ্যে সেনা মোতায়েন, না ভোটের প্রবর্তন, প্রবাসীদের ভোটারধিকার প্রয়োগ, জাতীয় পরিষদ গঠন, নির্বাচনকালীন অস্থায়ী সরকার গঠন, নির্দলীয় নির্বাচনকালীন সরকার, নির্বাচনের সময় সংসদ ভেঙে দেওয়া, রাজনৈতিক মামলা প্রত্যাহার ও নির্বাচনকালীন সময়ে ইসির অধীনে জনপ্রশাসন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা, দলের নির্বাহী কমিটিতে বাধ্যতামূলকভাবে ৩৩ শতাংশ নারী সদস্য রাখার বিধান তুলে নেওয়া উল্লেযোগ্য।
বাংলাদেশ সময়: ১৯১০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২০, ২০১৭
ইইউডি/এমজেএফ