ঢাকা, শুক্রবার, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ০১ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ রবিউস সানি ১৪৪৬

নির্বাচন ও ইসি

নবম সংসদের প্রতিনিধি নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের সুপারিশ

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৩৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ১০, ২০১৭
নবম সংসদের প্রতিনিধি নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের সুপারিশ নির্বাচক কমিশনে সাংবাদিকদের মুখোমুখি বিকল্পধারা। ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকাঃ নবম জাতীয় সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী দলগুলোকে নিয়ে নির্বাচনকালীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের প্রস্তাব করেছে বিকল্পধারা বাংলাদেশ। একই সঙ্গে দলটি সেনাবাহিনী মোতায়েন করে ভোটগ্রহণের কথাও বলেছে।

মঙ্গলবার (১০ অক্টোবর) নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সঙ্গে সংলাপের পর দলটির প্রেসিডেন্ট সাবেক রাষ্ট্রপতি একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, আমরা ইসির কাছে ১৩ দফা সুপারিশ করেছি। এক্ষেত্রে সেনা মোতায়েন করে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন করার কথা ছাড়াও প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে অর্ডিন্যান্স জারি করার কথা বলেছি।

আর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনে ইসির কোনো ভূমিকা নেই। তাই সরকারের কাছে আমাদের সুপারিশ হচ্ছে-নবম সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী দলগুলোকে নিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করতে হবে।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নূরুল হুদার সভাপত্বিতে অনুষ্ঠিত সংলাপে একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বে বিকল্পধারার ১৪ সদস্যের প্রতিনিধি অংশ নেয়।

দলটির ১৩ দফা সুপারিশ হচ্ছে-
১ (ক) প্রচলিত বিধানে জেলা প্রশাসকগণ পদাধিকার বলে স্ব স্ব জেলায় রিটার্নিং অফিসারের দায়িত্ব পালন করে থাকেন। কিন্তু অধিকাংশ জেলা প্রশাসকই রাজনৈতিক বিবেচনায় নিযুক্ত হয়ে থাকেন এবং তারা রাজনৈতিক প্রভাব এর কারণে নিরপেক্ষ থাকতে পারেন না। বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারগুলোর আমলে জেলা প্রশাসকগণ নির্বাচন কমিশনের অধীনে চলে আসেন, তদ্রুপ জেলা প্রশাসকগণ নির্বাচনের পূর্বে নির্বাচন কমিশনের অধীনে দায়িত্ব পালন করবেন।
(খ) প্রিজাইডিং অফিসার ও পোলিং অফিসারগণ যে জেলায় ভোটার হবেন তাকে সেই  জেলার দায়িত্ব দেওয়া যাবে না।

২) ভোটার তালিকা নির্ভুল এবং হালনাগাদ করতে হবে। প্রয়োজনে সামরিক বাহিনীর সাহায্য নিতে হবে।

৩) প্রতিবারই জাতীয় নির্বাচনের পূর্বে কমিশন কর্তৃক কিছু কিছু সংসদীয় আসনের সীমানা পুন:নির্ধারণ করা হয়ে থাকে। এতে বিভিন্ন বিতর্ক এবং জনমনে বিরুপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। এ মুহূর্ত থেকে আর কোনো সীমানা পূন: নির্ধারণের প্রয়োজন নেই। জনপ্রতিনিধিদের একটি নির্ধারিত এলাকায় বিশ্বস্ততার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের জন্য এটা প্রয়োজন।

৪) নমিনেশন পেপার যাচাই প্রক্রিয়া স্বচ্ছ হতে হবে এবং প্রত্যেক প্রার্থীকেই সমান মাপকাঠিতে বিচার করতে হবে।

৫ (ক) সব প্রার্থীর সমান সুযোগ থাকতে হবে।
(খ) কোনো সরকারি এবং প্রশাসনিক দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি কোনো প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ গ্রহণ করতে পারবেন না।
(গ) জনসভা, মিছিল ইত্যাদি সন্ত্রাসমুক্ত- এটা নিশ্চিত করার জন্য দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীর সহযোগিতা নিশ্চিত করতে হবে।

৬ ক) আমরা মনে করি ভোট কেন্দ্র নির্ধারণ সম্পূর্ণ নির্বাচন কমিশনের এখতিয়ার। এ প্রক্রিয়ায় কোনো দলীয় বা প্রশাসনিক বা প্রার্থীর প্রভাবমুক্ত থাকার জন্য নির্বাচন কমিশনের অবস্থান সুদৃঢ় হতে হবে।
(খ) নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পর ভোটকেন্দ্র পরিবর্তন করার ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট প্রার্থীদের সাথে আলোচনাক্রমে তা করতে হবে।
(গ) সুষ্ঠু ভোটদানের স্বার্থে প্রতিটি বুথে ভোটার-এর সংখ্যা ৩০০ হতে ৫০০ এর বেশি হতে পারবে না।

৭) নির্বাচনের ১ মাস পূর্বে সেনাবাহিনীকে শান্তি-শৃ্খংলা রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত রাখতে হবে। সেনা বাহিনীর সদস্যরা নির্বাচনের দিন ভোটার ও প্রার্থীদের নিরাপত্তা বিধান করবে। ভোট শেষে ১৫ দিন পর্যন্ত শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার কাজে নিয়োজিত রাখতে হবে।

৮ (ক) প্রতি ভোট কেন্দ্রের ভেতরে ৩-৫ জন পুলিশ ও সেনাবাহিনীর ৩-৫ জন সদস্যকে নিয়োজিত রাখতে হবে।
(খ) ভোটার কার্ড ব্যতীত অন্য কোনো পরিচিতিতে ভোটার ভোট প্রদান করতে পারবে না।
(গ) ভোট কেন্দ্রের ভেতর প্রার্থীর কোনো এজেন্ট বা প্রতিনিধি থাকার পদ্ধতি সম্পূর্ণ বিলুপ্ত করতে হবে।
(ঘ) ভোট কেন্দ্রের প্রাঙ্গণে কোনো প্রার্থী অফিস স্থাপন করতে পারবে না এবং প্রার্থীর ব্যাজ পরিহিত কোনো প্রতিনিধি থাকবে না।
(ঙ) প্রার্থীর প্রতিনিধিগণকে কেন্দ্র থেকে কমপক্ষে ২০০ গজ দূরে অবস্থান করার ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।

৯) পূর্ণ গণতান্ত্রিক অধিকারের স্বার্থে ব্যালট পেপারে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের নামের পরেও ‘না ভোট’- এর বিধান থাকতে হবে। সর্বোচ্চ ভোট প্রাপ্তির চেয়ে না ভোটের সংখ্যা বেশি হলে সেই ক্ষেত্রে সেই আসনে ৯০ দিনের মধ্যে পুনঃভোটের ব্যবস্থা করতে হবে।

১০ (ক) ভোট প্রদান শেষ হওয়ার পর পরই সব প্রার্থীর প্রতিনিধির উপস্থিতিতে ভোট গণনা শুরু করতে হবে।
(খ) ফলাফল গণনা শিটে সব প্রার্থীর প্রতিনিধির স্বাক্ষর থাকতে হবে।
(গ) ভোটের ফলাফল ভোটকেন্দ্রেই ঘোষণা দিতে হবে।
(ঘ) ফলাফল ঘোষণাপত্রে উপস্থিত পুলিশ, সেনাপ্রতিনিধি ও নির্বাচন পর্যবেক্ষকের স্বাক্ষর থাকতে হবে।

১১)  নির্বাচনকালীন সময়ে কোনো প্রার্থীর বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ উত্থাপিত হলে স্ব স্ব সংসদীয় আসনেই কমিশন কর্তৃক “বিশেষ নির্বাচনী ট্রাইব্যুনাল” এর মাধ্যমে নির্বাচনের অনুর্দ্ধ ৬ মাসের মধ্যে সে অভিযোগ নিষ্পত্তি করতে হবে।

১২) নির্বাচনে যে কোনো পর্যায়ে যে কোনো নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা/কর্মচারী নিরপেক্ষ নির্বাচনে বাধা প্রদান করলে অথবা নিরপেক্ষ নির্বাচন বিরুদ্ধ/বিতর্কিত কাজ করলে তার/তাদের বিরুদ্ধে একটি বিশেষ আদালতে/ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ আনা যাবে। যেহেতু এরূপ কর্মকাণ্ডকে একটি রাষ্ট্রবিরোধী অপরাধ হিসেবে গণ্য করা যায়, সেহেতু এটিকে একটি দণ্ডনীয় অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হোক। এর জন্য অবিলম্বে একটি অর্ডিন্যান্স প্রণয়ন করা হোক।

১৩। নির্বাচন পরিচালনা করবেন-নির্বাচন কমিশন সদস্যবৃন্দ, জেলা প্রশাসক ও জেলার প্রধান বিচারক।

আর প্রত্যেক নির্বাচনী কেন্দ্রে যারা দায়িত্ব পালন করবেন- ক) ইউএনও খ) ওসি গ) প্রিসাইডিং অফিসারবৃন্দ ঘ) দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষক ও কর্মকর্তাবৃন্দ, ঙ) সেনাবাহিনীর সদস্যবৃন্দ। তাঁরা জনসমক্ষে প্রকাশ্যে পবিত্র কোরআন/গীতা/বাইবেল ও ত্রিপিটক ছুঁয়ে নিরপেক্ষতা ও আন্তরিকতার শপথ নেবেন।

বাংলাদেশ সময়ঃ ১৪২০ ঘণ্টা, অক্টোবর ১০, ২০১৭
ইইউডি/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

নির্বাচন ও ইসি এর সর্বশেষ