দলটির সভাপতি কাদের সিদ্দিকী সোমবার (১৬ অক্টোবর) ২৫ সদস্যের প্রতিনিধি দল নিয়ে নির্বাচন কমিশনে গিয়ে সিইসি’র ওই বক্তব্যের প্রতিবাদ জানান। এ সময় বিতর্কিত ওই বক্তব্য প্রত্যাহারের আহবান জানিয়ে সিইসি’র পদত্যাগ দাবি করেন কাদের সিদ্দিকী।
ইসি’র সংলাপ ভ্যেনু থেকে বেরিয়ে এসে কাদের সিদ্দিকী নিজেই সাংবাদিকদের এসব বিষয় অবহিত করেন। এ সময় তার স্ত্রী ও দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নাসরীন সিদ্দিকীও সঙ্গে ছিলেন।
কাদের সিদ্দিকী বলেন, সিইসি এককভাবে এ কথা (জিয়াউর রহমানকে বহুদলীয় গণতন্ত্রের পুন:প্রতিষ্ঠাতা) বলেছেন। কাজেই তিনি তার নিরপেক্ষতা হারিয়েছেন।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নূরুল হুদার সভাপতিত্বে সংলাপ শুরু হয় বেলা ১১ টা ৫ মিনিটে। এতে অন্য নির্বাচন নির্বাচন কমিশনার, ইসির ভারপ্রাপ্ত সচিবসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অংশ নেন।
কিন্তু সংলাপ শুরু হলে রোববার বিএনপির সঙ্গে সংলাপে সিইসি’র দেওয়া বক্তব্যের তীব্র সমালোচনা করেন কাদের সিদ্দিকী।
বিতর্কিত ওই বক্তব্যে সিইসি বলেছিলেন, ‘শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ৩৯ বছর পূর্বে ১৯৭৭ সালে অত্যন্ত দৃঢতার সাথে বিএনপি গঠন করেন। সে দলে ডান, বাম, মধ্যপন্থি সব মতাদর্শের অনেক রাজনৈতিক ব্যক্তিকে একত্র করেন। তার মধ্য দিয়েই দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র পুন:প্রতিষ্ঠা লাভ করে। ’
কাদের সিদ্দিকী বলেন, যদি জিয়া গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করে থাকেন, তবে কি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান গণতন্ত্র হত্যা করেছেন? কাজেই সিইসি এ কথা বলতে পারেন না। আমরা তার কথার সঙ্গে একমত না। তাই সংলাপ বয়কট করেছি এবং আমি মনে করি তার পদত্যাগ করা উচিত। বক্তব্য প্রত্যাহার না করা পর্যন্ত সিইসি'র পদত্যাগ দাবি করছি।
বয়কটের আগে ইসির কাছে নির্বাচন নিয়ে ১৮ দফা সুপারিশ তুলে ধরে কাদের সিদ্দিকীর দল। এগুলোর মধ্যে রয়েছে- নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার, আদমশুমারির পরিবর্তে ভোটার সংখ্যার ভিত্তিতে আসনের সীমানা নির্ধারণ, আয়কর রিটার্ন দাখিলের বিধান বাতিল, ভোটের ১৫ দিন আগে সেনা মোতায়েন, ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে ভোট চালু, প্রধানমন্ত্রী বা রাষ্ট্রপতি পদে দুইবারের বেশি দায়িত্বে না থাকার বিধান, প্রার্থী হতে ১ শতাংশ ভোটারের সমর্থনের বিধান বাতিল প্রভৃতি।
গত ৩১ জুলাই সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে এবং ১৬ ও ১৭ আগস্ট গণমাধ্যমের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সংলাপে বসেছিল ইসি। এরপর গত ২৪ আগস্ট থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ শুরু করে নির্বাচন কমিশন।
সংলাপে আসা এ পর্যন্ত সুপারিশগুলোর মধ্যে সারাদেশে সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েন, সেনা মোতায়েন, বর্তমান সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী দলগুলোকে নিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন, প্রতি ভোটকেন্দ্রে সিসি টিভি/ক্যামেরা স্থাপন, নবম সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী দলগুলোকে নিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন, দশম সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী দলগুলোকে নিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন, ‘না ভোট’ প্রবর্তন, প্রবাসে ভোটারধিকার প্রয়োগ, জাতীয় পরিষদ গঠন, নির্বাচনকালীন অস্থায়ী সরকার গঠন, নির্দলীয় নির্বাচনকালীন সরকার, নির্বাচনের সময় সংসদ ভেঙ্গে দেওয়া, রাজনৈতিক মামলা প্রত্যাহার, নির্বাচনকালীন সময়ে ইসির অধীনে জনপ্রশাসন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা, দলের নির্বাহী কমিটিতে বাধ্যতামূলকভাবে ৩৩ শতাংশ নারী সদস্য রাখার বিধান তুলে নেওয়া অন্যতম।
আগামী ১৯ অক্টোবর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের (নৌকা) সঙ্গে বসবে নির্বাচন আয়োজনকারী এই কর্তৃপক্ষ।
এবারের সংলাপ শেষ হচ্ছে আগামী ২৪ অক্টোবর। তার আগে ২২ অক্টোবর নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের সঙ্গে, ২৩ অক্টোবর নারী নেত্রীদের সংলাপে বসছে নির্বাচন কমিশন।
বাংলাদেশ সময়: ১৪১০ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৬, ২০১৭
জেডএম/